Ajker Patrika

ফারদিনের মৃত্যু: সন্দেহের বশে ২ মাস কারাভোগের পর মুক্ত বান্ধবী বুশরা

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬: ৪২
Thumbnail image

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত সংস্থা ‘কোনো সম্পৃক্ততা’ না পাওয়ায় নিছক সন্দেহের বশে দু্ই মাস কারাভোগ শেষে অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন তাঁর বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের জেল সুপার ওবায়দুর রহমান জানান। 

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বুশরার জামিনের কাগজপত্র সোমবার রাতে কারাগারে পৌঁছায়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জামিনের কাগজপত্র যাচাইসহ প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাগার থেকে বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম তাঁকে গ্রহণ করেন।

 কারাগারের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাবা ও মেয়ে দুজনের কেউই কিছু বলতে রাজি হননি।

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন গত ৫ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ওইদিনই রাজধানীর রামপুরা থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন। দুদিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।

১০ নভেম্বর ফারদিনকে ‘হত্যা করে মরদেহ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা করেন তাঁর বাবা। মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় বুশরাকে। সেদিনই বুশরাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। 

তবে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশপ্রধান মো. হারুন অর রশিদের কথায় তদন্তে ভিন্ন তথ্য উঠে আসার প্রমাণ মেলে। সেদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফারদিনের নিহত হওয়ার ঘটনায় বুশরার কোনো সম্পৃক্ততা আমরা পাইনি, এটা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করব। এরপর বুশরাকে ছাড়া হবে কি না, সেটা আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন।’

এর মধ্যে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একবার বুশরার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করার পর তাঁর আইনজীবী গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে রোববার জামিন দেন আদালত।

জামিনের শুনানিতে বুশরার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, বিনা কারণে কারাগারে আটক থাকায় তাঁর লেখাপড়া নষ্ট হচ্ছে। বুশরা ফারদিনের ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি কোনোভাবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না।

সেদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতদিনেও মামলার তদন্তে অগ্রগতি নেই। পুলিশ, র‍্যাব ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। কাজেই বুশরাকে আটক রাখার আর কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

ফারদিন বুয়েটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদকও ছিলেন। আর তাঁর বন্ধু আমাতুল্লাহ বুশরা ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। 

মরদেহ উদ্ধারের পর ফারদিন খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক ধারণার কথা জানিয়েছিলেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। এরপর এটিকে হত্যাকাণ্ড ধরে মামলার তদন্ত শুরু হয়। কিন্তু ৪০ দিন পর গত ১৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। 

তখন প্রমাণ হিসেবে রাতের আঁধারে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে একজনের নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার একটি ভিডিও প্রকাশ করে সংস্থাটি। এ ঘটনার ছায়াতদন্ত করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তদন্তের পর গত বছরের ১১ ডিসেম্বর র‍্যাব সাংবাদিকদের জানায়, শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারদিন। 

তবে ফরেনসিক প্রতিবেদন না পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারছে না সংস্থাটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত