Ajker Patrika

৫ সাংবাদিককে ঝিনাইদহের ডিসি অফিসে আটকে রেখে মুচলেকা নিয়ে ছাড়ার অভিযোগ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২২, ১৫: ২৬
৫ সাংবাদিককে ঝিনাইদহের ডিসি অফিসে আটকে রেখে মুচলেকা নিয়ে ছাড়ার অভিযোগ

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে হাতাহাতির ভিডিও ধারণ করায় পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এরপর সংবাদ প্রকাশ না করার শর্তে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। এ সময় তাঁদের মোবাইল ফোনে থাকা হাতাহাতির ভিডিওসহ প্রয়োজনীয় সব ভিডিও মুছে (ডিলিট) দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা গতকাল বুধবার (২ নভেম্বর) বিভাগীয় কমিশনারের কাছে বিচার চেয়ে ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার চিঠি পেয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি। 

এর আগে সোমবার (৩১ অক্টোবর) ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তরের তৃতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে। 

ভুক্তভোগী সাংবাদিকেরা জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে তাঁর এলাকার জনসাধারণ একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের তদন্ত চলছিল গত সোমবার (৩১ অক্টোবর) আরডিসি আনিচুল ইসলামের দপ্তরে। অভিযোগকারীরা এবং চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা সেখানে ভিড় করেন। নিচে এ সময় চলছিল নবগঙ্গা রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন। সংবাদকর্মীরা সেখানে তাঁদের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ তৃতীয় তলায় তদন্তস্থলে চিৎকার শুনে ছুটে যান সংবাদকর্মী আলী হাসান, বাহারুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, সম্রাট হোসেন ও আশরাফুল ইসলাম। তাঁরা সেখানে দুই পক্ষের ধাক্কাধাক্কি দেখে মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন। 

তাঁদের ভিডিও ধারণ করতে দেখে ক্ষেপে যান সেখানে উপস্থিত থাকা সিনিয়র সহকারী কমিশনার পার্থ প্রতিম শীল। তিনি তাঁদের হাত থেকে মোবাইল ফোনগুলো ছিনিয়ে নেন। এরপর সেখানে আসেন জেলা প্রশাসকের দপ্তরে কর্মরত প্রশাসনের কর্মকর্তা সালমা সেলিম, রাজীবুল ইসলাম খান ও মো. শরিফুল হক। তাঁরা একে একে মোবাইল ফোনে থাকা সব ভিডিও মুছে (ডিলিট) ফেলেন। 

এরপর সাংবাদিকদের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গিয়ে নানাভাবে প্রশ্ন করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলেন। একপর্যায়ে ওই দিনের ঘটনায় কোনো সংবাদ লিখবেন না—এই মর্মে মুচলেকা লিখে নিয়ে মুক্তি দেন সাংবাদিকদের। 

ভুক্তভোগী সংবাদকর্মী আলী হাসান বলেন, ‘এ ঘটনার পর কেটেছে মানসিক কষ্টে। কাউকে কিছু বলতে পারছি না। প্রশাসনের কর্মকর্তারা লিখে নিয়েছেন এ বিষয়ে কিছু করতে পারব না। তার পরও সবকিছু ভুলে থাকতে পারছি না। সংবাদকর্মীদের ওপর এই নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো ঘটনা নয়।’ 

ভুক্তভোগী আরেক সংবাদকর্মী বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘পার্থ প্রতিম শীল আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা ভোলার মতো না। ভাবটা এমন ছিল, যেন কোনো চোর ধরে আটকে ফেলেছেন।’ 

এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার পার্থ প্রতিম শীলের সঙ্গে কথা বললে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা সেলিম বলেন, ‘সেখানে কোনো মারামারি হয়নি, হাতাহাতি হয়েছে। সেখানে এসে ভিডিও করা ঠিক হয়নি।’ এ সময় মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে দিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছাড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। 

এ নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত