Ajker Patrika

নারী শ্রমিককে ভারতে যৌনপল্লিতে বিক্রির দায়ে দুই সহকর্মীর যাবজ্জীবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১৮: ১৬
ফরিদপুর আদালত ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুর আদালত ভবন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের পাটকলের এক নারী শ্রমিককে ভারতে পাচার করে যৌনপল্লিতে বিক্রির দায়ে দুই সহকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আজ বুধবার ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত দুজন হলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বৈশাখালী গ্রামের মাকসুদা বিবি ও আটিরোপর এলাকার মর্জিনা ওরফে সোনালী। তাঁরা পলাতক রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর মায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী ও তাঁর দুই মেয়ে ফরিদপুরের কানাইপুর করিম জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁদের সহকর্মী ছিলেন মাকসুদা। সবাই একই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন বলে তাঁদের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের সুবাদে মাকসুদা শ্যামনগরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সুন্দরবন ঘুরে দেখানোর কথা বলে ২০১২ সালের ৮ মে বাদীর বড় মেয়েকে (২২) নিয়ে যান।

পরে ওই তরুণীকে ভারতের পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর মায়ের কাছে একটি ভারতীয় নম্বর থেকে ফোন আসে এবং জানানো হয়, তাঁর মেয়েকে কলকাতায় একটি পতিতাপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। একই বছরের ১৮ মে কলকাতা পুলিশ ওই যৌনপল্লিতে অভিযান চালিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। পরে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের মাধ্যমে তাঁকে বাংলাদেশে আনা হয়।

এ ঘটনায় ওই বছরের ২৯ মে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। পরে ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন। এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, কেউ মানব পাচারের মতো অপরাধ করে পার পাবেন না। তাঁকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তবে এ রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের সদস্য শামসুন্নাহার নাইম। তিনি বলেন, ‘এক যুগের বেশি সময় ধরে স্পর্শকাতর এই মামলা নিয়ে আমি কাজ করে এসেছি। মামলা পরিচালনা করার সক্ষমতা মেয়েটির পরিবারের নেই এবং আজও ভুক্তভোগী মেয়েটির বিয়ে হয়নি। আশা করেছিলাম, জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসির রায় হবে। ফাঁসি হলে আজ আমার সার্থকতা পেতাম। জড়িত আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র। বিশেষ করে, তারা বিভিন্ন মিল-কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করা নারী শ্রমিকদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। এরপর বিভিন্ন কৌশলে পাচার করে দেওয়া হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত