Ajker Patrika

আঙ্গুলের সমস্যায় পেটে অস্ত্রোপচারে শিশুর মৃত্যু: চিকিৎসক লাপাত্তা, হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ২২: ০৬
আঙ্গুলের সমস্যায় পেটে অস্ত্রোপচারে শিশুর মৃত্যু: চিকিৎসক লাপাত্তা, হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ

আগুনে পোড়া হাতের চিকিৎসা করাতে এসে লাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে পাঁচ বছরের শিশু মারুফা জাহান মাইশাকে। কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়ায় তাদের বাড়ি।

এ ঘটনায় রাজধানীর মিরপুরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতাল সিলগালা করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই হাসপাতালটি চলে আসছিল। এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা না ঘটলে হয়তো সামনেই আসত না। হয়তো এর আগেও এমনটা ঘটেছে। এ অবস্থায় আজ রোববার সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে লিখিত ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। 

শিশু মাইশার পরিবার বলছে, একই জেলার পরিচয় সূত্রে রাজধানীর মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আহসান হাবীবের শরণাপন্ন হন মাইশার বাবা মোজাফফর। শিশু মাইশার হাত দেখে চিকিৎসক তাঁদের জানান, অপারেশন করলে মাইশার হাত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এ জন্য ৭০ হাজার টাকা লাগবে বলে জানান ওই চিকিৎসক। অস্ত্রোপচারের আগেই ৫০ হাজার টাকা নেন ওই চিকিৎসক। সেই অনুযায়ী গত ৩০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর মিরপুর এলাকার রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে মাইশার হাতে অস্ত্রোপচার হয়।

কিন্তু ঘণ্টা দেড়েক পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশুটির অবস্থা খারাপ, তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে হবে। এতে হতবিহ্বল বাবা-মা মেয়েকে নিয়ে ছোটেন মিরপুর-১ এর মাজার রোডের ওই হাসপাতালে। সেখানে নেওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় শিশুটি মারা গেছে।

মাইশার বাবা মোজাফফর জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের খরচ বাবদ নেওয়া টাকা তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছে। মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করে দেয়। কিন্তু পথে কয়েকবার চালক পরিবর্তন হয়, গ্যাসের সমস্যার কথা বলে বগুড়ায় নামিয়ে দেয়। পরে অন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়িতে নেওয়া হয় মাইশার মরদেহ। দাফনের জন্য গোসল করাতে গিয়ে নারীরা দেখতে পান, শিশু মাইশার নাভির নিচে পুরো পেটে সেলাই করা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। কিন্তু ঢাকায় অপারেশন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ চলে যায়। পরে নিরুপায় হয়ে মাইশাকে দাফন করা হয় বাড়ির আঙিনায়।

মোজাফফর আলী বলেন, ‘মেয়ের হাতের আঙুল ঠিক করার জন্য ঢাকার মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীবের কাছে যাই। তিনি সবকিছু দেখে বলেন বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে অপারেশন করা হবে। রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল মেডিকেলে তাঁর শেয়ার আছে জানিয়ে ডাক্তার বলেন, সেখানে অপারেশন করালে খরচ কম লাগবে। বুধবার সেখানে হাতের অপারেশন করার সময় মেয়ে মারা যায়। পরে তারা আমাদের টাকা ফেরত দেয় এবং ধমক দিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি এসে মেয়েকে গোসল করার সময় স্থানীয় মহিলারা দেখেন, মেয়ের তলপেটের পুরো অংশ কেটে সেলাই করা।’

মোজাফফর আরও বলেন, ‘আমরা এটা দেখে নিরুপায় হয়ে পড়ি। আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি নাই। হাত অপারেশন করতে গিয়ে তারা কেন আমার মেয়ের পেট কাটল তা জানি না। আমাদেরকে কোনো কাগজপত্রও দেওয়া হয় নাই।’

এদিকে এ ঘটনায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন মাইশার বাবা মোজাফফর। রোববার আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা আজই (রোববার) ঢাকায় রওনা দেব। হাসপাতালের পাশাপাশি যারা অপারেশন করে আমার মেয়েকে হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেব সংশ্লিষ্ট থানায় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত চিকিৎসক মো. আহসান হাবীব বিসিএস ২৫ ব্যাচের চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি মহাখালীতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) হিসেবে কর্মরত। তাঁর বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর এ-৩২৫৭৬। ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, মিরপুরে তাঁর চেম্বার। এ ঘটনায় অপর চিকিৎসক হলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরিফুল ইসলাম। তাঁর নিবন্ধন নম্বর জানা যায়নি।

চিকিৎসকেরা বলছেন, হাতের আঙুলের অস্ত্রোপচার করে ওই স্থানে ত্বক যুক্ত করার জন্য পেট থেকে ত্বক নেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও হয়তো সেটাই হয়েছে। পরিণত বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে ঊরু থেকে ত্বক নেওয়া হয়। অ্যানেসথেসিয়ার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অ্যানেসথেসিয়া স্পেশালিস্ট ছাড়া অন্য কেউ অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করতে পারে না। ওই অপারেশনের সময় যদি এটি না থাকে অবশ্যই চিকিৎসকেরা অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন। যা হত্যাকাণ্ডের শামিল। এ ঘটনায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে অধিদপ্তর।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিছুদিন আগেও একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এসব অভিযোগ অনেক আসছে। ফলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে একটু দেরি হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারে সরকার, ভয়ে কলকাতায় দিলীপ কুমারের আত্মহত্যা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত