Ajker Patrika

মশার কীটনাশক সরবরাহে প্রতারণা: মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ২১: ৫৪
মশার কীটনাশক সরবরাহে প্রতারণা: মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের জামিন

মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলীসহ তিনজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। মশা নিধনের জন্য কীটনাশক সরবরাহে সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে যাওয়ার ১২ দিনের মাথায় তাঁরা জামিন পান। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হক তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন। 

মোহাম্মদ আলী ছাড়াও অন্য দুই আসামি হলেন একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলাউদ্দিন ও নির্বাহী পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।

আদালতে গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের এসআই সেলিম খান জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এর আগে গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান আসামিরা। এরপর ৬ অক্টোবর ছয় সপ্তাহের জামিন শেষ হওয়ায় আসামিরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরী তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

পরে ৭ অক্টোবর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। ৯ অক্টোবর রিমান্ডের আবেদন শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেন। ওই দিন তাঁদের জামিনও নামঞ্জুর করা হয়।

এর আগে গত ২১ আগস্ট মশা নিধনের কীটনাশক সরবরাহে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের এই তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহকারী ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. রাহাত আল ফয়সাল। মামলার অন্য আসামি হলেন চীনা নাগরিক লি কিউইয়াং।

মামলায় বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু মশা নিধনকাজে ব্যবহারের জন্য পাঁচ হাজার কেজি কীটনাশক সরবরাহ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে মার্শাল অ্যাগ্রোভেট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দরপত্র দাখিল করলে কোম্পানির দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। দরপত্রের চুক্তি মোতাবেক উল্লিখিত কীটনাশক সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে সরবরাহ করবে এবং যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্যারান্টি থাকবে।

এরপর আসামিরা সিঙ্গাপুর থেকে আমদানিকৃত বলে সে দেশীয় কোম্পানি বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের নামসংবলিত ও তাদের মোড়ক ব্যবহার করে উল্লিখিত কীটনাশক বিগত ১ আগস্ট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্রয়ভান্ডারে সরবরাহ করে। 

সরবরাহের পর গত ৩ আগস্ট প্রজেক্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আসামিরা চীনা নাগরিক লি কিউইয়াংকে সিঙ্গাপুরের কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করেন। 

পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠানটির সংবাদ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হলে সংবাদটি ওই বেস্ট কেমিক্যাল কোম্পানির দৃষ্টিগোচর হয়। গত ১৪ আগস্ট তারা তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে পোস্ট করে জানায়, তারা বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে উল্লিখিত কীটনাশক সরবরাহ করেনি। 

পোস্টটি প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে গত ১৭ আগস্ট সিঙ্গাপুরের কোম্পানিটি আসামিদের প্রতারণার বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুর্ঘটনা ছাড়া নিষ্ক্রিয় থাকে প্রশাসন: যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপিজিসহ জ্বালানি

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩০
চাঁদপুর সদরের চান্দ্রা চৌরাস্তা মোড়ে রোদে রেখেই বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। ছবি: আজকের পত্রিকা।
চাঁদপুর সদরের চান্দ্রা চৌরাস্তা মোড়ে রোদে রেখেই বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। ছবি: আজকের পত্রিকা।

চাঁদপুর জেলা সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার। ক্রেতার সহজলভ্যতার জন্য এই বিক্রির অনুমোদন থাকলেও মানা হচ্ছে না বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোনো নিয়মনীতি। অধিকাংশ দোকানে একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে শহরে বঙ্গবন্ধু সড়কে একই দোকানে এলপিজি ও জ্বালানি তেল বিক্রির অনিয়মের কারণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার পর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও বর্তমানে তাদের ভূমিকা নীরব। তবে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন।

চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ বাজারে একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা।
চাঁদপুর সদরের ফরক্কাবাদ বাজারে একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা।

সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলার আঞ্চলিক, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক এবং বাজারগুলোতে মুদি, ফোন, চায়ের দোকান, সার-কীটনাশক এমনকি টেইলারিং দোকানেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। গুরুতর বিষয় হলো, এসব দোকানে পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেলও। ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা সিলিন্ডার বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন বা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত নন। তাঁরা রাস্তার পাশে বা দোকানের সামনে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় সিলিন্ডার সাজিয়ে রাখেন, যাতে ক্রেতাদের চোখে পড়ে। একটি দোকানে কী পরিমাণ সিলিন্ডার রাখা যাবে—এসব নিয়মের কিছুই জানেন না ব্যবসায়ীরা।

এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম হচ্ছে, একটি দোকানে ১২ লিটারের সর্বোচ্চ ৮টি এবং বড় আকারের হলে ৩টি সিলিন্ডার লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করা যায়। তবে সিলিন্ডার অবশ্যই রোদে না রেখে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। অতিরিক্ত মজুত করলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।

সদর উপজেলার চান্দ্রা চৌরাস্তার স্যানিটারি মালপত্র বিক্রি করেন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম। তিনি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারও বিক্রি করেন। তবে বিক্রির জন্য অনুমোদনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, ‘এলাকার অনেক দোকানে বিক্রি হয়। আমিও তাদের মতো বিক্রি করি। কী পরিমাণ সিলিন্ডার মজুত রাখা যাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, এই বিষয়ে তিনি অবগত নন।

চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুর ওয়াপদা এলাকায় একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
চাঁদপুর শহরের রঘুনাথপুর ওয়াপদা এলাকায় একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারের মোটর গ্যারেজে বিক্রি হয় গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। দোকানের মালিক সুমন দাস বলেন, কোনো নিয়ম জানা নেই বিক্রির জন্য। দুর্ঘটনা হলে কী করণীয়, সেটাও বলতে পারেননি এই ব্যবসায়ী।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া বাজার, ভাটিয়ালপুর, নয়ারহাট, রামপুর, গোয়ালভাওর এলাকার দোকানগুলোতে দেখা গেছে প্রায় দোকানে ২০ থেকে ২৫টি করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত। অনেক দোকানি রোদের মধ্যে রেখেছেন সিলিন্ডার।

রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, সিলিন্ডার দোকানের সামনে না রাখলে ক্রেতারা জানবে কীভাবে। এ জন্য রোদে রাখা হায়।

সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের বাসিন্দা আল-ইমরান শোভন, মাইনুল ইসলাম, শাহজাহান বলেন, ‘এ বিষয়টি জানতাম না। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারে আগামীতে সতর্ক থাকব।’

ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ সম্পর্কে অজ্ঞ। শহরের নিউ ট্রাক রোডের ব্যবসায়ী শামীম, সেলিম খান ও সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করি। কিন্তু এটির মেয়াদ থাকে জানা ছিল না। এখন থেকে মাল ক্রয়ের সময় মেয়াদ দেখে নিতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের ওপরের অংশে একটি কোড থাকে (যেমন A-২০২৫)। ‘A’ মানে জানুয়ারি-মার্চ, ‘B’ মানে এপ্রিল-জুন, ‘C’ মানে জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং ‘D’ মানে অক্টোবর-ডিসেম্বর। এই অক্ষর এবং তার পরের সালটি সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্দেশ করে। সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ হিসেবে লেখা থাকবে ‘এ’-২০২৫, অর্থাৎ এটির মেয়াদ শেষ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম এন জামিউল হিকমা বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানির বিক্রির বিষয়টি অবগত হলাম। শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ভোক্তার সহজলভ্যতার কারণে স্থানীয় দোকানগুলোয় বিক্রির জন্য অনুমোদন লাগে না। তবে যেকোনো দোকানে ১২ লিটারের ৮-১০টির বেশি সিলিন্ডার রাখতে পারবে না। ১২ লিটারের বেশি ওজনের হলে ৩ থেকে ৪টি রেখে বিক্রি করতে পারবে। অতিরিক্ত মজুত করলে অবশ্যই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স লাগবে। রাস্তার ওপর রেখে বিক্রি করতে পারবে না। ঠান্ডা জায়গায় সিলিন্ডার রাখতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

আরিফ রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৭
কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত
কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল পদ স্থগিত ও বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করায় দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি তিনি রাজাপুর উপজেলা বিএনপির স্থগিত সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন ও কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির স্থগিত সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরসহ পদ স্থগিত হওয়া একাধিক নেতাকে নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন। এই ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

কাঠালিয়া উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘রাজাপুর ও কাঠালিয়ার বিএনপি এখন দুভাগে বিভক্ত। কেন্দ্র থেকে বহিষ্কৃত বা স্থগিত ব্যক্তিদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে নিষেধ থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। মনে হয় রাজাপুর-কাঠালিয়ায় ভিন্ন একটি বিএনপি চলছে।’

জাকির হোসেনের দাবি, বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নাসিম উদ্দিন আকন চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ পান। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ২৫ জানুয়ারি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর পদ স্থগিত করা হয়।

পরে ২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

একইভাবে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ৫ এপ্রিল শোকজ করা হয়। পরদিন সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় তাঁর পদ স্থগিত করা হয় এবং তাঁকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহর (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত
কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহর (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

নাসিম উদ্দিন আকন বলেন, ‘আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি, শুধু পদ স্থগিত করা হয়েছে। জেলা বিএনপির রোষানলের কারণে এই সিদ্ধান্ত। রাজাপুরের মানুষ ও নেতা-কর্মীরা আমাকে ভালোবাসেন। তাই রাজনৈতিক, পারিবারিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা আমাকে দাওয়াত দেন। এটা আমার গ্রহণযোগ্যতা। তাই রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে আমি স্বাভাবিকভাবেই অংশগ্রহণ করি। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে আমার কোনো বাধা নাই।’

পদ স্থগিত নেতা আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, ‘বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করা যায় না; তবে যাঁদের পদ স্থগিত করা হয়েছে, তাঁরা মিছিল-সমাবেশে অংশ নিতে পারেন। তাঁদের পদ না থাকলেও তাঁরা দলের অংশ, তাই সভায় অংশগ্রহণে সমস্যা নেই।’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ করে, সেও যদি আমার মিছিল-মিটিংয়ে আসে, আমি কি তাকে বের করে দেব? মিছিল-মিটিংয়ে আসা এক জিনিস, কিন্তু পদাধিকার বলে কমিটি বা সংগঠন করা আরেক জিনিস। সাংগঠনিকভাবে যার পদ স্থগিত, সে কমিটিতে থাকতে পারে না। তবে মতবিনিময় সভা বা জনসভায় তার উপস্থিতিতে আমি কোনো সমস্যা দেখি না।’ নাসিম উদ্দিন আকনের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ব্যাখ্যা দেন, ‘না, ওটা আমাদের অস্থায়ী কার্যালয়। শাহজাহান ওমর দল থেকে যাওয়ার পর ওটা রাজাপুর বিএনপির অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানের ছবি আছে। নতুন অফিস এখনো নেওয়া হয়নি।’

রফিকুল ইসলাম জামাল আরও বলেন, ‘নাসিম উদ্দিন আকন একটি স্কুল ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি। আমি যদি সেই জায়গায় যাই, তাহলে কি সে থাকবে না? আমার দলের কেউ যদি দল থেকে বহিষ্কারও হয়, কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা শিক্ষক হিসেবে থাকে, তাহলে সে উপস্থিত থাকলে সমস্যা কোথায়?’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন, এতে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে জানানো হয়েছে।’

রাজাপুর ও কাঠালিয়া বিএনপির মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্বে মাঠের রাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় নেতার অংশগ্রহণে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে সভা হওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় সিদ্ধান্ত মানা না হলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা কোথায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেহেরপুরে ভৈরব নদে নিখোঁজ ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার

মেহেরপুর প্রতিনিধি
ভৈরব নদের স্লুইসগেটের এই স্থানে নিখোঁজ হন কৌশিক ও তানভীর। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভৈরব নদের স্লুইসগেটের এই স্থানে নিখোঁজ হন কৌশিক ও তানভীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার রসিকপুর গ্রামে ভৈরব নদে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়াদের মধ্যে দুজন চাচাতো ভাই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার বিকেলে রসিকপুর গ্রামের ভৈরব নদের স্লুইসগেটের স্রোতের পানিতে তাঁরা নিখোঁজ হন। রাত ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে। একই সঙ্গে, পিরোজপুর গ্রামে নিখোঁজ আরেকজনের মরদেহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন মেহেরপুর সদর উপজেলার টেংরামারী গ্রামের হান্নান শেখের ছেলে ও পৌর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তানভীর হোসেন, তাঁর চাচাতো ভাই আমদহ গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কৌশিক হোসেন এবং পিরোজপুর গ্রামের জল্লাদ হোসেনের ছেলে মাহবুব হোসেন। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভৈরব নদের রসিকপুর স্লুইসগেটের সামনে প্রায়ই লোকজন গোসল করতে যায়। তানভীর ও কৌশিক সেখানে গোসল করার সময় কৌশিককে পানিতে ডুবে যেতে দেখে তানভীর তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। এ সময় দুজনই স্রোতের টানে তলিয়ে যায়। একইভাবে ভৈরব নদে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হন পিরোজপুর গ্রামের মাহবুব হোসেন।

মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ মন্ডল বলেন, স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি দল না থাকায় খুলনা থেকে ডুবুরি আনা হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে স্লুইসগেটের অদূরে ভৈরব নদ থেকে নিখোঁজ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদ্বয় জানিয়েছেন, উদ্ধার করা তিনজনের মরদেহ পরিবারের সম্মতিতে দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর থানায় অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও সহকারী নিহত

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি  
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৫৪
দূর্ঘটনাকবলিত দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ট্রাক। ছবি: আজকের পত্রিকা
দূর্ঘটনাকবলিত দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ট্রাক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের বৈলর বড় পুকুরপাড় জামে মসজিদের সামনে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৬টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহগামী সামনের একটি মালবাহী ট্রাককে পেছন দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা আরেকটি মালবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয়। এতে পেছনের ট্রাকটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই একজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরেকজনের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তিরা ধাক্কা দেওয়া ট্রাকের চালক ও তাঁর সহকারী বলে জানা গেছে। তাঁদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা সাদিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ চালাই। দুর্ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হয়েছেন। আরেকজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হলে মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাঁরা ধাক্কা দেওয়া ট্রাকের চালক ও তাঁর সহকারী।’

নিহতের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহতের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে দুজনের মরদেহ রয়েছে। তাঁদের নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্বজনেরা এলে বিস্তারিত জানা যাবে। একজনের বয়স আনুমানিক ২২ এবং অপরজনের ২০ বছর।’

দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাক দুটি সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত