Ajker Patrika

কালাইয়ে ধান বাদ দিয়ে আষাঢ় মাসে তরমুজ চাষ

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২: ০৯
বামোনগ্রাম মাঠে সুতা টেনে পিআই জাতের তরমুজখেতে মাচা তৈরি করছেন কৃষক আব্দুল মান্নান। ছবি: আজকের পত্রিকা
বামোনগ্রাম মাঠে সুতা টেনে পিআই জাতের তরমুজখেতে মাচা তৈরি করছেন কৃষক আব্দুল মান্নান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বর্ষাকালে যেখানে মাঠভরা ধান চাষ হওয়ার কথা, সেখানে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বামোনগ্রামে চলছে উন্নত জাতের পিআই (PI) হাইব্রিড তরমুজ চাষের প্রস্তুতি। মাঠজুড়ে চলছে মাচা তৈরির কাজ। কৃষকেরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও লাভের মুখ দেখবেন তাঁরা।

বামোনগ্রাম মাঠে সরেজমিন দেখা যায়, মাটি থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু লম্বা বেড তৈরি করে মালচিং পেপার (পলিথিনের মতো) দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্রতি চার হাত অন্তর বেড বসানো, চারপাশে নিখুঁত জালের বেড়া এবং ওপরে সুতা টেনে মাচা তৈরির কাজ চলছে। কৃষকেরা জানালেন, কয়েক দিনের মধ্যে গাছে জালি (মুকুল) আসবে, এরপর ধীরে ধীরে তরমুজ ধরবে।

এই এলাকায় পিআই জাতের তরমুজ চাষ করছেন আব্দুল মান্নান ( ৫০ শতক), আব্দুল হান্নান (৭ শতক), আরিফুল (৩৩ শতক), মোসলেম (৬৬ শতক), ফুলমিয়া (২০ শতক), বেনজির (১৫ শতক), আইজুল (৩৫ শতক) ও মুনছুরসহ (৪৫ শতক) অনেকে।

তরমুজচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গত তিন বছর ধান বাদ দিয়ে আষাঢ়েই তরমুজ লাগাই। অল্প খরচে বেশি আয়—এই চাষে আমার ভাগ্য বদলেছে। ধানে যেখানে বিঘায় ১৫-২০ হাজার টাকার বেশি লাভ হয় না, সেখানে তরমুজে এক বিঘায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।’

প্রতি শতাংশ জমিতে রোপণ করা যায় ২৩-২৬টি চারা। জমি প্রস্তুত থেকে ফল ধরার আগ পর্যন্ত এক বিঘায় খরচ হয় ৫০-৫৫ হাজার টাকা। প্রত্যাশিত ফলন বিঘাপ্রতি ১২০-১২৫ মণ। বাজার অনুযায়ী প্রতি মণের দাম ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করে। সব খরচ বাদ দিয়েও বিঘাপ্রতি আয় হতে পারে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা।

কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা হয় না—এমন উঁচু জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করলে বর্ষাতেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। এতে অল্প সময়ে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।’

তিনি আরও জানান, এটি একটি হাইব্রিড জাতের তরমুজ, যার ফলন সাধারণত ৬৫-৭৫ দিনের মধ্যে পাওয়া যায়। ফল লম্বাটে, বাইরের খোসা সবুজ ও গাঢ় ডোরা দাগযুক্ত। উজ্জ্বল লাল, মিষ্টি (Brix মাত্রা ১১-১৩), বীজ কম এবং রসাল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তুলনামূলক ভালো।

সুতা টেনে পিআই জাতের তরমুজখেতে মাচা তৈরি করছেন কৃষক আব্দুল হান্নান। ছবি: আজকের পত্রিকা
সুতা টেনে পিআই জাতের তরমুজখেতে মাচা তৈরি করছেন কৃষক আব্দুল হান্নান। ছবি: আজকের পত্রিকা

তবে অতিরিক্ত সার, সেচ বা বৃষ্টিতে ফল ফেটে যেতে পারে। তা ছাড়া হাইব্রিড জাত হওয়ায় নিজের বীজ পুনরায় ব্যবহার করা যায় না বলেও জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি খরিপ-২ মৌসুমে জয়পুরহাট জেলায় ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পিআই জাতের তরমুজ চাষের এই ইতিবাচক পরিবর্তন শুধু ব্যক্তি কৃষকের আয়ই বাড়াচ্ছে না, বরং জেলার অর্থনীতিতেও যোগ করছে নতুন মাত্রা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পারটেক্স এমডি রুবেল আজিজের ১১৬ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে তুলছে ব্যাংক এশিয়া

যশোরে কেন্দ্রের ভুলে বিজ্ঞানের ৪৮ জন ফেল, সংশোধনে জিপিএ-৫ পেল সবাই

গণভবনকে বাস্তিল দুর্গের সঙ্গে তুলনা করলেন ফরাসি রাষ্ট্রদূত

১০০ গজ দূরেই ক্যাম্প, তবু সোহাগকে বাঁচাতে কেন এল না কেউ—যা বললেন আনসারপ্রধান

রাতের আঁধারে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত