Ajker Patrika

গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ড: এখনো গ্রেপ্তার হয়নি কেউ, উত্তেজনা-উদ্বেগ বাড়ছে

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৩৯
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার এই জায়গাতেই সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার এই জায়গাতেই সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় এক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক ও জনসাধারণের মধ্যে বিরাজ করছে অসন্তোষ ও উদ্বেগ। নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) ছিলেন দৈনিক প্রতিদিনের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার। তিনি গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তানের সঙ্গে বসবাস করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় মসজিদ মার্কেটে সাংবাদিক তুহিনের অফিস রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তার অফিসের নিচে এক নারীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে কতিপয় সন্ত্রাসী বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং তাঁকে তাড়া করে। সাংবাদিক তুহিন তখন এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি সন্ত্রাসীরা দেখে ফেললে তারা তুহিনকেও তাড়া করে। একপর্যায়ে তুহিন তাঁর অফিসের নিচে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে সেখান থেকে টেনে বাইরে এনে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

পরে পুলিশ আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে। এর একটি ফুটেজে দেখা যায়, মসজিদ মার্কেটের একটি জায়গায় ভিড়ের মধ্যে এক পুরুষ এক নারীকে ধাক্কা দেন। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই চার-পাঁচজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী ওই ব্যক্তিকে এলোপাতাড়ি কোপায় এবং সে দৌড় দিলে তাঁর পেছনে ধাওয়া করে। সন্ত্রাসীদের হাতে রামদা, বড় ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ছিল। ফুটেজে সন্ত্রাসীদের উত্তেজিত ও মারমুখী অবস্থায় দেখা যায়। পরে ফুটেজের শেষ পর্যায়ে উপস্থিত লোকজনকে একটা নির্দিষ্ট ভিড়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ফুটেজের বাইরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। উৎসুক জনতা সেই দিকেই তাকিয়ে ছিল।

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রবিউল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রাপ্ত সিসিটিভির ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে, এক নারীকে দিয়ে ফাঁদ পেতে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ানোর একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ওই ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত এবং তাড়া করে। সাংবাদিক তুহিন এ ঘটনা দেখে ফেলেন এবং তিনি এর ভিডিও ধারণ করেন। এই ভিডিও করার বিষয়কে কেন্দ্র করে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

তিনি জানান, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সিসিটিভির ফুটেজে যেসব সন্ত্রাসীকে দেখা গেছে, তারা সবাই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনিও ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। একটি সূত্রের দাবি, ফুটেজে দেখা যাওয়া সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজনের নাম কেটু মিজান, তার বাড়ি চান্দনা চৌরাস্তার চান্নাই এলাকায়। অন্যদের মধ্যে রয়েছে—শাহজামাল, বুলেট ও সুজন। এরা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী বলে সূত্রের দাবি।

সিসিটিভি ফুটেজে নারীর সঙ্গে যে ব্যক্তির ধস্তাধস্তি হয়েছিল তার নাম বাদশা মিয়া। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি দাবি করেন, ওই মেয়েরা একটি দল। ওরা আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আমি তাদের চিনতাম না।

শুক্রবার সকালে হাসপাতালের মর্গের সামনে লাশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম ও পরিবারের সদস্যরা। মো. সেলিম বলেন, তুহিনের স্ত্রী ফরিদা আক্তার, দুই ছেলে তৈকি ও ফাহিম অভিভাবক হারাল। আমার ভাইকে কেন হত্যা করা হলো? এখন তাদের দায়িত্ব কে নেবে? তিনি এই হত্যার বিচার ও আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

অন্যদিকে, দুর্বৃত্তরা হামলা করে ইট দিয়ে এক সাংবাদিকের পা থেঁতলে দেওয়ার ঘটনায় মহানগরী সদর মেট্রো থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী আহত সাংবাদিকের মা আনোয়ারা বেগম।

সদর মেট্রো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ফরিদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাংবাদিক তুহিনকে হত্যার প্রতিবাদে গেল রাতে চান্দনা এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। এ সময় তাঁরা তুহিন হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

এ ছাড়া সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

এসব বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অপরাধ তাহেরুল হক চৌহান বলেন, দুটি ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। কিছু আসামি শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত