Ajker Patrika

মিটফোর্ড এলাকায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর ৩ নেতা বহিষ্কার

ব্যবসা দখল করতে যুবককে পিটিয়ে মারেন যুবদল নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ০১: ০২
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এক যুবকের অর্ধমৃত দেহ পড়ে আছে। ৫-৬ যুবক তাঁকে ইট দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করছে। এতেই শেষ নয়। রক্তাক্ত মৃতদেহটি টেনে রাস্তায় নিয়ে শরীরে আঘাত করা হচ্ছে। কেউ কেউ লাফাচ্ছে বুকের ওপর।

অর্ধশতাধিক মানুষ এই ভয়ংকর নির্মম ঘটনার দৃশ্য দাঁড়িয়ে দেখলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন দুটি ভিডিও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই নৃশংসভাবে খুন করা হয় ওই যুবককে।

প্রকাশ্যে এই নির্মম হত্যার ঘটনা ঘটে গত বুধবার সন্ধ্যায়। নিহত লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগের বোন মামলা করার পর গত দুই দিনে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও র‍্যাব আসামিদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মো. সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। তিনি ও হামলাকারীরা উভয়েই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। স্থানীয় লোকজন ও পরিবার বলছে, ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ থেকে হত্যা করা হয় মো. সোহাগকে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহাগ মিটফোর্ড রোডের ৪নং রজনী বোস লেনের ভাঙারিপট্টির সোহানা মেটালের মালিক ছিলেন। তিনি পুরোনো অ্যালুমিনিয়াম শিট, তামা, পিতল, দস্তা, সিসাসহ ভাঙারিসামগ্রী কেনাবেচা করেন। এই ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে পূর্বপরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব চলছিল। তারই মীমাংসা করতে গিয়ে বুধবার বিকেলে সোহাগকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়।

নিহত সোহাগের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম বলেন, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে রজনী বোস লেন এলাকায় ভাঙারি পণ্য বেচাকেনা করতেন। ৪-৫ বছর আগে তিনি নিজে দোকান দেন। ব্যবসা বড় ও লাভজনক হয়ে উঠলে কিছুদিন আগে অর্ধেক ভাগ দাবি করেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মাহমুদুল হাসান মহিন, কিন্তু সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁকে গত কয়েক দিন হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। হত্যার আগের রাতে তাঁর দোকানে গুলিও করা হয়।

রজনী বোস লেনের ভাঙারিপট্টির অন্য একটি দোকানের কর্মচারীও ব্যবসা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা বললেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সোহাগ অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবসা করতেন। সেই ব্যবসার পার্সেন্টেজের ভাগাভাগি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। এ কারণে সোহাগকে খুন করা হয়েছে। দুই পক্ষই বিএনপির রাজনীতি করে।’

স্থানীয় এক দোকানি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারা সবাই এখানকার। সোহাগ নিজেও বিএনপির রাজনীতি করত। তার পরিচিত লোকজনই এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।’

এই ঘটনায় ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নাম এবং অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহত সোহাগের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম। মামলার এজাহারে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কথা জানিয়ে বলা হয়, এর জেরে প্রতিপক্ষ সোহাগের গুদামে তালা মেরে দিয়েছিল। বুধবার সন্ধ্যায় তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দোকানে ঢুকে সোহাগকে মারতে মারতে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের ভেতরে নিয়ে যায়। বিশদ বর্ণনা দিয়ে এজাহারে বলা হয়, সেখানে সোহাগকে নানাভাবে আঘাত করে হত্যা করা হয়।

মামলার আসামিদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিন (২২) ছাড়াও রয়েছেন সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবাহ করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজ্জব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

পুলিশ ও র‍্যাব গত দুই দিনে মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, মনির ও আলমগীর নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল আদালতের মাধ্যমে মহিনকে পাঁচ দিন ও রবিনকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, নিহত মো. সোহাগকে গতকাল বরগুনায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

যুবদল থেকে বহিষ্কার দুজন

গতকাল জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সোহাগ হত্যা মামলার আসামি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকীর প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এদিকে মামলার আসামী কালু ওরফে ‘স্বেচ্ছাসেবক কালুর’ প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলসহ তাকে দল থেকে আজীবন বহিস্কার করা হয়েছে। গতকাল স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারা দেশে আরও ১০ দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

‘আজ বুঝলাম, সময়ের কাছে মানুষ কত অসহায়’—মৃত্যুর আগে স্ট্যাটাস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

রামদা হাতে ভাইরাল সেই সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

জগন্নাথপুরে এসএসসিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রাইদা হতে চায় চিকিৎসক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত