Ajker Patrika

ঘুড়ি বেচে প্রাইভেট পড়ার খরচ চালায় সপ্তম শ্রেণির জয়

এম শহিদুল ইসলাম
আপডেট : ৩০ জুন ২০২১, ২২: ৫৬
ঘুড়ি বেচে প্রাইভেট পড়ার খরচ চালায় সপ্তম শ্রেণির জয়

বাসাইল (টাঙ্গাইল) : শুভ হোসেন জয়, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের আইসড়া গ্রামের অটোরিকশা চালক বাবুল হোসেনের ছেলে। মা জিয়াসমিন আক্তার একজন গৃহিণী। জয় গ্রামের আইসড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শুভ সবার ছোট। তার বড় দুই বোন শিফা আক্তার ও স্বপ্না আক্তার। শিফা দশম ও স্বপ্না অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।  

জয় ঘুড়ি তৈরি করতে পছন্দ করে। ঘুড়ি বিক্রি করে প্রাইভেট পড়ার খরচ জোগায় সে। তার স্বপ্ন– লেখাপড়া করে ইঞ্জিনিয়ার হবে।  

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। লেখাপড়া এমনকি নাওয়া-খাওয়া পর্যন্ত ভুলে ইন্টারনেটে  ভিডিও এবং মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ছে ।

সমবয়সী সহপাঠীরা যখন মোবাইলে গেমস খেলায় মত্ত, তখন পড়ার টেবিলে পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে সখ্য শুভর। নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময়ে বাঁশের কাঠি আর রং-বেরংয়ের পলিথিন দিয়ে তৈরি করে ঘুড়ি। বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বানিয়ে শিশু–কিশোরদের মাঝে বিক্রি করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করছে সে। আবার এ টাকা খরচ না করে মায়ের কাছে জমা করে।

জয় জানায়, প্রতিটি ঘুড়ি বানাতে খরচ হয় ৫০ টাকা। বিক্রি হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা।জয় আজকের পত্রিকাকে বলে, আমার বাবা একজন গরিব মানুষ। অটো চালিয়ে আমাদের সংসারের খরচ বহন করে। তিন ভাই-বোনের লেখা পড়ার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হয়। অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নাই। অনলাইনে ক্লাস করতে পারি না। তাই সিলেবাস ধরে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিনই শেষ করি। স্কুল বন্ধ থাকায় স্কুলে যেতে হয় না। আমার সহপাঠীরা যখন মোবাইলে গেমস খেলে, তখন আমি ঘুড্ডি বানাই। মোবাইলে গেম খেলার চেয়ে ঘুড্ডি বানাতেই আনন্দ পাই। প্রতিদিন ৬-৭টি ঘুড্ডি বানাতে পারি। প্রতিটি ঘুড্ডি বানাতে ৫০ টাকার মতো খরচ হয়। কোনটা ১০০ টাকা আবার কোনোটা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা টাকা বিক্রি করি।

ঘুড্ডি বানানোর কাজে দশম ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার দুই বোন শিফা ও স্বপ্না তাকে সহযোগিতা করে বলেও জানায় জয়। তার স্বপ্ন বড় হয়ে সে ইঞ্জিনিয়ার হবে।

জয়ের বোন শিফা ও স্বপ্না বলেন, আমরা দুই বোন, এক ভাই। সব সময় বন্ধুর মতই থাকি। আমার ভাই জয় বিভিন্ন ধরনের ঘুড্ডি বানাতে পছন্দ করে। তার বানানো ঘুড্ডির চাহিদা অনেক। লেখাপড়ার পাশাপাশি আমরাও তাকে এ কাজে সাহায্য করি। 

জয়ের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, আমার এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে মেয়েরা নিজ ইচ্ছাই লেখাপড়া করে। আল্লাহর রহমতে ছাত্রও ভালো। কখনো লেখাপড়া করার জন্য তাগাদা দিতে হয় না। দেখা যায় রাস্তা ঘাটে, দোকানপাটে, বাঁশতলায়, গাছতলায় অন্যান্য ছেলেরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে মোবাইল গেমসহ নানা খেলায় ব্যস্ত থাকে। অভিভাবকেরা তাদের ছেলেদের নিয়ে অনেক চিন্তিত। আল্লাহ রহমতে আমার ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি সুখী। আমার রোজগার দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। ঠিকমতো প্রাইভেট পড়ার খরচ দিতে পারি না। ছেলেই ঘুড্ডি বানিয়ে বেঁচে খরচ চালায়। স্কুল বন্ধ থাকলেও আমার ছেলে কোন বাজে নেশা নেই। আমি গর্বিত আমার ছেলেকে নিয়ে। আমার ছেলেমেয়ের জন্য দোয়া করবেন। 

ঘুড়ি বিক্রির টাকা মার হাতে তুলে দেয় শুভ হোসেন জয়।শুভর মা জিয়াসমিন আক্তার বলেন, আমার ছেলে কখনো টাকার জন্য বায়না করে না। হঠাৎ যদি কিছু খেতে ইচ্ছে করে, মাত্র পাঁচ টাকা চেয়ে নেয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ২-৩ মাস ধরে কাগজ কিনে ঘুড্ডি বানায়। ওর অনেক বন্ধুরা ওর কাছ থেকে ঘুড্ডি কিনে নেয়। আবার মাঝে মধ্যে হাটে নিয়েও বিক্রি করে। ঘুড্ডি বিক্রির টাকা ওর কাছে না রেখে আমার কাছে জমা দেয়। 

জয়ের শিক্ষক সৈয়দ জামান বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সহপাঠীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল গেমসের আড্ডায় না জড়িয়ে তার কর্মস্পৃহা সত্যিই প্রশংসনীয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা

কক্সবাজারে যাওয়ার পথে ২৩ মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

নিহত ১১, আহত ৫০, ভারতের সেই মাঠ থেকে সরে যেতে পারে বিশ্বকাপ

এক টন কয়লাও ইসরায়েলে যাবে না, নির্দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত