Ajker Patrika

এক পাশে পুড়ছে, অন্যপাশে উৎসবের আয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এক পাশে পুড়ছে, অন্যপাশে উৎসবের আয়োজন

ভোরে লাগা আগুন এখনো কোথাও কোথাও জ্বলছে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে। ফায়ার সার্ভিসের ৩টি লাইট ইউনিট মার্কেটের ছাদ কেটে, সাটার কেটে দোকানের আগুন নেভাচ্ছেন পানি দিয়ে। রীতিমতো চলছে এক যুদ্ধ। তবে ভিন্ন চিত্র ঠিক রাস্তার উল্টো পাশে। 

নিউ সুপার মার্কেট আর গাউছিয়া মার্কেটকে ভাগ করেছে মিরপুর রোড। নিউ সুপার মার্কেটে ব্যবসায়ীদের শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে ফায়ার কর্মীদের যুদ্ধ চললেও ওপাশের গাউছিয়া মার্কেট, চাঁদনি চক শপিং কমপ্লেক্স, হকার্স মার্কেট, নুরজাহান মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটগুলোয় জ্বলছে রংবেরঙের আলো। ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। কেউ নিজের জন্য কেউবা আবার পরিবারের জন্য ঈদ উৎসব ভাগাভাগি করতে উপহার কিনছেন। 

আজ শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত নিউমার্কেট এসব এলাকা ঘুরে এ চিত্রের দেখা মিলেছে। নিউ সুপার মার্কেটের উল্টোদিকের মার্কেটগুলোর প্রতিটি দোকানে চলছে হরদম বেচা-কেনা। রাতের গভীরতার সঙ্গে বাড়ছে বিক্রেতাদের হাঁকডাক। 

স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে হকার্স মার্কেটে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী সিরাজুল হাসান। আজকে এই পরিস্থিতির মধ্যে কেনাকাটা করতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করি। আজকে বন্ধ ছিল, তাই এই পরিস্থিতির মধ্যেই এসেছি। কারণ ঈদের আগে আর সময় পাব না।’ 

সিরাজুল বলেন, ‘নিউমার্কেটে আগুনের ঘটনা দুঃখজনক। কিন্তু তাই বলে তো দুনিয়া থেমে নেই। দোকানও বন্ধ নেই। দুনিয়া তার আপন গতিতে চলবে।’ 

জান্নাতুল ফেরদৌস নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘মানুষ মারা গেলেও পরদিন ঈদ উদ্‌যাপিত হবে। সেটা তো আর কেউ বন্ধ রাখবে না। ঈদের আগে আজকেই সুযোগ পেয়েছি কেনাকাটা করতে আসার, তাই আজকেই এসেছি।’ 

তবে বিক্রেতারা বলছেন, দোকান খুললেও আগুনের কারণে ক্রেতা নেই। রাস্তা বন্ধ থাকায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না। 

নুরজাহান মার্কেটের ছেলেদের পাঞ্জাবির তাওহিদ গার্মেন্টস দোকানের মালিক রেজাউল করিম বলেন, ‘নিউ সুপার মার্কেটে আগুনের কারণে তেমন ক্রেতা নেই। ঈদের আগে এই সময় ক্রেতার চাপে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যেতো না। আজ একেবারেই ক্রেতা নেই। কারণ এই এলাকার রাস্তাগুলো বন্ধ থাকায় ক্রেতারা আসতে পারছেন না।’ 

হকার্স মার্কেটের শাড়ি কুঠিরের বিক্রেতা মো. জামাল বলেন, ‘দোকান খুলেছি ঠিকই, কিন্তু বেচাকেনা নেই। সকাল থেকে বসে থেকে এখনো খরচের টাকাও ওঠেনি। আগুনে আমাদেরই পরিচিতদের দোকান পুড়েছে, তাই বলে তো আমরা দোকান বন্ধ করে বসে থাকলে হবে না। দোকানে বসে আমরা তাদের কথাই ভাবছি।’ 

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মী মো. দেলোয়ার বলেন, গতকাল আমাদের ব্যস্ততা ছিল। আজ নেই। আমাদের কিছু করার নেই এটা তো দুর্ঘটনা। আমরা সতর্ক আছি যাতে কোনো দুর্ঘটনা আর না ঘটে। 

এদিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ) লে. কর্নেল রেজাউল করিম আজ শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আগুন এখনো পুরোপুরি নির্বাপণ করা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট এখনো কাজ করছে। তবে এখন আর বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নেই।’ 

এর আগে ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে। ৫টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের টিম পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে পর্যায়ক্রমে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩১টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত