Ajker Patrika

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে শহীদ মিনারে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ জুন ২০২৪, ২১: ৫১
নতুন শিক্ষা কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে শহীদ মিনারে মানববন্ধন

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল, নম্বরভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু এবং শিক্ষার্থীদের দলগত কাজে ডিভাইসমুখী হতে নিরুৎসাহিত করাসহ ৮ দফা দাবি নিয়ে মানববন্ধন করেছে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি।

মানববন্ধনে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির আহমেদসহ ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শতাধিক অভিভাবক যোগ দেন।

এ সময় নতুন কারিকুলাম বন্ধের দাবি জানিয়ে রাখাল রাহা বলেন, ‘একটি কারিকুলাম প্রণয়নে বিভিন্ন মহলে আলোচনা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী কি না, সেটি ভাবার প্রয়োজন ছিল। সংসদে ও মন্ত্রিপরিষদে এই কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এসব হয়েছে কি না, আমরা জানি না। যদি হতো, তাহলে এমন কারিকুলাম প্রণয়ন করা হতো না।’

নতুন এই কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের বইবিমুখ করে ডিভাইসের প্রতি আসক্ত করে তুলবে এমনটা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাহুল রাহা। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় ৫০০ দিনের বেশি স্কুল বন্ধ ছিল। সেই সময় অনলাইনে ক্লাসের নামে শিক্ষার্থীরা অতিমাত্রায় ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়েছিল, যদিও ক্লাস সাকসেসফুল হতো না। কিন্তু এখন যখন তারা মুক্তির দিকে যাচ্ছিল, তখন নতুন এই কারিকুলামের কারণে তারা আবার ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। পড়ালেখায় তাত্ত্বিক যে বিষয়, সেগুলো তারা শিখছে না। শুধু তারা কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস শিখছে। গুগল ব্রাউজ করে দেখে দেখে লেখা বা অ্যাসাইনমেন্ট করা তাদের ওপর চাপ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আহ্বান থাকবে, অবিলম্বে আমাদের শিক্ষার্থী ও জাতি ধ্বংসের এই কারিকুলামের প্রকল্প বন্ধ করুন। দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে এই কারিকুলাম বন্ধ করার বিকল্প নেই।’ 

নতুন এই কারিকুলাম বাতিল ও সংশোধন না করলে রাজপথে নামার হুমকি দিয়েছেন সেন্ট জোসেফ স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ডালিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘নতুন এই কারিকুলামে আমাদের ব্যয়ও বাড়ছে। আমরা এত ব্যয় কুলিয়ে উঠতে পারছি না। প্রতিদিন কাগজ, কলম ও পেনসিলের পাশাপাশি এখন নতুন নতুন সরঞ্জাম যুক্ত করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যয়ের দিকেও রাষ্ট্রকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এই কারিকুলাম বাচ্চাদের সঠিক মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। একজন দোকানকার, রিপোর্টার কী করে, সেটা আমার শিশু বাচ্চা জেনে কী করবে? তার দরকার পুথিগত বিদ্যা, যেটা আমরা মা-বাবা হিসেবে বুঝি। আমাদের অভিভাবকদের দাবি মানা না হলে রাজপথে রক্ত দেব আমরা।’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধনসমাবেশে অভিভাবক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, নতুন এই কারিকুলাম ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে, যা সর্বজনীন নয়। দাবি থাকবে শিক্ষা কারিকুলাম সবার কথা মাথায় রেখে প্রণয়ন করার। 

সমাবেশ শেষে আগামী ৫ ডিসেম্বর প্রতিটি জেলার প্রশাসকদের কাছে স্মারকলিপি প্রধান এবং যেকোনো দিন যার যার সুবিধামতো স্কুলের সামনে অভিভাবকদের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক রাহুল রাহা। 

দাবিগুলো হলো—

১. শিক্ষানীতি বিরোধী নতুন কারিকুলাম সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। 

২. নম্বর ভিত্তিক ২টা সাময়িক লিখিত পরীক্ষা (৬০ নম্বর) চালু রাখতে হবে এবং ধারাবাহিক মূল্যায়ন হিসেবে ৪০ নম্বর রাখতে হবে। 

৩. নবম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের সুযোগ অথবা বিজ্ঞান বিভাগ রাখতে হবে। 

৪. ত্রিভুজ, বৃত্ত, চতুর্ভুজ ইত্যাদি নির্দেশক বা ইন্ডিকেটর বাতিল করে নম্বর ও গ্রেড ভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি রাখতে হবে। 

৫. সকল সময়ে সকল শিখন, প্রোজেক্ট ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক ক্লাসের ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং স্কুল পিরিয়ডেই সকল প্রোজেক্ট সম্পন্ন হতে হবে। 

৬. শিক্ষার্থীদের দলগত ও প্রোজেক্টের কাজে ডিভাইসমুখী হতে অনুৎসাহিত করতে হবে এবং তান্ত্রিক বিষয়ে অধ্যয়নমুখী করতে হবে। 

৭. প্রতিবছর প্রতি ক্লাসে নিবন্ধন ও সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা চালু রাখতে হবে এবং এসএসসি ও এইচএসসি দুটি পাবলিক পরীক্ষা বহাল রাখতে হবে। 

৮. সকল সময়ে সকল শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের আগে অবশ্যই তা মন্ত্রী পরিষদ এবং সংসদে উত্থাপন করতে হবে। 

পুলিশি অনুরোধে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সমাবেশ শেষ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অভিভাবকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত