নাজমুল হাসান সাগর, জাজিরা থেকে
রাতটা দেরিতে নামলেও ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সকাল শুরু হয় ফেরিঘাট এলাকাগুলোতে। পারাপারের জন্য যাত্রীদের আনাগোনাকে কেন্দ্র করেই ঘাটসংলগ্ন এলাকা থাকে সরব। চায়ের দোকান, খাবার হোটেল কিংবা ভ্রাম্যমাণ ডিম ও ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় অপেক্ষমাণ যাত্রীদের নিয়ে। হকারদের হাঁকডাক, চায়ের কাপের চিনি ঘোটার শব্দ আর মানুষের গল্প, আড্ডায় সকালের শুরুতেই সন্ধ্যার হাটের আবহ নামে জাজিরা প্রান্তের পূর্ব নাওডোবা ফেরিঘাট (মাঝিঘাট) এলাকায়।
অন্যান্য সময় এসব দোকান ও যাত্রীছাউনিতে অপেক্ষারত যাত্রী বা দোকানদাররা নানা বিষয়ে আড্ডা-গল্পে মেতে থাকেন। কিন্তু আজ বুধবার সকালে ঘাট এলাকার চিত্র অন্যান্য দিনের মতো হলেও গল্প বা আড্ডার বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা নেই বললেই চলে। সবকিছু ঠিক থাকলে ৯ দিন পর উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে স্বপ্ন। তাই সেতু নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের আশা, প্রত্যাশা বা ইচ্ছা-আগ্রহের কমতি নেই।
পূর্বপুরুষ যে নদী পাড়ি দিয়েছে নৌকায়, সেখানে ফেরি, লঞ্চ আর স্পিডবোট এল। জীবন কিছুটা সহজ হলো। অনেকের কল্পনায়ও ছিল না পদ্মা পারাপারে আসতে পারে নতুন কোনো সংযোজন ৷ মূলত সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, ইচ্ছা-প্রত্যাশা ও আবেগ তাদেরই বেশি। এমনই একজন ২ নম্বর ঘাটের চা বিক্রেতা ফজল পোদ্দার। দোকানদারির ফাঁকে ফাঁকে অপেক্ষমাণ যাত্রী ও পরিচিত এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করছেন পদ্মা সেতু নিয়ে ৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁর যেন অপেক্ষা ফুরায় না, উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।
গল্পে গল্পে তিনি জানালেন, এই এলাকার মানুষের আদি পেশা নৌকা চালনা। একটা সময় এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত নৌকা চালিয়ে, মাছ শিকার করে। পদ্মা যেন এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে রক্তের মতো মিশে আছে। যেমন চিত্র পাওয়া যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসে। সেই সব দুর্দিন অনেক আগেই পেরিয়ে এলেও পদ্মার বুকে সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছুটবে এমনটা ভাবেনি অনেকেই। গাড়ি চলার স্বপ্ন যখন পূরণ হয়েছে, তখন আরও একটা গোপন স্বপ্ন ও সুপ্ত বাসনা পুষে রেখেছিলেন ফজল পোদ্দার। এত দিন কাউকে সেটা না জানালেও এখন জানাতে চান। তাই কিছুটা লজ্জামাখা ভঙ্গিতে, ঠোঁট চাপা হাসি নিয়ে চায়ের কাপে দুধ ঘুটতে ঘুটতে তিনি বললেন, ‘উদ্বোধনের দিন আমি সেতু দিয়া আইডা (হেঁটে) পদ্মা পার অমু। আমার লগের কয়েকজনরে কইছি। কেউ যাইতে রাজি অইছে, আবার কেউ অয় নাই। দূর তো ম্যালা, তাই কেউ যাবার চায় না। কেউ না গেলে আমি একলাই যামু।’
কথার মাঝেই তাঁর চোখে-মুখে ফুটে উঠছে নিশ্চিত পরাজয় জানা যুদ্ধে, জয় নিয়ে ফিরে আসা সৈনিকের মতো আত্মবিশ্বাস আর গর্ব। চা ঘোটা শেষে কোনো এক ক্রেতার হাতে তা তুলে দিলেন। আবার বলতে শুরু করলেন, ‘চর্মচোক্ষে এই পদ্মা সেতু দেখমু কোনো দিন ভাবি নাই। অথচ সেতু এহন খাঁড়া। আমরা পদ্মা নদী আইডা পার অমু। নৌকা, ট্রলার আর ফেরির ঝামেলা নাই। বছর বছর পারাপার অইতে গিয়া মানুষ মরার চিন্তা নাই।’
হেঁটে বা সাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। এটা তাঁকে জানানোয় কিছুটা আশাহত হলেন, কিন্তু বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তাঁর ধারণা, অন্তত উদ্বোধনের দিন এই সেতু সাধারণ মানুষের জন্য হেঁটে পার হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। কারণ, তাঁর দেখা অন্য সব সেতু উদ্বোধনের দিন হেঁটে পারাপারের ব্যবস্থা ছিল। কয়েকজন বুঝিয়েও তাঁর বিশ্বাস থেকে টলানো গেল না।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন
পদ্মার ঢেউয়ের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে শক্ত হওয়া মনের আত্মবিশ্বাস সহজে টলানো যায় না। গভীর রাতে বাদাম ছাড়া পানসি নিয়ে প্রমত্তা ঢেউকে দুই হাতে সরিয়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়া লোক ফজল। ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতেন তাঁর মা। পদ্মার ঢেউয়ে শূন্যে ওঠা পানসি দেখে তিনি বুঝতেন ছেলে ফিরে আসছে জীবন নিয়ে। পদ্মা ও তাঁর ঢেউয়ের সঙ্গে যার এমন যুদ্ধ ছিল, তাঁর মনে এমন বাসনা থাকা আকাশকুসুম নয়। পদ্মা সেতু ফজল পোদ্দারের জীবনে অহংকার হয়ে আবির্ভূত হয়েছে, যা এত দিন ছিল পদ্মার বুকে। তাই হেঁটে পদ্মা পার হয়ে আগ্রাসী এই নদীর বুকের অহংকার চূর্ণ করতে চান ৬৮ বছরের এই বৃদ্ধ।
পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
রাতটা দেরিতে নামলেও ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সকাল শুরু হয় ফেরিঘাট এলাকাগুলোতে। পারাপারের জন্য যাত্রীদের আনাগোনাকে কেন্দ্র করেই ঘাটসংলগ্ন এলাকা থাকে সরব। চায়ের দোকান, খাবার হোটেল কিংবা ভ্রাম্যমাণ ডিম ও ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় অপেক্ষমাণ যাত্রীদের নিয়ে। হকারদের হাঁকডাক, চায়ের কাপের চিনি ঘোটার শব্দ আর মানুষের গল্প, আড্ডায় সকালের শুরুতেই সন্ধ্যার হাটের আবহ নামে জাজিরা প্রান্তের পূর্ব নাওডোবা ফেরিঘাট (মাঝিঘাট) এলাকায়।
অন্যান্য সময় এসব দোকান ও যাত্রীছাউনিতে অপেক্ষারত যাত্রী বা দোকানদাররা নানা বিষয়ে আড্ডা-গল্পে মেতে থাকেন। কিন্তু আজ বুধবার সকালে ঘাট এলাকার চিত্র অন্যান্য দিনের মতো হলেও গল্প বা আড্ডার বিষয়বস্তুতে ভিন্নতা নেই বললেই চলে। সবকিছু ঠিক থাকলে ৯ দিন পর উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে স্বপ্ন। তাই সেতু নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের আশা, প্রত্যাশা বা ইচ্ছা-আগ্রহের কমতি নেই।
পূর্বপুরুষ যে নদী পাড়ি দিয়েছে নৌকায়, সেখানে ফেরি, লঞ্চ আর স্পিডবোট এল। জীবন কিছুটা সহজ হলো। অনেকের কল্পনায়ও ছিল না পদ্মা পারাপারে আসতে পারে নতুন কোনো সংযোজন ৷ মূলত সেতু নিয়ে উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা, ইচ্ছা-প্রত্যাশা ও আবেগ তাদেরই বেশি। এমনই একজন ২ নম্বর ঘাটের চা বিক্রেতা ফজল পোদ্দার। দোকানদারির ফাঁকে ফাঁকে অপেক্ষমাণ যাত্রী ও পরিচিত এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করছেন পদ্মা সেতু নিয়ে ৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে তাঁর যেন অপেক্ষা ফুরায় না, উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।
গল্পে গল্পে তিনি জানালেন, এই এলাকার মানুষের আদি পেশা নৌকা চালনা। একটা সময় এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করত নৌকা চালিয়ে, মাছ শিকার করে। পদ্মা যেন এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে রক্তের মতো মিশে আছে। যেমন চিত্র পাওয়া যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ উপন্যাসে। সেই সব দুর্দিন অনেক আগেই পেরিয়ে এলেও পদ্মার বুকে সাঁই সাঁই করে গাড়ি ছুটবে এমনটা ভাবেনি অনেকেই। গাড়ি চলার স্বপ্ন যখন পূরণ হয়েছে, তখন আরও একটা গোপন স্বপ্ন ও সুপ্ত বাসনা পুষে রেখেছিলেন ফজল পোদ্দার। এত দিন কাউকে সেটা না জানালেও এখন জানাতে চান। তাই কিছুটা লজ্জামাখা ভঙ্গিতে, ঠোঁট চাপা হাসি নিয়ে চায়ের কাপে দুধ ঘুটতে ঘুটতে তিনি বললেন, ‘উদ্বোধনের দিন আমি সেতু দিয়া আইডা (হেঁটে) পদ্মা পার অমু। আমার লগের কয়েকজনরে কইছি। কেউ যাইতে রাজি অইছে, আবার কেউ অয় নাই। দূর তো ম্যালা, তাই কেউ যাবার চায় না। কেউ না গেলে আমি একলাই যামু।’
কথার মাঝেই তাঁর চোখে-মুখে ফুটে উঠছে নিশ্চিত পরাজয় জানা যুদ্ধে, জয় নিয়ে ফিরে আসা সৈনিকের মতো আত্মবিশ্বাস আর গর্ব। চা ঘোটা শেষে কোনো এক ক্রেতার হাতে তা তুলে দিলেন। আবার বলতে শুরু করলেন, ‘চর্মচোক্ষে এই পদ্মা সেতু দেখমু কোনো দিন ভাবি নাই। অথচ সেতু এহন খাঁড়া। আমরা পদ্মা নদী আইডা পার অমু। নৌকা, ট্রলার আর ফেরির ঝামেলা নাই। বছর বছর পারাপার অইতে গিয়া মানুষ মরার চিন্তা নাই।’
হেঁটে বা সাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। এটা তাঁকে জানানোয় কিছুটা আশাহত হলেন, কিন্তু বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তাঁর ধারণা, অন্তত উদ্বোধনের দিন এই সেতু সাধারণ মানুষের জন্য হেঁটে পার হওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। কারণ, তাঁর দেখা অন্য সব সেতু উদ্বোধনের দিন হেঁটে পারাপারের ব্যবস্থা ছিল। কয়েকজন বুঝিয়েও তাঁর বিশ্বাস থেকে টলানো গেল না।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন
পদ্মার ঢেউয়ের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে শক্ত হওয়া মনের আত্মবিশ্বাস সহজে টলানো যায় না। গভীর রাতে বাদাম ছাড়া পানসি নিয়ে প্রমত্তা ঢেউকে দুই হাতে সরিয়ে পদ্মা পাড়ি দেওয়া লোক ফজল। ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতেন তাঁর মা। পদ্মার ঢেউয়ে শূন্যে ওঠা পানসি দেখে তিনি বুঝতেন ছেলে ফিরে আসছে জীবন নিয়ে। পদ্মা ও তাঁর ঢেউয়ের সঙ্গে যার এমন যুদ্ধ ছিল, তাঁর মনে এমন বাসনা থাকা আকাশকুসুম নয়। পদ্মা সেতু ফজল পোদ্দারের জীবনে অহংকার হয়ে আবির্ভূত হয়েছে, যা এত দিন ছিল পদ্মার বুকে। তাই হেঁটে পদ্মা পার হয়ে আগ্রাসী এই নদীর বুকের অহংকার চূর্ণ করতে চান ৬৮ বছরের এই বৃদ্ধ।
পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল উত্তাল হয়ে উঠেছে। আজ শুক্রবার সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতায় তীরে আছড়ে পড়ছে। ফলে সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলছে জেলা প্রশাসন।
২ মিনিট আগেবগুড়ার শেরপুর উপজেলার কাটাখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হঠাৎ ধসে পড়েছে। এতে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে আশপাশের ১০ গ্রাম। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বাঁধটির প্রায় ৫০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ে। প্রবল পানির চাপে ধসে যায় বাঁধসংলগ্ন সড়ক, উপড়ে পড়ে গাছপালা, আর কৃষিজমির...
৪ মিনিট আগেদেশের সিংহভাগ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস ভবন নির্মাণে ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে। শুধু প্রধান উপদেষ্টার সামনে উপস্থাপন করার অপেক্ষা। কাস্টম ভবনসহ চট্টগ্রামে তিন আইকনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। অঅজ শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সম্মেলনে কক্ষে মতবিনিময়কালে...
২৩ মিনিট আগেস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের পানি বেড়ে চরকুকরি-মুকরি, ঢালচর ও মুজিবনগর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে বসতঘর ও রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন দিনমজুর ও শ্রমজীবী মানুষ।
২৯ মিনিট আগে