Ajker Patrika

যশোরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম, রয়েছে ইভিএম জটিলতাও 

যশোর প্রতিনিধি
Thumbnail image

যশোরে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ ধাপে সদর উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে চলছে ভোটগ্রহণ। আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে প্রথমবারের মতো ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোট প্রদান করছেন। তবে ভোটারদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, কেন্দ্রগুলোতে ভোটার লাইন চোখে পড়েনি। এমনকি কিছুক্ষণ পরপর দু’একজন করে ভোটারকে ভোট দিতে আসতে দেখা গেছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেরই একই অবস্থা। এদিকে ভোটাররা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার না জানা ও আঙুলের ছাপ মেশিনে না মেলার কারণে ভোট দিতে দেরি হচ্ছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভোটাররা।

নির্বাচন কমিশন ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি পদের বিপরীতে লড়ছেন ১৬ প্রার্থী। এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়ছেন তাঁরা। নিজ দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন ৮ জন। এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ কাজী নাবিল আহমেদর সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন দোয়াত কলম প্রতীকের আনোয়ার হোসেন বিপুল।

জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সমর্থন নিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁরই চাচাতো ভাই তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু। জেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। শালিক প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ এবং জোড়া ফুল প্রতীকে সমর্থন পেতে ছুটছেন সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম।

কাপ পিরিচ প্রতীক শফিকুল ইসলাম জুয়েল ও ঘোড়া প্রতীক একমাত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আনোয়ার। আর ভোটের মাঠে নামমাত্র আছেন হেলিকপ্টার প্রতীকের আরিফুল ইসলাম হীরা। এ ছাড়া পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান ৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩ জন।

সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও শহরের কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, সকালে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা উপস্থিতি বেড়েছে। সেটিও আশঙ্কাজনক নয়। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। ইভিএমে ভোট দিতে এসে অনেকেই ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। 

শহরের মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা স্কুল এন্ড কলেজ ভোট দিতে আসেন রুমা রায়। কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে আঙুলের ছাপ না মেলায় বিপাকে পড়েন। তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষণ থেকে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারিনি। এখন ন্যাশনাল আইডি কার্ড আনতে যাচ্ছি।’

বেজপাড়া থেকে আসা গোবিন্দ নাথ নামে আরেক ভোটার বলেন, ‘মেশিনে তো খুব সমস্যা হচ্ছে, কাজ করছে না। কী সমস্যা হচ্ছে। জানতে চাইলে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘এই কেন্দ্রের সবাই নারী ভোটার। তারা বাসাবাড়িতে কাজ করেন। মাছ কাটাসহ বিভিন্ন কাজ করার কারণে তাদের অনেকের আঙুলের ছাপ মিলছে না। তাই বারবার মেশিনে চাপ দিতে হচ্ছে। এ কারণে ভোটগ্রহণ বিলম্ব হচ্ছে।’

বেলা ১২টার দিকে যশোর জিলা স্কুলে গিয়ে কোনো ভোটারের লাইন দেখা যায়নি। দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশ মাঠে বেঞ্চে বসে সময় কাটাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে দু’একজন আসছেন তাঁরা ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন।

এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মখলেচুর রহমান বলেন, ‘জিলা স্কুলের পুরুষ কেন্দ্রে দুই হাজার ৭৯০ ভোটার। বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩৭০ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোটারের উপস্থিতি কম। অনেকের হাতের আঙুলের ছাপ না মেলাতে দেরি হচ্ছে। তবে সবাই ভোট দিয়েই যাচ্ছেন।’

সদরের শীলা রায় চৌধুরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এস এম আশিক আজমেদ বলেন, ’ এই কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ৩৯৭। ভোট গ্রহণের প্রথম দুই ঘণ্টাতে ২১৩ ভোট পড়ে। কিছুক্ষণ লোডশেডিং হলে একটি কক্ষে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আধা ঘণ্টা পর অন্য মেশিন দিয়ে আবারও ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণে ইভিএমের সমস্যা হলেও সেটা তেমনভাবে বোঝা যাচ্ছে না।’

সদরের ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের ২১৯টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। মোট ভোটার ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৮৯। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩০, মহিলা ৩ লাখ ৩ হাজার ৫২ ও হিজড়া ৭ জন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৩ হাজার ৩৫০ আনসার সদস্য, ২ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য, ৪ প্লাটুন বিজিবি ও র‍্যাবের চারটি টিম দায়িত্ব পালন করছে। সেই সঙ্গে নিয়োজিত রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

আঙুলের ছাপ না মেলার বিষয়ে তিনি বলেন, বয়স্কদের আঙুলের রেখা মুছে যাওয়ার কারণে এই সমস্যার তৈরি হয়েছে। তবে একাধিকবার চেষ্টার পর অনেকের ভোট হয়েছে। তারপরও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বয়স্ক ভোটারদের ভোট নিশ্চিতের চেষ্টা করার ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত