Ajker Patrika

গাজীপুরের বনে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের মার্কেট

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ১১: ৪৫
গাজীপুরের বনে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের মার্কেট

গাজীপুরের শ্রীপুরে বনের জমি দখল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন কর্মী এবং কৃষক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। পরে তাঁরা সেগুলো নিজেদের নামে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, মার্কেট নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ে নামমাত্র বাধা দিয়েছিল বন বিভাগ। তবে তাতে নির্মাণকাজ বন্ধ করা যায়নি। তাদের নীরবতার কারণেই বনের জমিতে মার্কেট হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জানে না দাবি করে বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে বনভূমি উদ্ধারে ওই মার্কেট উচ্ছেদ করা হবে। 

এদিকে মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এ বিষয়ে জানতে সভাপতি শাহাবুদ্দিন মাস্টারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। সাধারণ সম্পাদক মজনু মিয়াকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা ধরেননি।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের বাউনী বাজারের পাশে সরকারের ২ নম্বর খতিয়ানভুক্ত শ্রীপুর রেঞ্জের সদর বিটের আওতাধীন সিএস দাগ ২১, আরএস ৪৯০ নম্বর দাগের ৩ একর ৭০ শতাংশ জমিতে নির্মাণ করা করা হয়েছে মার্কেট। দূর থেকে মনে হবে লম্বা বিদ্যালয় ভবন।

 মার্কেটে রয়েছে বেশ কিছু রুম। রুমগুলো অভিযুক্তরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। জানা গেছে, গোসিঙ্গা ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি মো. তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে বনের জায়গা দখল করে এ মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। তাঁর কাজে সহযোগিতা করছেন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী আবুল হাসেন, ওমর ফারুক, বেলায়েত, কফিল উদ্দিন, আবুল কাশেম ও শামসুদ্দিন। আরও রয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ইউসুফ ও মনিরুল ইসলাম। 

পাশের বাউনী বাজার কমিটির সভাপতি কৃষক লীগ নেতা তোফাজ্জল বলেন, ‘আমার নেতৃত্বে বনের জায়গা দখল করে মার্কেট হয়নি। আমি তাঁদের সহযোগিতা করেছি। আশপাশের লোকজন সবাই মিলে এই মার্কেট নির্মাণ করেছেন। এটি সম্পূর্ণ বনভূমি। এই মার্কেটে আমার কোনো রুমও নেই। বাজারের সভাপতি হিসেবে আমাকে তো একটু সহযোগিতা করতে হয়। সে জন্য একটু সহযোগিতা করেছি। তবে বন বিভাগের লোকজন একবার সামান্য ভেঙে ফেলে। এরপর পুনরায় মার্কেটের নির্মাণকাজ শেষ হয়।’ 

মার্কেট নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শামসুদ্দিন বলেন, ‘জমি তো বন বিভাগের, এটা সবাই জানে। আপনাদের কোনো কথা থাকলে বন বিভাগের সঙ্গে বলেন।’

পাশের গ্রামের বাসিন্দা ফজর আলী বলেন, ‘আমার বাড়ির আশপাশে বনভূমি রয়েছে। আমরা একটা টয়লেট করতে গেলে কত হয়রানির শিকার হতে হয়। কত মামলার আসামি হতে হয়। অথচ বিশাল মার্কেট নির্মাণ হয়ে গেল। কেউ কিছু বলল না, কেউ বাধা দিল না। আসলেই যত আইন গরিবের জন্য।’ 

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান শাহিন বলেন, ‘বনের জায়গা দখল করে মার্কেট হয়েছে কি না, জানা নেই।’ 

ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘বনের জায়গায় মার্কেট হয়েছে, সেটা জানি। কিন্তু যুবলীগের কোনো কর্মী জড়িত কি না, সেটা জানি না।’ 

শ্রীপুর সদর বিট কর্মকর্তা আলাল খান বলেন, ‘মার্কেট নির্মাণের শুরু থেকেই আমরা বাধা দিয়েছি। চক্রটি খুবই শক্তিশালী। আমাদের ওপর হামলা করে তারা। পরপর কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ওরা আমাদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয়।’ 

শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, ‘যে জমিতে মার্কেট নির্মাণ হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ বনভূমি। জবরদখল করে একটি চক্র মার্কেট নির্মাণ করেছে। এখানে আমি নিজে দুবার অভিযান পরিচালনা করে ভেঙে দিয়েছি। তবুও রক্ষা করতে পারিনি বনভূমি। দখলদারদের নামে মামলা হয়েছে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনারা নিশ্চিত থাকেন, বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্কেট উচ্ছেদ করে বনভূমি উদ্ধার করা হবে। বনভূমি জবরদখল করে মার্কেট নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে শিশুকে গলা কেটে হত্যা, সহপাঠী আটক

নোয়াখালী প্রতিনিধি
বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসা। ছবি: সংগৃহীত
বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসা। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নে মাথায় টুপি পরাকে কেন্দ্র করে নাজিম উদ্দিন (১৩) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই সহপাঠীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবু সায়েদকে (১৫) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসায় ঘুমের মধ্যে ছুরি দিয়ে গলা কেটে নাজিমকে হত্যা করা হয়।

নিহত নাজিম উদ্দিন ওই উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের ওবায়দুল্যার ছেলে।

পুলিশ জানায়, নাজিম ও সায়েদ ওই মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র। এর মধ্যে নাজিম ২২ পারা কোরআন মুখস্থ শেষ করে এবং সায়েদ ২৩ পারা শেষ করে। গত ১০-১৫ দিন আগে টুপি পরাকে কেন্দ্র করে নাজিম ও সায়েদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে হুজুর দুজনের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করে দেন। কিন্তু সায়েদের মধ্যে রাগ থেকে যায়। তাই সে বাজার থেকে কিছুদিন আগে ৩০০ টাকা দিয়ে একটি নতুন ছুরি কিনে নিয়ে আসে এবং নাজিমকে হত্যার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। রোববার রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে ঘুমের মধ্যে তার গলা কেটে তাকে হত্যা করে সায়েদ। গোঙানি শুনতে পেয়ে হুজুর ও অন্য ছাত্ররা জেগে যায়। পরে ছুরিসহ সায়েদকে আটক করা হয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবু সায়েদকে আটক করে। সোমবার ক্রাইমসিনের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেট্রোরেল বন্ধের প্রভাব, সকাল থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সকালে যানজটে অফিসগামী মানুষ বিপাকে পড়েন। ছবি: ফেসবুক
সকালে যানজটে অফিসগামী মানুষ বিপাকে পড়েন। ছবি: ফেসবুক

রাজধানী ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রো লাইনের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে দুর্ঘটনায় এক পথচারী নিহত ঘটনায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে আজ সোমবার সকাল থেকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) লাইন মেরামত শুরু করে। এর ফলে খেজুরবাগান থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়ক আংশিকভাবে বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

গতকাল রোববার পথচারী নিহতের ঘটনার পর মেরামতের কাজ শুরু হলে সকাল থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, রেইনবো, বিজয় সরণি, উড়োজাহাজ মোড় এবং আগারগাঁও এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অফিস সময়ে এসব রাস্তায় যানজটের কারণে সাধারণ যাত্রী ও অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।

তেজগাঁও ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলের আংশিক বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ যাত্রী বিভিন্ন ধরনের বিকল্প যানবাহনে রওনা হচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যানজটের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া রেইনবো ক্রসিং এলাকায় একটি বড় লরি নষ্ট হয়ে পড়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামা যান চলাচল ব্যাহত হয়।

অন্যদিকে, যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লেক রোড এলাকায় হেঁটে, পিকআপ ও ট্রাকযোগে বিপুলসংখ্যক লোক সমাগম হওয়ায় ওই সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

জনগণের ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম পাশে বিকল্প ডাইভারশন চালু করে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে বিভাগটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহতের পর বন্ধ থাকা মেট্রোরেল সেবা আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে পুনরায় চালু হয়েছে। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করছে।

আজ ঢাকা ম্যাস টারজেট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ডিএমটিসিএল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মেট্রোরেলের সম্মানিত যাত্রী সাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, সকাল ১১টা থেকে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে পুনরায় চালু করা হয়েছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এর আগে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিয়ার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয় এবং দু’জন আহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকেল ৩টার দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হয়।

তবে বিজয় সরণি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত অংশে মেরামত কাজ চলমান থাকায় গতকাল দুপুর থেকে ওই অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। আজ সকালেই মেরামত কাজ শেষ হওয়ার পর পুরো রুটে সেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেছারাবাদের ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু এখন ‘মৃত্যুফাঁদ’

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের সাগরকান্দা বাজার হয়ে নাথপাড়া থেকে জিনুহার এবং দুর্গাকাঠি রাস্তার খালের ওপর থাকা লোহার ভিমের স্লিপারের তিনটি সেতু (পুল) বর্তমানে ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর ওপর সুপারিগাছ ও বাঁশের হাতল দিয়ে কোনোভাবে পারাপার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা
এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে সাগরকান্দা স্কুলের পরের নাথপাড়ার প্রথম সেতুটি। তবে এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত এই তিনটি সেতু সাগরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিন গ্রামের মানুষের প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। কয়েক বছর আগে বন্যায় গাছ পড়ে নাথপাড়া প্রথম সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদার সেতুটি মেরামতের কথা বলে এর লোহার ভিম, অ্যাঙ্গেল ও স্লিপারগুলো খুলে নিয়ে যান। কিন্তু এরপর আর মেরামতের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একই কারণে বাকি দুটি সেতুও সংস্কারের অভাবে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান মৃধা বলেন, ‘এই রাস্তার সবচেয়ে ভয়াবহ পুল নাথপাড়ার প্রথমটি। পুলের অবস্থা এত খারাপ যে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে নিতে পারি না। চেয়ারম্যানরা মেরামতের নামে লোহার ভিম খুলে নিয়ে গেছে, তারপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। একই অবস্থায় বাকি দুটি পুল রয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা মো. জিয়া উদ্দিন তৌহিদ বলেন, ‘এই রাস্তাটি তিনটি গ্রামের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ পথ। এখানে তিনটি মন্দির ও একটি স্কুল আছে। পুল না থাকায় আমরা প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করি।’

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সাগরকান্দা বাজার থেকে এক কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক এবং এ তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল। কাজটি মেসার্স ইফতি ইটিসিএল নামের প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার হয়, যার মালিক সাবেক সংসদ সদস্যের ভাই মিরাজুল ইসলাম। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় ঠিকাদারের লাইসেন্স জটিলতা দেখা দিলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন ব্যাপারী বলেন, ‘টেন্ডার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মামলার কারণে কাজ হয়নি। পুলের লোহার ভিম ও অ্যাঙ্গেল কারা খুলে নিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই।’

সাবেক চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ বলেন, ‘কোটি টাকার ওপরে টেন্ডার হয়েছিল। পরে ঠিকাদারি লাইসেন্সের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।’

স্থানীয়দের জোর দাবি, দ্রুত সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং তিনটি গ্রামের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত