Ajker Patrika

সাংবাদিক তুহিন হত্যা: ৭ আসামি ২ দিনের রিমান্ডে

গাজীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৩১
আসাদুজ্জামান তুহিন। ছবি: সংগৃহীত
আসাদুজ্জামান তুহিন। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাত আসামির প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ শনিবার (৯ আগস্ট) বিকেলে গাজীপুর অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আলমগীর আল মামুন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আহসান উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘আজ বিকেলে আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যা মামলার গ্রেপ্তার হওয়া সাত আসামিকে কড়া পাহারায় অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে মামলার তথ্য উদ্‌ঘাটনের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সব আসামির প্রত্যেকের ১০ দিন করে পুলিশ রিমান্ড আবেদন করেন। বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে প্রত্যেকের দুই দিন করে পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং পুলিশি হেফাজতে নিতে নির্দেশ দেন।

এর আগে হত্যাকাণ্ডের পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামিদের শনাক্ত করে মহানগর পুলিশ ঘটনায় জড়িত ছয়জন এবং র‍্যাব একজনকে গ্রেপ্তার করে।

আজ দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জানান।

পুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, এই ঘটনার প্রথম ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলেন। বিষয়টি দেখে তাকে ফাঁসানোর জন্য গোলাপি বাদশাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন। গোলাপির সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায়ে বাদশা মিয়া বিষয়টি বুঝতে পারেন যে তাঁকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর কথাবার্তার একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং বাদশা মিয়া গোলাপিকে ঘুষি মারেন। সিসিটিভি ফুটেজে বিষয়টি দেখা যায়।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, গোলাপিকে ঘুষি মারার পরপরই আগে থেকে ওত পেতে থাকা গোলাপির সহযোগীরা পাঁচ-ছয়জন এগিয়ে এসে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। তখন বাদশা মিয়া সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। সাংবাদিক তুহিনের ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি আসামিরা দেখে ফেলে। তখন আসামিরা বুঝে যায় যে এই ভিডিওর মাধ্যমে তাদের অপরাধ মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, তারপরে আসামিরা সাংবাদিক তুহিনের ভিডিওটি কেড়ে নেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ায় এবং তাঁকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে সাংবাদিক তুহিন একটি চা-স্টলে আশ্রয় নিলে তাঁকে সেখান থেকে ধরে এনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

কমিশনার বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ দেখে আমরা আটজনকে চিহ্নিত করেছি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি একজনকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পারব।’

জিএমপি কমিশনার জানান, সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন জামালপুরের মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর এলাকার মোবারকের ছেলে মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তাঁর স্ত্রী গোলাপি (২৫), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতার হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) ও সুমন নামের একজন।

জিএমপি কমিশনার আরও জানান, হত্যার প্রধান আসামি কেটু মিজানের নামে ১৫টি মামলা রয়েছে। কেটু মিজানের স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি, যিনি হানি ট্র্যাপ কার্যক্রমে জড়িত। অপর আসামি আল আমিনের ২টি মামলা, আসামি স্বাধীনের নামে ২টি, আসামি শাহজালালের বিরুদ্ধে ৮টি এবং আসামি ফয়সাল হাসানের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে।

জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সংঘবদ্ধ চক্রের অপরাধের চিত্র ধারণ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক। এ ঘটনায় আমাদের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ আছে, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী আছে। সব তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তুহিনের মরদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দিতে পারব। আশা করি, দ্রুত সময়ে মধ্যে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত