Ajker Patrika

৫০ টাকার জন্য সংকটাপন্ন রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলেছিলেন ধলু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ৩৫
৫০ টাকার জন্য সংকটাপন্ন রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলেছিলেন ধলু

চাহিদা অনুযায়ী বকশিস না পেয়ে রোগীর মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলেছিলেন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় ধলু। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় রাজধানীর উত্তরা থেকে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী ওয়ার্ডবয় আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।  

এ নিয়ে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব। । সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

আসাদুল ইসলাম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত স্কুলছাত্র বিকাশ চন্দ্র দাসের মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়েছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মারা যায়। বিকাশ চন্দ্র গাইবান্ধার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র (১৭) ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে গ্রিল ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করতো বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। 

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার আসাদুল ইসলাম ধলু গত ৬ বছর যাবৎ ওই হাসপাতালে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করছিলেন। ধলু প্রতিদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকেল থেকে হাসপাতালের জরুরি আউটডোরে রোগীদের ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়া  বা অন্যান্য দালালিসহ বিভিন্ন কাজ করত। এই কাজের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করত। 

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত মঙ্গলবার বিকাশ চন্দ্র দাশ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গাইবান্ধার সাঘাটাতে মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হলে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাত ১০টায় তার অভিভাবকেরা বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালে পৌঁছালে জরুরি বিভাগের সামনে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মী ধলু ভিকটিমের পরিবারের কাছে অল্প সময়ের মধ্যে সেবা দেওয়ার নামে টাকা দাবি করেন। 

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ভিকটিমকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক অবস্থা দেখে রোগীকে জরুরি অক্সিজেন লাগিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। এরপর ভিকটিমকে ধলু সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। বেড না থাকায় ভিকটিমকে ফ্লোরে বেড দেওয়া হয়। পরে ৫০০ টাকা দাবি করে। পরে পরিবার ২০০ টাকায় রাজি হয়। কিন্তু ভিকটিমের অভিভাবকেরা তাদের কাছে ১৫০ টাকা থাকায়, তাকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। তখন ধলু আরও টাকা দাবি করলে নিহতের পরিবার অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় আসাদুল ইসলাম ধলু উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম শ্রী বিকাশ চন্দ্র দাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালি গালাজ করে। এরপরই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভিকটিম মৃত্যু হয়। তখন হাসপাতালে অন্যান্য রোগীসহ হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করার সময় পালিয়ে যায় ধলু। 

ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশ মৃত্যু বরণের কারণে গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় বগুড়া সদর থানায় আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া এই ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের এই
কর্মকর্তা। 

তিনি বলেন, নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। পরে র‍্যাব আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশ চিকিৎসারত অবস্থায় অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করায় বিষয়টি স্বীকার করে। এ ঘটনার পর সেখান থেকে ধলু পালিয়ে প্রথমে নওগাঁ। পরে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপনে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানায় র‍্যাব। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত