Ajker Patrika

চীনা প্রতারকদের ফাঁদে অতিরিক্ত সচিব: ২ চীনা নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ আগস্ট ২০২৩, ২২: ৩৭
চীনা প্রতারকদের ফাঁদে অতিরিক্ত সচিব: ২ চীনা নাগরিকসহ গ্রেপ্তার ৪

চীনা প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছেন দেশের একজন অতিরিক্ত সচিব। বিদেশি এসব প্রতারকের কাছে তিনি কয়েক ধাপে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা খুইয়েছেন। প্রতারক চক্র আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করলে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা থানায় গতকাল মঙ্গলবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করেন। এ ঘটনায় করা মামলার এক দিন পর আজ বুধবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই চীনা নাগরিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। 

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, প্রতারণার শিকার হওয়া ওই মামলার বাদী ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব। যাঁর নাম আবুল কালাম। তিনি সর্বশেষ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। বর্তমানে পিআরএলে রয়েছেন। প্রতারণার ফাঁদে পড়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে আবুল কালামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। 

তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের দক্ষিণের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে টাকা উপার্জনের ফাঁদে ফেলে দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছে এই বিদেশি চক্রটি। মানুষকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে হুন্ডির মাধ্যমে চীনে পাচার করছে। শুধু এই কাজের জন্যই চীন থেকে দুই দফায় চার ব্যক্তি দেশে এসেছিলেন। 

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমেরিকাভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আমাজন নামে প্রতারণা করত এই একমাত্র চক্রটি। আমরা তাদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছি।’ 

মামলা ও গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, মামলার বাদী ওই অতিরিক্ত সচিব এক দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমাজন নামক কোম্পানির একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান। বিজ্ঞাপনে বলা হয় দৈনিক গড়ে ১৫-২০ মিনিট অনলাইনে কাজ করার মাধ্যমে দিনে ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারেন। সেখানে আবেদন করতেই শিকদার ডায়না (দারাজ আমাজন) নামের অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত করে দেয়। 

পরে কথাবার্তার একপর্যায়ে কয়েক ধাপে বিকাশে ৪৪ হাজার, ৯৫ হাজার ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ১ লাখ ১৯৫ হাজারসহ মোট ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এসব টাকা নেওয়ার পর মামলার বাদী কাছে মূল টাকাসহ লাভের টাকা দেওয়ার জন্য অগ্রিম কর হিসেবে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০২ টাকা দিতে বলে। টাকা না দিলে মূল ও লাভের কোনোটাই দেবে না বলে জানায়। পরে বুঝতে পারেন তিনি ফাঁদে পড়েছেন। তখন গতকাল রমনা মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলা করেন। 

মামলার এক দিনের মাথায় অভিযান চালিয়ে চীনা নাগরিক ঝ্যাং সিং, ঝ্যাং ইরউয়াসহ দুই বাংলাদেশি যুবক সিয়াম চৌধুরী ও মো. আবীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁরা চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় তাঁদের কাছে থেকে ২০টি ফোন, একটি ল্যাপটপ, দুটি পাসপোর্ট জব্দ করে পুলিশ। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এ চক্রের হোতার নাম ডেং শোয়াইমিং। তিনি চায়নাতে বসে আমেরিকাভিত্তিক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আমাজন নামে ডোমেইন কিনে বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় ফেসবুকে বিজ্ঞাপন হোয়াটসঅ্যাপে চটকদার বিজ্ঞাপন দিতেন। ডেং শোয়াইমিংয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে এসে প্রতারণার করতেন গ্রেপ্তার ওই দুই চীনা নাগরিক। সঙ্গে যুক্ত করেন কয়েকজন বাংলাদেশিকে। 

পুলিশ বলছে, প্রতারণার কৌশল হিসেবে চক্রটি আমাজনে পণ্য বিক্রি করে লাভের একটা অংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখাত। এই জন্য তারা মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ নগদ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগকারী খুঁজত। কেউ বিনিয়োগ করলে সেই লেনদেনের ওপর ১০-১৫ শতাংশ কমিশন দেবে বলে লোভ দেখাত। প্রথমে ছোট অঙ্কের কিছু টাকা লাভসহ ফেরত দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করলেও পরে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে তা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করত। বারবার টাকা ফেরত চাইলে ওই ব্যক্তির নম্বর ব্লক করে রাখত। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের দক্ষিণের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার সাইফুল রহমান আজাদ বলেন, গত কয়েক মাসে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেয়েছেন। যাঁরা প্রত্যেকেই ৫-১০ লাখ টাকা করে প্রতারণা শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘আরওয়ানফাইভ থাকলে আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন না, আপনাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে চলে যেতাম’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরিফুল ইসলামকে (ডানে) সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরিফুল ইসলামকে (ডানে) সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘স্যার, আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন, আমাকে তো গ্রেপ্তার করার কথা না’—গ্রেপ্তারের সময় এভাবে র‍্যাবকে প্রশ্ন করেন ফরিদপুরের আলোচিত ডন শরিফ খ্যাত শরিফুল ইসলাম (৩৮)। র‍্যাব জানায়, অপরাধ জগতে তাঁর এতটাই দক্ষতা যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করবে কখনো প্রত্যাশা করেননি এবং গ্রেপ্তারের সময় তিনি নিজেই অবাক হয়ে যান। একপর্যায়ে বলেন, ‘আমার ছোট ভুল হয়েছে, আরওয়ানফাইভ মোটরসাইকেল থাকলে আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন না, আপনাদের ওপর দিয়ে চালিয়ে চলে যেতাম।’

আজ শনিবার দুপুরে ফরিদপুর র‍্যাব ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে শরিফুলকে গ্রেপ্তারের বর্ণনা দেন র‍্যাব-১০-এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহম্মাদ কামরুজ্জামান। এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফরিদপুরের সালথা উপজেলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন র‍্যাব সদস্যরা। তিনি শহরের কবিরপুর এলাকার মৃত ফারুক শেখের ছেলে।   

এ ছাড়া রায়হান মোল্যা (২৫) নামে তাঁর এক সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় দেড় কেজি গাঁজা ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি খেলনা পিস্তল (র‍্যাবের ভাষ্য), সুইচ গিয়ার, ক্ষুর, কাঁচি ও একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত আরওয়ানফাইভ ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। র‍্যাব জানায়, এটিও সম্প্রতি পাবনা জেলা থেকে ক্রয়ের নামে ট্রায়াল দেওয়ার সময় পালিয়ে নিয়ে আসেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ২১ অক্টোবর শহরের উত্তর শোভারামপুরে এক গৃহবধূকে পিস্তল ঠেকিয়ে কানের দুল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার একটি সিসিটিভির ক্যামেরার দৃশ্যে ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হলে ছায়াতদন্ত শুরু করে র‍্যাব। তিনি বারবার তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি (শরিফ) অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে একটি মাদক মামলার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পুলিশের খাতায় নাম আসে শরিফুলের। এর পর থেকে অপরাধ সাম্রাজ্যে জড়িয়ে পড়েন তিনি। মাদক কারবার, খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এসব ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আটটি মামলাসহ ১০টি মামলা রয়েছে তাঁর নামে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত চারবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।

র‍্যাবের ও তৎকালীন তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহরের ঝিলটুলী এলাকায় ভোরে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স অরুনিমা ভৌমিক। ওই দিন ভোরে ডিউটি শেষে রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন অরুনিমা, তখন শরিফুলসহ দুজন ছিনতাইকারীরা তাঁর হাতে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। তখন রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্য ফুটে ওঠে এবং ব্যাপক আলোচিত হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে তাঁকেসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, অরুনিমা হত্যা মামলায় দুই বছরের মধ্যেই শরিফুল জামিনে বের হয়ে আসেন এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালেও আরেক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এরপর গত দুই বছর নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন শরিফুল। তাঁকে থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাতভর বৃষ্টিতে তলিয়েছে আমন ধান-সবজির খেত, দুশ্চিন্তায় কৃষক

মান্দা ও নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রবল বৃষ্টিতে নিয়ামতপুরে মাঠের আমন ধান নুয়ে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রবল বৃষ্টিতে নিয়ামতপুরে মাঠের আমন ধান নুয়ে পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলায় রাতভর ভারী বৃষ্টিপাতে ধান ও সবজির খেত ডুবে গেছে। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এতে কৃষক ও মাছচাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

নিয়ামতপুরে গতকাল শুক্রবার রাতভর ভারী বৃষ্টিতে মাঠের প্রায় ২৫ শতাংশ ধান জমিতে নুয়ে পড়েছে এবং প্রায় ১৫ শতাংশ জমির ধান ডুবে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় ধান কাটা শুরু হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে ধান কাটার কথা ছিল। হঠাৎ ভারী বৃষ্টির কারণে ফসলের খেত তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক।

উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ জমির ধান পানিতে ভাসছে। টানা বৃষ্টিতে নিয়ামতপুর উপজেলায় পুকুর-খাল-বিলের পানি উপচেও অনেক খেত ডুবে গেছে।

উপজেলার ভাবিচা গ্রামের ধনঞ্জয় মহন্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১২ বিঘা জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। এমন দুঃসময়েও কৃষি অফিস খোঁজখবর নিতে আসেনি।’

একই এলাকার আপেল, সবুজ, মামুনসহ অনেক কৃষক বলেন, ঋণ ও নিজের জমানো টাকা খরচ করে আমনের আবাদ করা হয়েছে। আমনের ফসল পানিতে টলটল করছে। সরকারি সহযোগিতা না পেলে পথে বসতে হবে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, ‘গত রাতের ভারী বৃষ্টিপাতে উপজেলা বিভিন্ন মাঠের ধান পড়ে গেছে এবং নিচু এলাকার ধান ডুবে গেছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ জরিপ করছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য।’

পানিতে ডুবে আছে ফুলকপির খেত। মান্দার হাজী গোবিন্দপুর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানিতে ডুবে আছে ফুলকপির খেত। মান্দার হাজী গোবিন্দপুর থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মান্দায় আমনসহ সবজিখেতের ব্যাপক ক্ষতি:

মান্দা উপজেলায় গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ সকাল পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাতে ধানখেত তলিয়ে গেছে। সরিষা, ফুলকপি, আলু, পেঁয়াজের বীজতলা, গাজর ও অন্য সবজির জমিগুলো ডুবে গেছে। এতে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

কৃষকেরা বলছেন, কার্তিক মাসের শুরুর দিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় তাঁরা জমিতে হালচাষ দিয়ে ফসল রোপণের প্রস্তুতি নেন। এরই মধ্যে জমিতে সরিষা, আলু, ফুলকপি, গাজর, মুলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়েছে। পেঁয়াজের বীজতলাসহ মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন অনেকে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় অনেক ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। জমিতে নুয়ে পড়েছে আধা পাকা আমন ধান। এরই মধ্যে মাঠের নিচু এলাকার আমনখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

আজ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমন ধানের খেতসহ সরিষা ও বিভিন্ন শীতকালীন সবজির খেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলার হাজী গোবিন্দপুর, গাইহানা কৃষ্ণপুর, চককানু, নবগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে আলু, ফুলকপি, পেঁয়াজ, ক্ষীরাসহ নানা সবজির খেত পানিতে ডুবে রয়েছে। কিছু স্থানে পেঁয়াজের বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে।

এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক অমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘২৫-৩০ বছরেও কার্তিক মাসে এত বৃষ্টি দেখিনি। প্রবল বৃষ্টিতে আমার কয়েক বিঘা জমির আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।’ পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘ধান সবে পাকতে শুরু করেছিল। এখন গাছ নুয়ে পড়ে পানির নিচে গেছে। বোরোতে ক্ষতির পর এবারও লোকসান গুনতে হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে আমন ধান ও সবজিখেতের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিনদুপুরে দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

রায়পুরা (নরসিংদী)প্রতিনিধি
নিহতদের বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিহতদের বাড়িতে স্বজন ও স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর রায়পুরায় পারিবারিক জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে চাচা ও চাচাতো ভাইবোনদের বিরুদ্ধে। আজ শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের চরসুবুদ্ধি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন চরসুবুদ্ধি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ফুরা মিয়া (৪০) ও শাকিল মিয়া (৩০)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ।

পুলিশ ও নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওই গ্রামের আবু তাহেরের সঙ্গে তার ভাই আউয়ালের পারিবারিকভাবে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে।। শনিবার সকালে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে আউয়াল, তাঁর ছেলে শিপন ও রিপন, মেয়ে শাহানা, আজিনা, আছমা, সুমাইয়াসহ ১০-১২ জন দা ও লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষ পরিবারের ফুরা মিয়াদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় ফুরা মিয়া, তাঁর ভাই শাকিল ও পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফুরা মিয়া ও শাকিলসহ চারজনকে গুরুতর আহত করেন। স্থানীয়রা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ফুরা মিয়া ও শাকিলকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় মনিরা বেগম নামের এক নারী নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ফরিদা গুলশান আরা জানান, বেলা পৌনে ১টার দিকে আহতদের হাসপাতালে আনা হলে ফুরা মিয়া ও শাকিল নামের দুজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এখন পর্যন্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের আটকে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারায়ণগঞ্জে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাজায় যুবলীগ নেতা

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি 
যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত
যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত

৩ ঘণ্টার প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি।

শনিবার (১ নভেম্বর) জোহর নামাজের পর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনের একটি মাদ্রাসায় জানাজা হয়।

এর আগে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মতিউর রহমানের স্ত্রী রোকেয়া মারা যান।

স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মতি। এ সময় উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি তাঁর স্ত্রীর দোষগুণ ভুলে ক্ষমার আবেদন করেন। অঝোরে কেঁদে মতি বলেন, ‘আমি ১০ মাস ধরে কারাগারে রয়েছি। এর ভেতর গতকাল আমার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সঙ্গে আমি ৩২ বছরের সংসার জীবন কাটিয়েছি। তিনি সব সময় আমাকে আগলে রেখেছেন।’  

যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত
যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি। ছবি: সংগৃহীত

মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য যে আমার বড় ভাই যখন মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখনো আমি কারাগারে ছিলাম। আজকের মতো তখনো আমার অনুপস্থিতিতে আপনারা সবাই সবকিছু করেছিলেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার স্ত্রী যদি চলার পথে আপনাদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ; কিংবা ভুল করে থাকেন আমি তাঁর হয়ে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই। তাঁর জন্য দোয়া করবেন। আমি তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পেড়েছি, এটাই আমার জন্য অনেক।’  

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, বেলা ১টা থেকে বিকেল ৪ পর্যন্ত মতিউর রহমান মতিকে কারা কর্তৃপক্ষ প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে।

উল্লেখ্য, এ বছরের ১২ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মতি ও তাঁর ছেলে বাবুইকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা-পুলিশ। এরপর তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হলে মতির ছেলে বাবুই জামিনে মুক্তি পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত