Ajker Patrika

শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও নাজুক করছে: সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪, ২১: ২৭
শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও নাজুক করছে: সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব ঘটনার অধিকাংশই চাপা পড়ে থাকে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের নিচে। লিখিত কিছু অভিযোগ আমলে নিলেও ন্যায়বিচার পেতে কেটে যায় শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষা এবং ব্যবস্থাবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন আরও নাজুক হচ্ছে। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন বক্তারা। 

সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাকশন এইডের মরিয়ম নেসা। তিনি জানান, জাতীয় পত্রিকাগুলোর সূত্রমতে, দেশের শীর্ষ ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই বছরে ২৭টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার হোতা শুধু পুরুষ শিক্ষার্থীরা নন, শিক্ষাদানের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা নিয়োজিত, সেই শিক্ষকদের মধ্যে কতিপয় শিক্ষকও। শিক্ষাঙ্গনে ঘটে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন হয়রানির ক্রমবর্ধমান ঘটনা সার্বিক শিক্ষা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। 

নিপীড়নের ঘটনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী সেলও বিচারহীনতার সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের পক্ষ থেকে যৌন নির্যাতনে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কার ছাড়া কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। দু-একটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগের পরও ন্যায়বিচার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এ সময় তিনি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে পৃথক-পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নসহ ২৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। 

সংবাদ সম্মেলনে কর্মজীবী নারীর সভাপতি শিরীন আখতার বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনা নতুন কোনো ঘটনা নয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। ইডেন, বদরুন্নেসাসহ কলেজগুলোতে ছাত্রীদের ওপরও এমন নিপীড়ন চলছে, কিন্তু অনেকেই সাহস করে বলতে পারছে না।’

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের সময় তাঁদের কাজের মূল্যায়নের পাশাপাশি আচার-আচরণের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা যেন অভিযোগ করতে পারে এবং একই সঙ্গে তাঁদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘এসবের কি কোনো পরিবর্তন হবে না? আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি, আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। অভিযোগ আসলে শুধু চাকরি যাবে, আর কোনো শাস্তি হবে না—তা হতে পারে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করে অভিযোগকারীর অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তিসহ প্রতিটি ঘটনার দৃশ্যমান বিচার চাই।’

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ক্রমাগত যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিস্তারে নারী লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাদের মর্যাদা লঙ্ঘিত হচ্ছে। নারীর প্রতি যৌন নির্যাতনসহ সব ধরনের নির্যাতন একটি ফৌজদারি অপরাধ, এটি কেবল নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত