Ajker Patrika

বহুত চুবানি খাইছি অভ্যাস হয়ে গেছে, না পেটানো পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে যাব না

বাগেরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ১৫: ৪৫
বহুত চুবানি খাইছি অভ্যাস হয়ে গেছে, না পেটানো পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে যাব না

উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’। বেলা বাড়ার সঙ্গে গুমোট হতে শুরু করেছে বাগেরহাটের আবহাওয়া। আজ রোববার সকাল থেকে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হওয়া বইছে জেলাজুড়ে। ১০ নম্বর মহা বিপদসংকেত জারি রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মহা বিপদসংকেত পেয়েও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে না উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। 

শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদের রায়েন্দা বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাইকিং করে উপকূলবাসীকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। তবে দুপুর গড়ালেও নিজ বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে না স্থানীয় বাসিন্দারা। 

বলেশ্বর নদের রায়েন্দা বেড়িবাঁধ এলাকার বাসিন্দা সেতারা বেগম বলেন, ‘এ ধরনের ঝড়ের বিপদসংকেত মাঝেমধ্যে আসে। তাই এখন আর তেমন ভয় লাগে না। সবকিছু গুছিয়ে রেখেছি, যদি ঝড় আসে তখন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাব।’ 

জাহানারা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ‘১০ নম্বর মহা বিপদসংকেতের জন্য এখানে মাইকিং করে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলেছে। শুনেছি ঘূর্ণিঝড়টি রাতে আসবে, তাই এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাইনি। বিকেলের দিক যদি ঝড় বেশি দেখি, তাহলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব।’ 

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, সংকেত পাওয়া মাত্র এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি সম্ভবত সন্ধ্যার দিকে আঘাত হানবে; এ জন্য এলাকাবাসী একটু দেরি করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। ঝড় শুরু হলে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় আমরা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় অবস্থান করব।’ 

রয়েন্দা ফেরিঘাট এলাকায় অনিল নামের যুবককে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন না কেন—জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘বহুত চুবানি খাইছি এমন এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। পুলিশ যত সময় না পিটাবে তত সময় যাব না।’ 

আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হচ্ছেতবে জেলা প্রশাসন বলছেন, বেলা ২টা পর্যন্ত ৩৫ জন প্রতিবন্ধীসহ সাড়ে আট হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য মাইকিংয়ের পাশাপাশি নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। 

শরণখোলার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, ‘যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের উপজেলাটি সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় প্রতিটা ঘূর্ণিঝড়েই এখানকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘূর্ণিঝড় রিমালে যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, সে লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। উপজেলায় মোট ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র ঝেড়ে–মুছে পরিষ্কার করা হয়েছে।’ 

চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবাই যাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আসে, সে জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। শুকনো খাবার, ওষুধ ও খাবার পানি মজুত রাখা হয়েছে। আশা করি, বিকেলের মধ্যে সকলকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পারব।’ 

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় জেলায় মোট ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যা নাগাদ বাগেরহাট উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সবাই যেন আশ্রয়কেন্দ্রে যায় সে জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত