Ajker Patrika

সেপ্টেম্বর মাসে চালু হবে রামগড় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম 

আবু বকর ছিদ্দিক, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বেলাল হোসাইন, রামগড় (খাগড়াছড়ি) 
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২২, ১১: ৩৭
সেপ্টেম্বর মাসে চালু হবে রামগড় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম 

পার্বত্য চট্টগ্রামের দুটি স্থলবন্দরের মধ্যে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে চালু করা হবে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। অন্যদিকে কাছাকাছি সময়ে প্রস্তাবিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অপর স্থলবন্দর রাঙামাটির টেগামুখ কাগজ-কলমেই রয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ভারত সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড় ও টেগামুখ বন্দর স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রামগড় স্থলবন্দরের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। রামগড় থেকে বারইয়ারহাট ৩৮ কিলোমিটারে ১৬টি ব্রিজ নির্মাণ শেষে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন ও চেকপোস্টের জন্য অস্থায়ী কাঠামোয় নির্মাণকাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগেই রামগড় স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে। এরই মধ্যে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। 

পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর ভারত ও বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বাংলাদেশের দুটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলা ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় রামগড় বন্দর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের বিষয়টিও ছিল। বন্দরটি চালু হলে উত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও রপ্তানির একটি নতুন দ্বার পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ সহজে ভারত থেকে পশুসম্পদ, ফল, কাঠ, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, সার ইত্যাদি আমদানি করতে পারবে।

রামগড় পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালুর নিমিত্তে অস্থায়ী শেড নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু হতে পারে। এরই অংশ হিসেবে আগামী সোমবার নৌপরিবহন সচিব মো. মোস্তফা কামাল সার্বিক অগ্রগতি সরেজমিনে দেখতে আসবেন।’ এর আগে ২০২১ সালের শুরুতে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খাগড়াছড়ির রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত প্রথম মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করেন।

রামগড় স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘সীমান্তের শূন্যরেখার ১৫০ গজের ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আপত্তির মুখে বন্দরের মূল স্থাপনা নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে ১৫০ গজের বাইরে যে জায়গা আছে, সেখানে অস্থায়ী স্থাপনায় বন্দরের ইমিগ্রেশনের (যাত্রী পারাপার) জন্য শেড নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যেকোনো সময় উদ্বোধন করা হবে।’ 

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক মানের একটি পেসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করা হবে। এই টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরে বিজিবি চেকপোস্ট, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিস থাকবে। এ ছাড়া ওয়ান স্টপ সার্ভিস সিস্টেমে একই ভবনে সব ধরনের চেকিং সম্পন্ন করে বহির্গমন ও প্রবেশ করবেন যাত্রীরা।’ 

কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট ও কমিশনারেট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মাহমুদুল হাসান জানান, রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম পর্যায়ে যাত্রী পারাপারের জন্য ইমিগ্রেশন খুব শিগগির চালু হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলে এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করা হবে। 

রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারি বলেন, ‘রামগড় স্থলবন্দরটি চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্যিক, পর্যটন ও যোগাযোগ সম্পর্ক সুদৃঢ়সহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। 
 
স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, এই বন্দর চালুর লক্ষ্যে খাগড়াছড়ির রামগড়ে মহামুনি এলাকায় ফেনী নদীর ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থ মৈত্রী সেতু-১ নামে একটি আন্তর্জাতিক সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে খরচ হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা। 
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্ত করার কাজের ঠিকাদার নিয়োগ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারত দিচ্ছে ৫৮১ দশমিক ২০ কোটি টাকা। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজ তহবিল থেকে দিচ্ছে। এ ছাড়া বর্ডার ক্রস প্রকল্পের আওতায় ৯টি সেতু ও ২৩টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে আটটি সেতু ও আটটি কালভার্ট। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৩৮ কিলোমিটার সড়কটি ৫ দশমিক ৫ মিটার থেকে ৭ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণসহ আনুষঙ্গিক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। 

অন্যদিকে, প্রস্তাবিত পার্বত্য চট্টগ্রামের অপর স্থলবন্দর রাঙামাটির বরকল উপজেলার টেগামুখ কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। ২০১০ সালে খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দর এবং ২০১৩ সালে রাঙামাটির বরকল উপজেলায় তেগামুখ স্থলবন্দর নির্মাণের ঘোষণা করে সরকার। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাঙামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর অপরপাশে ভারতের মিজুরাম রাজ্যের দেমাগ্রী কাউয়াপুচিয়া এলাকা অবস্থিত। রামগড় বন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু হলে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যাতায়াত সহজ হয়ে যাবে। আগরতলা বিমানবন্দর ব্যবহার করে সহজে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কাজে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে যাওয়া যাবে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমে পৌঁছানো যাবে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্যান্য রাজ্যের মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচলের তথা সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। 

এ বিষয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমি কয়েক মাস আগে টেগামুখ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছি এবং মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাই। বর্তমানে টেগামুখ এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি। টেগামুখ এলাকায় কানেকটিভিটি নির্মাণ হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাৎপদ এলাকার অনেক উন্নয়ন হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছোট ফেনী নদী থেকে বালু উত্তোলন: ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ২ কর্মকর্তার এক বছর কারাদণ্ড

নোয়াখালী প্রতিনিধি
অভিযানের পর দুজনকে দণ্ড দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানের পর দুজনকে দণ্ড দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ছোট ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সেই বালু নদীটির ওপর সেতু নির্মাণকাজে ব্যবহারের অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীসহ দুই কর্মকর্তাকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত প্রায় ১.৫ কিলোমিটার পাইপ ধ্বংস এবং একটি ইঞ্জিন জব্দ করা হয়। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার নূর নবী (৩৮) ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রিয়াজুল (৩২)।

গতকাল বুধবার রাতে চরহাজারী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেল্লারঘাট-ধনীপাড়া কানেক্টিং ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, ছোট ফেনী নদীর ওপর এলজিইডি নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’ তেল্লার ঘাট-ধনীপাড়া সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করার ফাঁকে নির্মাণাধীন ব্রিজের পাশ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত। এটি নদী ও সেতু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুজনকে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ সময় ১.৫ কিলোমিটার পাইপ ধ্বংস করা হয় এবং একটি ইঞ্জিন জব্দ করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে থানা থেকে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মব সৃষ্টি করে নারীর টাকা-চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি 
এআই দিয়ে তৈরি প্রতীকী ছবি
এআই দিয়ে তৈরি প্রতীকী ছবি

নাটোরের বড়াইগ্রামে ফুল কুমারী গোমেজ (৪৬) নামের এক নারীর বাড়িতে মব সৃষ্টি করে টাকা ও সোনার চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। বুধবার দিবাগত রাতে ওই নারী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে বড়াইগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার দিঘইর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ফুল কুমারী গোমেজ দিঘইর গ্রামের মৃত করনেলিউস গোমেজের স্ত্রী।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার চরগোবিন্দপুর গ্রামের গোলজার হোসেনের ছেলে নিসান হাসান (২২), কুশমাইল গ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে নয়ন হোসেন (২৩) সরাবাড়িয়া গ্রামের ইউসুব আলীর ছেলে কামরুল ইসলাম (২০) ও ময়লাল আলীর ছেলে হৃদয় হাসান (২১)। তাঁদের মধ্যে নিসান হাসান জোনাইল ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি এবং অন্যরা কর্মী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে ওই নারীর স্বামী মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে ঢাকায় লেখাপড়া করেন। বাড়িতে ওই নারী একাই বসবাস করেন। মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাড়িতে এসে দরজা খুলতে বলেন। দরজা খুলতে না চাইলে তাঁরা ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘরে আগুন দিয়ে মারার হুমকি দেন। পরে ঘরের দরজা খুলে দিলে তাঁরা ঘরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালান। এ সময় বিছানার নিচ থেকে ৫ হাজার টাকা ও ওই নারীর গলা থেকে সোনার চেইন নিয়ে চলে যান।

ফুল কুমারী গোমেজ বলেন, ‘আমি বারবার অনুরোধ করার পরও তারা আমার কথা শোনে না। তারা আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে গেল। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

অভিযুক্ত নিসান হাসান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে ওই মহিলা মদ তৈরি করেন। ধারণা করছি, আমরা বাধা দেওয়ার কারণে এই ধরনের অভিযোগ করেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরগোবিন্দপুর গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, নিসান হাসান হত্যা মামলার আসামি। তবে তিনি এখন জামিনে আছেন। তাঁর বাবা গোলজার হোসেন ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে জেলহাজতে রয়েছেন।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাছের অঙ্গের কেজি কোটি টাকা

  • পিটুইটারি গ্লান্ড মাছের প্রজননক্ষমতা বাড়ায়।
  • ৩৫টি দেশে মাছের এ প্রাকৃতিক হরমোনের চাহিদা রয়েছে।
মো. জাহিদ হাসান, যশোর 
পিটুইটারি গ্লান্ড মেডিসিনযুক্ত ছোট বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
পিটুইটারি গ্লান্ড মেডিসিনযুক্ত ছোট বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

যশোর শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড মাছবাজারে এক দশকের বেশি সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কাটাকুটি করে আসছেন বিল্লাল হোসেন সানি। দীর্ঘদিন মাছ কাটার কাজ করলেও মাথার ভেতরে থাকা ছোট্ট মুক্তাসদৃশ দানা কী সেটা কখনো ভাবেননি। বছর চারেক আগে স্থানীয় একটি সংস্থার মাধ্যমে সাদা এই দানার গুরুত্ব বুঝতে পেরে এখন প্রতিনিয়ত করছেন সংরক্ষণ।

সানির মতো যশোর শহরের মাছের বাজারগুলোতে মাছের মাথার ভেতরের এই সাদা দানাটি মাছের উচ্ছিষ্ট বস্তু হিসেবেই ফেলে দিতেন। এখন মাছ কেটেকুটে দেওয়ার পরই মাছের মাথা থেকে এই দানা সংগ্রহ করে রাখছেন বঁটিওয়ালা। মূলত মাছের মাথার ভেতরে থাকা ছোট্ট এই দানার নাম ‘পিটুইটারি গ্লান্ড’, যা মাছের প্রজননক্ষমতা বাড়িয়ে বছরে তিন থেকে চারবার ডিম ছাড়তে সহায়তা করে।

বিল্লাল হোসেন সানি জানান, সব মাছের মাথায় একটি করে পিটুইটারি গ্লান্ড থাকে। তবে সব ধরনের মাছ থেকে তিনি সেটা সংগ্রহ করেন না। কার্পজাতীয় মাছ থেকে সংগ্রহ করেন।

সানি বলেন, ‘মাথা থেকে পিটুইটারি গ্লান্ডটি মেডিসিনযুক্ত ছোট বোতলে সংরক্ষণ করি। প্রতি সপ্তাহে কোম্পানির এজেন্টরা এসে টাকা দিয়ে সেগুলো নিয়ে যান। প্রতি পিছ চার থেকে পাঁচ টাকা দেয়।’ তিনি জানান, মাছ কাটার পরে এটা থেকে তাঁদের বাড়তি আয় হয়। দিনে ৩০ থেকে ৫০ পিছ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাড়তি আয়ের জোগান হওয়ায় বাজারে প্রায় সব বঁটিওয়ালাই পিটুইটারি গ্লান্ড সংরক্ষণ করছেন বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি শহরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছের আঁশ ছাড়িয়ে মাছ পিছ করে কেটে দেওয়ার জন্য বঁটি নিয়ে বাজারে বসেছেন কয়েক ব্যক্তি। ক্রেতারা খুচরা মাছ কিনে তাঁদের কাছে দিলে তাঁরা আঁশ ছাড়িয়ে পিছ করে কেটে দিচ্ছেন। প্রত্যেকের বঁটির পাশে রাসায়নিক ভর্তি ছোট ছোট দু-একটি কাচের বোতল রাখা আছে। মাছ কাটার সময় কার্পজাতীয় মাছ যেমন রুই, কাতলা, সিলভার, মৃগেলসহ বিভিন্ন মাছের মাথার ভেতর থেকে ছোট একটি দানা (পিজি) সংগ্রহ করে বোতলে সংরক্ষণ করছেন তাঁরা।

মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হ্যাচারির পুকুরে প্রজননের সময় মা ও পুরুষ মাছের দেহে নির্দিষ্ট মাত্রায় পিজি সিরিঞ্জের মাধ্যমে পুশ করা হয়। এতে মাছের দেহে উত্তেজনা আসে। এ সময় মাছের প্রজনন হয়। প্রাকৃতিক এ হরমোন ব্যবহারে মাছের জীবনচক্রে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। মাছের প্রজননের প্রধান নিয়ামক এই হরমোন রপ্তানি করে দেশে বিদেশি মুদ্রা আনছেন উদ্যোক্তারা। মৎস্য অঞ্চল যশোর-সাতক্ষীরায় এই হরমোন নিয়ে কাজ করে আলোড়ন তৈরি করেছেন যশোরের মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী। প্রথম দিকে কাঁচা পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ করলেও আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে শুরু করেন সংরক্ষণের। তাই শহরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন ল্যাবরেটরি। নাম দিয়েছেন ইউনাইটেড এগ্রো ফিশারিজ। এখানে বাছাই শেষে অ্যালকোহল থেকে আলাদা করে গ্লান্ড শুকানো হয় ড্রাইং মেশিনে। ময়েশ্চার টেস্টসহ নানা পরীক্ষা শেষে বোতলজাত করে পাঠানো হয় দেশি-বিদেশি হ্যাচারিতে।

জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে একইভাবে প্রাকৃতিক এই হরমোন সংগ্রহ করেন তাঁরা।

রপ্তানির পাশাপাশি ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হ্যাচারিতে এ হরমোনের পিজি পাঠায় ইউনাইটেড এগ্রো। বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইরাকসহ ৩৫টি দেশে মাছের এ প্রাকৃতিক হরমোনের চাহিদা রয়েছে বলে জানান লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা মূল্যের পিজি দেশে-বিদেশে সরবরাহ করি। প্রতি গ্রাম পিজি বর্তমানে ৮০ মার্কিন ডলারে রপ্তানি হয়।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুল মামুন বলেন, কৃত্রিম প্রজননের জন্য দেশ-বিদেশের হ্যাচারিতে হরমোন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার ওপরে। এ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আনা সম্ভব। দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদন বাড়াতে বঁটিওয়ালাসহ উদ্যাক্তাদের প্রশিক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৈয়দপুর থানায় জব্দ মোটরসাইকেল বাইরে বিক্রির চেষ্টা, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

নীলফামারী প্রতিনিধি
জব্দ করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে মাদক কারবারি দম্পতিসহ জব্দ করা একটি মোটরসাইকেল ছয় মাস পর থানার বাইরে নিয়ে বিক্রির চেষ্টা করা হয়। পরে মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিকের স্বজনদের সহায়তায় সেটি উদ্ধার করে ফের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকার পশ্চিমপাড়া থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জনমনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে শহরের কয়ানিজপাড়ার ফারুক হোসেন ও মুক্তা বানু দম্পতির বাড়িতে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মাদকদ্রব্যসহ দুটি মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় মাদক ব্যবসায়ী দম্পতিকে। ঘটনার ১৪৬ দিন পর বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে জব্দ করা মোটরসাইকেলটি থানার বাইরে বিক্রির চেষ্টা করে একটি চক্র। এ সময় মোটরসাইকেলের মালিকের স্বজনেরা যৌথ বাহিনীর অভিযানে জব্দ করা মোটরসাইকেল হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এ বিষয়ে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার মুক্তার ভাই আতিক হাসান বলেন, ‘আমার বোন ও তার স্বামীকে যৌথ বাহিনী মাদকসহ আটক করে। তখন তাদের মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়। বুধবার রাতে একজন ফোনে জানায়, মোটরসাইকেলটি থানার প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মতির মোড়ে বিক্রি করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি গিয়ে কাগজপত্র মিলিয়ে দেখি সেটি আমার বোনজামাইয়ের। এরপর পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মোটরসাইকেলটি থানায় নিয়ে যায়।’

স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যৌথ বাহিনী ওই দম্পতিকে মাদকসহ আটক করে এবং মোটরসাইকেলটি জব্দ করে নিয়ে যায়। কিন্তু থানার মালখানায় মোটরসাইকেলটি থাকার কথা। পরে সেটি থানার বাইরে পাওয়া গেল, এটা প্রশাসনের দুর্বলতা ছাড়া কিছু নয়।’

এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত