Ajker Patrika

‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার’ পর দুর্ঘটনায় মৃত বলে দাফন

সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
Thumbnail image

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে স্ত্রীর করা হত্যা মামলার পর আওয়ামী লীগ নেতা আজগর হোসেন চঞ্চল বেপারীর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে হাট বালিগাঁও কবরস্থান থেকে তাঁর মরদেহ তোলা হয়। তাঁর স্ত্রীর দাবি, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে চঞ্চলকে হত্যার পর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন জানিয়ে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। 

নিহত আজগর হোসেন চঞ্চল মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। 

মামলার এজাহার ও মামলার বাদী সুমী আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে নিজের কাজ করার জন্য বাড়ির বাইরে যান চঞ্চল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে চঞ্চল তাঁর স্ত্রীকে মোবাইলে কল দেন। এ সময় সুমী আক্তার তাঁর স্বামীর সঙ্গে কিছু লোকের বাক্বিতণ্ডা ও চেঁচামেচি শুনতে পান। তাঁর সঙ্গে কে বা কারা আছে জানতে চাইলে চঞ্চল জানায় তাঁর সঙ্গে বালিগাওঁ গ্রামের রিটু, হাবিবুর রহমান সোহেল, গহি নিতাই দাস ও উত্তম সরকার সানীসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। 

পরে ওই দিন রাতেই ইসলামপুর রাস্তার পাশে মুমূর্ষু অবস্থায় চঞ্চলকে বালিগাওঁ বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন দেখতে পান। তাঁকে বালিগাঁও ডক্টরস ক্লিনিকে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়। তিনি ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১১ সেপ্টেম্বর মারা যায়। 

আজগর হোসেন চঞ্চল বেপারীর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। ছবি: সংগৃহীত পরে নিহতের স্বজনদের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চঞ্চল মারা গেছেন বলে ভুল বুঝিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁকে দাফন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সুমি আক্তার জানতে পারেন, তাঁর স্বামীর বুকের হাড় নয়টি ভাঙা ছিল এবং পিঠের মির্ডানের হাড় তিন জায়গায় ভাঙা ছিল। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ঘটলে শরীরে যেমন আঘাত পাওয়ার কথা, সেই ধরণের কোনো আঘাত তাঁর শরীরে ছিল না। 

চঞ্চলের সঙ্গে থাকা লোকজনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে এ ঘটনায় চঞ্চলের স্ত্রী সুমী বেগম বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলী আদালতে মামলা করেন। সেখান থেকেও মামলাটি খারিজ করে দিলে মুন্সিগঞ্জ জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। পরে ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে টঙ্গিবাড়ী থানাকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে নিতে আদেশ দেয় আদালত। 

এ বিষয়ে মামলার বাদী সুমী আক্তার বলেন, ‘আমার প্রথমে দুই মেয়ে হয়েছে। যখন আমার স্বামী চঞ্চল মারা যায় তখন আমার তিন নম্বর সিজার হয় এবং আরেকটি কন্যা সন্তান জন্ম দেই।’ 

সুমী আক্তার আরও বলেন, ‘সে সময় আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। বিছানা থেকে উঠতে পারি নাই। আমি অসুস্থ থাকায় বুঝতে পারি নাই যে আমার স্বামীকে কেউ মেরে ফেলেছে। যারা আমার স্বামীরে মারছে তারা দ্রুত কৌশলে তার দাফনের কাজ সেরে ফেলে। পরে জানতে পারলাম ওরা পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে মেরে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যা করা হয়েছে। তাই আমি তাদের আসামি করে মুন্সিগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেছি।’ 

এ ঘটনায় চারজনকে আসামি করা মামলা করেন তিনি। মামলার আসামিরা হলেন–বালিগাওঁ গ্রামের গোলাম রিটু, বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান সোহেল, নিতাই দাস, উত্তম সরকার। 

এ ব্যাপারে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা টঙ্গীবাড়ী থানার উপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন বলেন, আদালতের নির্দেশে টঙ্গীবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় আদালত লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের আদেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আজ লাশ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত