Ajker Patrika

পঞ্চাশের নিচে শিক্ষার্থী, একীভূত হচ্ছে যশোরের ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ১১
পঞ্চাশের নিচে শিক্ষার্থী, একীভূত হচ্ছে যশোরের ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

যশোরের অভয়নগর উপজেলার হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮। গ্রামটি আয়তনে ছোট এবং জনসংখ্যায় কম। এ ছাড়া দুই কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। শিক্ষার্থী কম থাকলেও বিদ্যালয়টিতে পাঠদান করাচ্ছেন ছয়জন শিক্ষক। এত দিন ধরে গোঁজামিলের তথ্য দিয়ে বিদ্যালয়টি চালানো হচ্ছে। শিক্ষকেরাও নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।

হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো যশোরে এমন বিদ্যালয় রয়েছে ১৬টি। কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না থাকায় কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা। ইতিমধ্যে তালিকা প্রস্তুত করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। এরপর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এসব বিদ্যালয়কে পাশের কোনো সরকারি বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা হবে। এসব বিদ্যালয় ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বানানোর পরামর্শ শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের। তবে এসব শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা পাশের বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার বিপক্ষে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) সমন্বয় সভায় যেসব বিদ্যালয়ে পাঁচটি শ্রেণিতে ৫০ জনের কম শিক্ষার্থী রয়েছে, সেসব বিদ্যালয় একীভূত বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের নাম, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, জমির পরিমাণ, যে বিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্র করা হবে তার নাম, বর্তমান বিদ্যালয় থেকে একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত স্কুলের দূরত্ব, প্রস্তাবিত স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করে অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের।

সে অনুযায়ী গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম ১৬টি বিদ্যালয়ের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সেই চিঠিতে একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত বিদ্যালয়ের নাম, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, জমির পরিমাণ, যে বিদ্যালয়ের সঙ্গে একত্র করা হবে তার নাম, বর্তমান বিদ্যালয় থেকে একত্র করার জন্য প্রস্তাবিত স্কুলের দূরত্ব, প্রস্তাবিত স্কুলের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা উল্লেখ করা হয়।

বিদ্যালয়গুলো হলো ১৮ জন শিক্ষার্থীর যশোরের অভয়নগর উপজেলার হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২৮ জন শিক্ষার্থীর কেশবপুর উপজেলার সানতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৪ জন শিক্ষার্থীর পল্লী মঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১৮ জন শিক্ষার্থীর ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪৪ জন শিক্ষার্থীর তেঘরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মনিরামপুর উপজেলার পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২৮ জন শিক্ষার্থীর ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩০ জন শিক্ষার্থীর দক্ষিণ পাঁচকাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩১ জন শিক্ষার্থীর কুমারসীমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৪ জন শিক্ষার্থীর গোপমহল মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২৫ জন শিক্ষার্থীর কামিনীডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৯ জন শিক্ষার্থীর হাটগাছা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৩ জন শিক্ষার্থীর উত্তর দহাকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩৩ জন শিক্ষার্থীর বয়ারখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪৭ জন শিক্ষার্থীর জোঁকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪২ জন শিক্ষার্থীর সদর উপজেলার দক্ষিণ ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এসব বিদ্যালয়ের কোনোটির গমনোপযোগী শিশুদের সংখ্যা কম, কোনোটির জনহার জনসংখ্যা কম। আবার কোনোটির বিদ্যালয়ের দুই কিলোমিটারের মধ্যে একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহা. আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার উপজেলায় হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৮ জন শিক্ষার্থী ও ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। মূলত ওই এলাকাটিতে জনসংখ্যা কম, জন্মহারও কম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিবেচনা করে দেখেছি, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো অসম্ভব। তা ছাড়া পাশেই ফুলেরগাতি হরিষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা তালিকা প্রস্তুত করেছি। কিন্তু ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বড় একটি অংশ অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত হতে চান না।’

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের পর এই জেলায় অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমেছে। এসব বিদ্যালয়কে অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি।’ তাতে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং যাতায়াতসহ অন্য কোনো সমস্যায় হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাতায়াতে সমস্যা বা ব্যয় কারও বাড়বে না। বরং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তিসহ নানা সুবিধার আওতায় আনবে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিই (ডিরেক্টর অব প্রাইমারি এডুকেশন) পরিচালক মনীষ চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, একীভূত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় পর্যায়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। পাঁচটি ক্লাসে ৫০ জন শিক্ষার্থী না থাকার পরও এসব বিদ্যালয় চালানো রাষ্ট্রীয় অপচয়। তবে কবে নাগাদ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে, তা জানাতে পারেননি তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে এক দিনে ১৫৩ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

এলাকার খবর
Loading...