Ajker Patrika

পুরান ঢাকাকে আধুনিক করার নতুন ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পুরান ঢাকাকে আধুনিক করার নতুন ভাবনা

রাজধানীর পুরান ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত অনেক ভবনই শতাধিক বছরের পুরোনো। জরাজীর্ণ দালানের পাশাপাশি উন্নত নয় যোগাযোগ ব্যবস্থাও। এসব নাগরিক সমস্যার সমাধান করে শিগগিরই নতুন শহরের আদলে সাজানো হবে পুরান ঢাকাকে। এ লক্ষ্যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর সমাধানের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। 

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও পুনঃ উন্নয়ন শীর্ষক সেমিনারে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। ঢাকায় কর্মরত সেবা খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) সেমিনারটি আয়োজন করে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে পুরান ঢাকায় ছোট ছোট ত্রুটিপূর্ণভাবে স্থাপনা নির্মাণ করায় পর্যাপ্ত রাস্তা, পার্ক ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া নিচু জায়গায় ভবন নির্মাণ করায় এবং রাস্তাসমূহ পর্যাপ্ত প্রশস্ত না হওয়ায় সেসব রাস্তা ও জায়গা অনুন্নত থেকে যাচ্ছে। এর বাইরে পুরান ঢাকার মূল সমস্যার মধ্যে অকার্যকর রোড নেটওয়ার্ক, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ, ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত নাগরিক উন্মুক্ত স্থান, উচ্চ ঘনত্বের জনসংখ্যা, নিম্নমানের জীবনযাত্রা অন্যতম। 

অপরিকল্পিত, ঘনবসতিপূর্ণ, অপ্রতুল নাগরিক সুবিধাদি সম্পন্ন এই এলাকার বাসিন্দাদের চাহিদা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন একটি পরিকল্পিত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে প্রবন্ধে প্রস্তাব করা হয়। নগর পুনঃ উন্নয়নের জন্য পুরোনো জরাজীর্ণ ভবন অপসারণ করে ব্লকভিত্তিক নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। এর মাধ্যমে ভূমির যথাযথ উন্নয়নে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা তৈরি যাবে। যেখানে পার্ক, খেলার মাঠ, নাগরিক সুবিধাদি, প্রশস্ত রাস্তা প্রভৃতির সংস্থান করা যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে হেরিটেজ হিসেবে বা অন্যান্য দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু স্থাপনা সংরক্ষণও করা যেতে পারে। 

পুরান ঢাকাকে নতুন করে সাজাতে রাজউক প্রণীত খসড়া আরবান রিডেভেলপমেন্ট (নগর পুনঃ উন্নয়ন) প্রকল্প দ্রুত চূড়ান্ত করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রবন্ধে বলা হয়, পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন ও বকশি বাজার-চকবাজার রোড পুরোনো ঢাকার অন্যতম দুইটি প্রবেশদ্বার। রাজউক কর্তৃক প্রণীত ড্যাপে এ দুটি রাস্তাকে ৬০ ফুট প্রশস্তকরণের প্রস্তাবনা আছে। প্রকল্প ফলপ্রসূ করার জন্য রাস্তা দুটিকে জরুরি ভিত্তিতে প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া সুবিধাজনক স্থান চিহ্নিত করে প্রকল্প চলাকালে প্রকল্পভুক্ত নাগরিকদের অন্তর্বর্তীকালীন আবাসন ব্যবস্থা প্রকল্পের আওতায় নিশ্চিত করতে হবে। 

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় বক্তারা বলেন, পুনঃ উন্নয়ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই ঐতিহ্য ধরে রেখেই পুরান ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কাজ করতে হবে। 

বিআইপির সাবেক সভাপতি আকতার মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের এখানে ঐতিহ্যের কোনো সঠিক সংজ্ঞা নেই, এটি খুব হতাশার।’ 

আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বলেন, ‘একদিকে ঐতিহ্যের কথা বলা হচ্ছে, অন্যদিকে জরাজীর্ণ ভবনের কথা বলা হচ্ছে। জরাজীর্ণ ভবনের কথা বলে করোনার সময় অনেক ঐতিহ্যবাহী ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, পুরান ঢাকায় প্রধান সমস্যা যানজট। তাই এই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ জরুরি। 

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় নগর-পরিকল্পনা বিভাগের অ্যালামনাই আয়েশা সাঈদ বলেন, পুরান ঢাকাকে পরিবর্তন করতে হলে শুরুতেই কমিউনিটিকে এক করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। 

ডুরার সভাপতি রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধের ওপর আরও আলোচনা করেন শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চের নির্বাহী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবু সাদেক এবং হেরিটেজ বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত