Ajker Patrika

বরেন্দ্রভূমিতে অভিযাত্রীদের মিলনমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৫
বরেন্দ্রভূমিতে অভিযাত্রীদের মিলনমেলা

অনুষ্ঠানের নাম ‘ব্যাকপ্যাক’। মিলনায়তন ভর্তি মানুষ। সবাই অভিযাত্রী। কেউ ছুটে বেড়ান পাহাড়-পর্বতে, কেউ ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু। নিজ নিজ অভিজ্ঞতার গল্প শোনাতে আজ শনিবার দেশের সব বরেণ্য অভিযাত্রীরা এক ছাদের নিচে হয়েছিলেন বরেন্দ্রভূমির রাজশাহীতে। 

ট্যুর মুরল্যান্ড নামের একটি সংগঠন তাদের এক যুগ পূর্তিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান মিলনায়তনে এ আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সঞ্চালক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ইউসুফ আলী বললেন, যারা ভ্রমণ করেন তাদের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কোনো কথা নেই। সবাই বন্ধু। তাই অনুষ্ঠানে সবাই অতিথি। কে আগে, কে পরে বক্তব্য দেবেন—এমন কোনো বিষয় নেই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অতিথিদের অভিজ্ঞতা বিনিময় চলে এভাবেই। 

শুরুতেই ট্যুর মুরল্যান্ড নিয়ে দেখানো হলো একটি প্রামাণ্যচিত্র। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমানের হাত ধরে ২০১১ সালে কীভাবে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা হলো এবং এরপর দেশ-বিদেশে এর সদস্যরা কতগুলো অভিযান করলেন সবই দেখানো হলো এতে। 

এরপর বক্তব্য নিয়ে এলেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক এবং সুমেরু ও অ্যান্টার্কটিকা অভিযাত্রী ইনাম আল হক। বলেন, ভ্রমণের বড় অসুবিধা হলো—যে এলাকায় বেশি ভ্রমণ হয় সেই এলাকার সবকিছু নষ্ট হয়। স্থাপনা, প্রাণী, উদ্ভিদ, মানুষও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা শূন্যে নামানো যাবে না। কিন্তু যারা ভ্রমণে যাবেন তারা যেন এটা মনে করে যান যে, ক্ষতিগুলো সেগুলো সবচেয়ে কমিয়ে রাখবেন। 

নানা আয়োজনে ট্যুর মুরল্যান্ডের এক যুগ পূর্তি উদযাপন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কথা বললেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মামুন হুসাইন। বললেন, ‘বাংলাদেশ এত অপরূপ একটা দেশ-আপনি একেবারে খালি হাতে ভ্রমণ করতে পারেন। মানুষ আপনাকে ভালোবাসার যে শক্তি সেটি কিন্তু আমার-আপনার সামনে চলে আসে। ভ্রমণ করলে মনে হয়, পুরো পৃথিবীই একটা গৃহ। আমরা সেই গৃহ খুঁজে বেড়াই।’ 

দুইবার এভারেস্ট আরোহণকারী একমাত্র বাংলাদেশি এম এ মুহিত বলেন, ‘আমরা চাই, এমন কোনো দুর্গম জায়গা থাকবে না যেখানে বাংলাদেশের মানুষের পা পড়বে না। কিন্তু প্রকৃতির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। প্রকৃতি ভালো না থাকলে আমি ভালো থাকব না। তাই যেখানে যাব, সেখানে অপচনশীল কোনো কিছু কোথাও ফেলা যাবে না। পরিবেশটা ঠিক রাখতে হবে।’ 

ট্যুর মুরল্যান্ডের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাপর্বতারোহী, আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র গবেষক মীর শামসুল আলম বাবু বলেন, ‘ভ্রমণ করলে নিজেকে আবিষ্কার করা যায়। নিজের সক্ষমতা-অক্ষমতা বোঝা যায়। তাই মানুষের জীবনের জন্য ভ্রমণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ বিশ্ব পরিব্রাজক ও সুমেরু অভিযাত্রী তারেক অণু বলেন, ‘ভ্রমণের জন্য চাই ইচ্ছাশক্তি। একজন রিকশাচালক দেশের সব শহর দেখবেন বলে সেই শহরে গিয়ে রিকশা চালান। এই ভ্রমণের জন্য ইচ্ছাশক্তি প্রয়োজন। অর্থ অনেক পরে।’ 

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে বড় অবদান রাখা সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম বলেন, ‘যারা সাগরে, নদীতে, পাহাড়ে-পর্বতে ঘুরে বেড়ান, তাদের আজ মিলনমেলা বসেছে। ভ্রমণ হলো লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটা চেষ্টা। এখান থেকেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর মনোবল পাওয়া যায়।’ 

মোটর সাইক্লিস্ট ও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে খারদুংলা জয়ী বাইকার আবদুল মোমেন রোহিত তাঁর দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প শোনান। শারীরিক সমস্যায় শরীরচর্চার অংশ হিসেবে সাঁতার শিখতে গিয়ে কীভাবে সাঁতারু হয়ে উঠলেন সেই গল্প শোনালেন বাংলা চ্যানেল বিজয়ী ডা. সাকলায়েন রাসেল। ‘নারীর চোখে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন ভ্রমণ কন্যা’র সভাপতি ডা. সাকিরা হক। বাইকে ভ্রমণ কন্যাদের সারা দেশ ভ্রমণের গল্পও শোনান তিনি। 

ভ্রমণ কন্যা সাকিরা হকের সঙ্গে এসেছিলেন আইরিশ অভিযাত্রী মিস জেসিকা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ খুবই সুন্দর দেশ। ঢাকার পরে দ্বিতীয় স্থান হিসেবে রাজশাহী এসেছি। এই শহর অনেক সুন্দর।’ অনুষ্ঠানে পায়ে হেঁটে ৬৪ দিনে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করা ডা. বাবর আলী নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ‘পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা’ শীর্ষক তিনিও একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন। 

ট্যুর মুরল্যান্ডের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকাভ্রমণ লেখক কালপুরুষ অপু কথা বলেন ভ্রমণের উপকারিতা নিয়ে, পর্বতারোহী কাওছার রূপক আর সালেহীন আরশাদীও তাদের পর্বত আরোহণের দুঃসাহসিক অভিযানের বর্ণনা দেন। অনুষ্ঠানে পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল, আ. ন. ম জাফর সাদেক, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, ট্রেকার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, বাংলা চ্যানেল বিজয়ী আরেক সাঁতারু ডা. জ্যানজিবুল তারেকসহ দেশ বরেণ্য আরও অনেক অভিযাত্রী উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে ট্যুর মুরল্যান্ডের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে মিলনায়তনের সামনের শহীদ মিনার চত্বরে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে আয়োজনের উদ্বোধন করেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী। পরে সংগঠনের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে কেক কাটা হয়। এরপরই সকালের মিষ্টি রোদে দাঁড়িয়ে দেশবরেণ্য অভিযাত্রীরা একে-অপরের সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন, ছবি তোলেন। বিকেলে এই অভিযাত্রীদের রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌভ্রমণ, আর রাতে শহরের আলোকায়ন ঘুরে দেখার কথা ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত