Ajker Patrika

‘প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দের কাছে ছাদে ওঠার ঝুঁকি তুচ্ছ’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২২, ২১: ০২
‘প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দের কাছে ছাদে ওঠার ঝুঁকি তুচ্ছ’

ট্রেনের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গরমে হাঁসফাঁস করছে নারী শিশু বয়স্করা। এর ওপর ঠাসাঠাসিতে শ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করতে এত কষ্ট সহ্য করে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। কেউ কেউ বাদুড় ঝোলা হয়ে ট্রেনের গেট ধরে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু যাঁরা ভেতরেও জায়গা পাচ্ছেন না তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠে পড়ছেন ছাদে। একটু অসতর্ক হলেই ঘটে যেতে পারেন ভয়াবহ দুর্ঘটনা। তবে সক্ষমতার চেয়ে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় এসবে ছাড় দিচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। 

আজ শনিবার সকাল থেকেই বিমানবন্দর রেলস্টেশনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। টিকিট ছাড়াও বহু যাত্রী আসছেন। তাঁদের ভরসা স্ট্যান্ডিং টিকিট। যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী এবার রেল কর্তৃপক্ষ প্রতি ট্রেনের ধারণ ক্ষমতার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি করছে। 

মোহাম্মদ জুয়েল রানা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কাজ করেন। আজ সকালেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ট্রেনে এসেছেন ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন। ছুটিতে যাবেন গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর। ট্রেনের টিকিট শেষ। তাই ৫২০ টাকা দিয়ে একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটেছেন। বিমানবন্দর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত  দাঁড়িয়ে যাবেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। শেষ সময়ে এসে এখন আসলে কিছু করার নেই। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যেতেই হবে। সেটা যেভাবেই হোক। সড়কপথে যানজট এড়াতে বাসের টিকিট কাটেনি। আর গতকাল রাতে যাঁরা বাসে রওনা দিয়েছেন তাঁরা এখনো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। তাই একটু কষ্ট হলেও ট্রেনে যাওয়াই ভালো, এতে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব।’ 

ট্রেনের ভেতরে জায়গা নেই, গেটে বাদুড় ঝোলা হয়ে মানুষের ঈদ যাত্রা। যাত্রীর চাপ বাড়ায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিটি ট্রেনেই যাত্রী নিয়ে ভরে আসছে বিমানবন্দর স্টেশনে। বিমানবন্দরে আসার পরে যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ট্রেনে ওঠার জন্য। ট্রেনগুলো বিমানবন্দর ছেড়ে যখন জয়দেবপুর স্টেশনে যাচ্ছে তখন আর ভেতরে কোনো জায়গা খালি থাকছে না। ফলে বহু যাত্রী ছাদে উঠে যাচ্ছেন। 
 
জয়দেবপুরে জামালপুর কমিউটার ট্রেনের ছাদে ওঠা নুরুল আমিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘টিকিট পাইনি, ট্রেনের ভেতরে দাঁড়াবার জায়গা নেই। এখন একমাত্র ভরসা ছাদ। ঝুঁকি তো আছেই, তবে মা বাবার সঙ্গে ঈদ কাটানোর আনন্দের তুলনায় এ ঝুঁকি কিছুই না!’ 

উল্লেখ্য, আন্তনগর ও ঈদ স্পেশাল ট্রেনে সিট আছে ৩৩ হাজার এবং লোকাল, কমিউটার, এক্সপ্রেস ট্রেনের সিট আছে ৩০ হাজার। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে। 

ট্রেনের ভেতরে জায়গা নেই, গেটে বাদুড় ঝোলা হয়ে মানুষের ঈদ যাত্রা। এভাবে ছাদে যাত্রী ওঠার বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাসান ইমাম বলেন, ‘ছাদের বেশির ভাগ যাত্রী কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে উঠে এসেছে। তবু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। কতজনকে নামাব বলেন। ট্রেনের ভেতরের চেয়ে ছাদে বেশি যাত্রী।’ 

এদিকে আজও কিছু ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। এর মধ্যে চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস ৫০ মিনিট, খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস আধা ঘণ্টা, রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস আধা ঘণ্টা এবং পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা দেরিতে বিমানবন্দর রেল স্টেশন ছেড়ে গেছে। 

সার্বিক বিষয় নিয়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রেনে ঈদযাত্রা এখন পর্যন্ত নির্বিঘ্ন হচ্ছে। দু-একটি ট্রেনে কিছুটা সময় দেরিতে যাচ্ছে, তবে সেটা স্বাভাবিক। আমরা যাত্রীদের ছাদে উঠতে দিচ্ছি না। তবে এত যাত্রীরা চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে যাত্রীরা জোর করে ছাদে উঠে পড়ছেন। তবে সবাই যাতে বাড়ি যেতে পারে, তার জন্য আমরা ট্রেনের স্ট্যান্ডিং টিকিটও দিচ্ছি। তা ছাড়া ঈদের দিন দুটি স্পেশাল ট্রেন চলবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত