Ajker Patrika

ঈদযাত্রা: ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যে চিত্র আগে কেউ দেখেনি

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
Thumbnail image

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ঢাকা-আরিচা ও পাটুরিয়া মহাসড়ক। ঈদের কয়েক দিন আগে ও পরে এই মহাসড়কে থাকত দুর্বিষহ যানজট, ফেরিঘাট এলাকায় মানুষের জটলা, অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী নিয়ে বাসে হুড়োহুড়ি এবং দুর্ঘটনার লম্বা তালিকা। কিন্তু এবারের ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এসবের কিছুই নেই। লঞ্চ ও ফেরিগুলো অনেকটা ফাঁকা জায়গা রেখে নদীতে চলাচল করছে। 

সরেজমিনে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈদ উপলক্ষে মানুষের ভিড় আর যানজটের পরিবর্তে অনেকটা সুনসান ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। ১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর এমন চিত্র এখানে আগে কেউ দেখেনি। 

মহাসড়কের বানিয়াজুরী, মানিকগঞ্জ, বরংগাইল স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, অল্প দূরত্বের যাত্রীরা অটোরিকশা-লেগুনা এবং বেশি দূরত্বের যাত্রীরা নিজেদের প্রয়োজন মতো প্রাইভেটকার-বাসে যাতায়াত করছেন। আঞ্চলিক বাসগুলো যাত্রীভর্তি নিয়ে চলাচল করছে। 

স্থানীয় লোকজন জানান, ৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ চলাচল করতেন। ১৯৯৮ সালে যান চলাচলের জন্য টাঙ্গাইল অংশে যমুনা সেতু হয়। তখন এই মহাসড়কের ২০ শতাংশ যানবাহন চলাচল কমে যায়। গত বছর পদ্মা সেতু চালু হয়। মূলত এরপর থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল কমে যায়। বর্তমানে শুধুমাত্র ফরিদপুর, পাবনার কিছু অংশ, যশোর, রাজবাড়ি, মাগুরাসহ কয়েকটি জেলার মানুষ ব্যবহার করছেন এই মহাসড়ক। 

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকাবিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খালেদ নেওয়াজ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া ও আরিচা থেকে কাজীরহাট নৌপথ হয়ে নদী পার হয়েছে ৫৭৭টি যাত্রীবাহী বাস, ৮৬২টি মালবাহী ট্রাক, ১ হাজার ৫৩১টি প্রাইভেট কার ও ২ হাজার ৫০০ মোটরসাইকেল। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে এই সংখ্যা ছিল কয়েকগুণ বেশি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপার কমে গেছে। 

আরিচা ঘাটের প্রবীণ ব্যবসায়ী রথীন সাহা বলেন, ‘গাবতলী থেকে আরিচা পর্যন্ত ২২টি স্টেশন, ফেরি ও লঞ্চঘাট এলাকা থাকত সরব। এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীরাই ছিল এসব স্টেশনের কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক দোকানদারের রোজগারের ভরসা। এখন তো মহাসড়কের ঐতিহ্য খর্ব হয়ে যাচ্ছে।’ 

চাকরির কারণে মানিকগঞ্জে থাকেন বরিশালের মুলাদি এলাকার আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন,   ‘আগে ঢাকা-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে বাড়িতে আসা-যাওয়া করতাম। আজ সপরিবারে পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।’ 

মহাসড়কের বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডের মুদি দোকানি ইদ্রীস আলী বলেন, ‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এখন আর আগের মতো নাই। আমি ৩০ বছরেও এই মহাসড়কের এমন দৃশ্য দেখিনি। অল্প যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে কিছু বাস ও প্রাইভেটকার। গাড়ি কম, যাত্রী কম তাই বেচাকেনাও অর্ধেকে নেমে এসেছে।’ 

মহাসড়কের তরা বাসস্ট্যান্ডের চা দোকানি আব্দুর রহমান বলেন, ‘আগে রাতভর দূর পাল্লার বাস-ট্রাক এখানে থামতো। অনেক বেচাকেনা হতো। পদ্মা সেতু হওয়ায় যানবাহন চলে চার ভাগের এক ভাগ। এখন তো ফাঁকা মহাসড়ক।’ 

বরংগাইল বাসস্টেশনে কথা হয় নাজনীন আক্তার নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে ঢাকা থেকে ঘিওর যাচ্ছেন তিনি। নাজনীন বলেন, ‘নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে জনপ্রতি পঞ্চাশ টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে যাচ্ছি। তবে পথে কোনো যানজট পাইনি।’ 

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। ছবি: আজকের পত্রিকাদুর্ঘটনা প্রতিরোধ বিষয়ক সংগঠন তারেক মাসুদ-মিশুক স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন আনসারি বলেন, ‘বহুল আলোচিত-সমালোচিত এই মহাসড়কটি ক্রমান্বয়ে ঐতিহ্য হারাচ্ছে। নির্বিঘ্ন যাত্রার বড় আশঙ্কা এখন মোটরসাইকেল, রিকশা, তিন চাকার যানের অবাধ চলাচল। যা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় আরেকটি সেতু হলে এই মহাসড়কটি ফের সচল হবে।’ 

মো. লোকমান মিয়া নামের এক মিনিবাস চালক বলেন, ‘মহাসড়কে চলাচল করত দূরপাল্লা ও বিভিন্ন রুটের বাস-ট্রাক। এখন পরিবহন কমে গেছে। তাই যানজট ও গাড়ির চাপ অর্ধেকের কম। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ইনকাম কমে গেছে।’ 

এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো বলে জানান ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোথাও কোনো যানজট নেই। মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সদস্যরা রয়েছেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে মহাসড়কের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত