Ajker Patrika

যশোর হাসপাতালে ৩ বার দেওয়া হলো ভুল গ্রুপের রক্ত, রোগী সংকটাপন্ন

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৪, ২২: ২২
Thumbnail image

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সালেহা বেগম (৭৭) নামে এক বৃদ্ধার শরীরে তিনবার দেওয়া হয়েছে অন্য গ্রুপের রক্ত। ফলে ওই রোগী শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। ঘটনাটি গত ২০ মে হলেও আজ মঙ্গলবার সকালে নতুন করে রক্ত দিতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। চিকিৎসক বলছেন, রোগী আশঙ্কামুক্ত নয়।

বর্তমানে ওই রোগী জেনারেল হাসপাতালের মহিলা পেয়িং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের খড়িঞ্চা হেলাঞ্চি গ্রামের মৃত শামসুর রহমানের স্ত্রী।

ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনেরা জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে গত ২০ মে যশোর মেডিকেল কলেজের মেডিসিন চিকিৎসক গৌতম কুমার আচার্যের পরামর্শে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন সালেহা বেগমের স্বজনেরা। তারপর সালেহার রক্ত শূন্যতার কারণে রক্ত দেওয়া পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রক্ত দেওয়ার জন্য হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে গিয়ে সালেহার রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেন স্বজনেরা। সেখানে সালেহার রক্তের গ্রুপ আসে বি পজিটিভ।

ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের রক্তের গ্রুপ জেনে সালেহার স্বজনেরা বি পজিটিভ ডোনার খুঁজে সালেহার শরীরে রক্ত দেওয়া হয়। ২০ মে,২২ মে ও ২৪ মে তিন দিন তিন ব্যাগ বি পজিটিভ ডোনারের মাধ্যমে সালেহাকে রক্ত দেওয়া হয়। তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর দুদিন পর সালেহার পরিবার সালেহাকে গ্রামে নিয়ে যায়।

গ্রামে যেয়ে সালেহার শরীরে গা জ্বালাপোড়া, বমিসহ খিঁচুনি দিতে থাকে। এসব উপসর্গের কারণে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁকে বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়। সর্বশেষ গতকাল সোমবার বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে আবারও যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের চিকিৎসক সালেহাকে আবারও রক্ত দেওয়া পরামর্শ দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শে আজ সকালে বি পজিটিভ ডোনার নিয়ে সালেহাকে রক্ত দিতে গেলে সেই ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারাই বলে সালেহার রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ না। তার রক্তের গ্রুপ এ পজিটিভ।

এরপর রোগীর বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে। রোগীর স্বজনেরা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হট্টগোল শুরু করে। পরবর্তীতে হাসপাতালের কর্মকর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

হাসপাতালের মহিলা পেয়িং ওয়ার্ডে সালেহা বেগম চিকিৎসাধীন আছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা ভুক্তভোগীর ওই রোগীর মেয়ে শিরিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০ তারিখে এই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করে তারা বলে মায়ের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ। তাদের কথামতো বি পজিটিভ ডোনার এনে মাকে তিন দিন তিন ব্যাগ রক্ত দিয়েছি। রক্ত দেওয়ার পরে মাকে বাড়িতে নিয়ে যেয়ে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। খিঁচুনি-বমিসহ শরীর দুর্বল হয়ে যান। স্থানীয় ডাক্তারদের চিকিৎসা নিয়েও তিনি আরও অসুস্থ হয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে আজ আবার হাসপাতালে নিয়ে এসে রক্ত দিতে গেলে ব্লাড ব্যাংক বলে মায়ের রক্তের গ্রুপ বি পজিটিভ না। তার রক্তের গ্রুপের এ পজিটিভ। বিষয়টি জানার পরে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের ভুলের কারণে আমার মা এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি এখন খুব অসুস্থ। তাঁর অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। কিছু খেতে পারছেন না। সুস্থ করার জন্য আমার মাকে হাসপাতালে এনেছি; এখন তাঁর অবস্থা খারাপ। এই ঘটনার বিচার চাই।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধা। ছবি: আজকের পত্রিকা ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের ইনচার্জ চঞ্চল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সালেহার রক্তের গ্রুপ পরিবর্তনের বিষয়টি কীভাবে হলো বুঝতে পারছি না। আমরা ধারণা করছি, একই নামে একাধিক রক্তের নমুনা সিরিঞ্জ ছিল। নমুনা পরীক্ষাকালে এমন ভুল হতে পারে। আবার ওয়ার্ডের নার্সরা রক্ত সংগ্রহকালে তারাও ভুল করতে পারে।’ এর আগেও একই নামে একাধিক রোগী থাকার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন আর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোগীর আশঙ্কামুক্ত নয়। ঘটনাটি দুঃখজনক। রোগীর স্বজনেরা মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি করা হবে। কারও কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত