Ajker Patrika

সোহাগ হত্যা: চিহ্নিত হয়নি কংক্রিটের বোল্ডার দিয়ে আঘাতকারী

  • সোহাগের ওপর কংক্রিটের বোল্ডার ও ইট মারা তিনজনের মধ্যে গ্রেপ্তার একজন।
  • রোববার দুই আসামিসহ গ্রেপ্তার ৭ জন।
  • মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১০: ৫৮
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত

পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যায় গতকাল রোববার পর্যন্ত সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে সোহাগকে কংক্রিটের বোল্ডার দিয়ে উপর্যুপরি আঘাতকারী ব্যক্তি গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি।

এদিকে গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে। এ ঘটনার পরদিন নিহত সোহাগের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৯ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ ঘটনায় শনিবার মধ্যরাতে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর পৌরসভার চায়না মোড় এলাকা থেকে দুই সহোদর সজীব ব্যাপারী (২৭) ও মো. রাজিব ব্যাপারীকে (২৫) গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাঁরা বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার টুনারচর এলাকার ইউনুস ব্যাপারীর ছেলে। তাঁদের মধ্যে রাজিব ১০ নম্বর ও সজীব ৭ নম্বর আসামি।

এর আগে এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‍্যাব। তাঁরা হলেন— মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১), তারেক রহমান রবিন (২২), আলমগীর (২৮), মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২), টিটন গাজী (৩২)।

গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার মো. আলমগীর ও মো. মনির ওরফে লম্বা মনিরকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেকের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক রাকিবুল ইসলাম তাঁদের ৪ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কোতোয়ালি থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই তানভীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোহাগ হত্যার সময়ের কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজসহ ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে। একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার সময় অর্ধশতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউ পরোক্ষভাবে হত্যায় জড়িত ছিল। তাদের চিহ্নিত করে এরই মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সাদা শার্ট ও জিনস প্যান্ট পরা যে ব্যক্তি সোহাগের ওপর একাধিকবার কংক্রিটের বোল্ডার ছুড়ে মেরেছে, সেই ব্যক্তিকে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত চিহ্নিত করতে পারেনি তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

তবে কংক্রিটের বোল্ডার ছুড়ে মারা অপর ব্যক্তি পেস্ট রঙের টি-শার্ট পরা মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) শুক্রবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। নিহত সোহাগের মাথায় ইট মারা ব্যক্তি মো. নান্নু (২৭)। মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) তখন নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। কংক্রিটের বোল্ডার ছুড়ে মারার সময় পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তি ইমরান বলে ধারণা করছে পুলিশ। আর দূরে খালি গায়ে বসে ছিলেন আলমগীর (২৮)।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অপর এক ভিডিওতে দেখা যায়, নিহত সোহাগকে টেনে রাস্তায় নেওয়া ব্যক্তিদের একজন মনির ওরফে লম্বা মনির। এরপর খালি গায়ে থাকা আলমগীর চড় দেন সোহাগের গালে। বুকের ওপর লাফ দেওয়া ব্যক্তিরা হলেন মনির ওরফে লম্বা মনির ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫)।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, হত্যার দুই দিন আগে থেকেই ‘সোহানা মেটালে’র সামনে লোকজনের আনাগোনা দেখা যেত। ঘটনার দিন বিকেলে সোহাগ দোকানে আসার খবর শুনে দলবল নিয়ে দোকানে যায় হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা। সেখান থেকে সোহাগকে মারতে মারতে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নিয়ে যায় তারা। সেখানে তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন গতকাল বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কংক্রিটের বোল্ডার ছুড়ে মারা ব্যক্তির বিষয়ে উপকমিশনার বলেন, ‘কংক্রিটের বোল্ডার ছুড়ে মারা ব্যক্তির নাম-পরিচয় আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে বের করার চেষ্টা করছি। টিটুসহ বাকিদের গ্রেপ্তার করতে পারলে হয়তো তার পরিচয়ও পাওয়া যাবে।’

সোহাগ হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা দায় ছিল না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। গতকাল বিকেলে বাহিনীর খিলগাঁও সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

অবহেলা ছিল না: আনসারের ডিজি

আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেছেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে মো. সোহাগকে হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা দায় ছিল না। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক গতকাল বাহিনীর খিলগাঁও সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন আনসার সদস্যরা হাসপাতালের নির্ধারিত রোস্টার অনুযায়ীই দায়িত্ব পালন করেছেন। রোস্টারের বাইরে গেটের বাইরে গিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাঁদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না। আনসারের ডিজি সদস্যদের সেখানে দায়িত্ব পালনের সূচির তথ্য উল্লেখ করে বলেন, আনসার সদস্যরা কোথায় কীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নির্ধারণ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোহাগ হত্যার ঘটনার সময় ঘটনাস্থল ৩ নম্বর গেটে কোনো আনসার সদস্যকে দায়িত্বে রাখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ঘটনার সময় কয়েক শ লোক সেখানে উপস্থিত থাকলেও কেউ নিকটস্থ আনসার ক্যাম্পে খবর দেননি। হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডার খবর পেলে তিনি ঘটনাস্থলে দৌড়ে যান এবং ঘটনা দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। এরপরই সোহাগকে গেটের ভেতরে টেনে নেওয়া হয়।

আরও দুদিন কর্মবিরতি

এদিকে নিরাপত্তার দাবিতে মিটফোর্ড হাসপাতালে আজ সোমবার ও কাল মঙ্গলবার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। গতকাল রাত ১০টায় আজকের পত্রিকা'কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্টার্ন ডক্টরস সোসাইটির সভাপতি ডা. ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। তিনি জানান, কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জরুরি সভা করেছেন। এখনো তাঁদের বেশ কিছু দাবি পূরণ করা হয়নি।

আরো পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই নেত্রকোনায় গ্রেপ্তার

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

‘নৌকা আউট, শাপলা ইন’, সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির চাওয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

পাওনা টাকা চাওয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের পর বললেন, ‘আমি যুবদলের সভাপতি, জানস?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত