Ajker Patrika

দুই জাবি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পেছনে রয়েছে প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধের অপচেষ্টা: আনু মুহম্মদ

ঢাবি প্রতিনিধি
দুই জাবি শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের পেছনে রয়েছে প্রতিবাদী কণ্ঠ রোধের অপচেষ্টা: আনু মুহম্মদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জেরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাবি ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি নেতা অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্র-জনতা। 

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে এক নাগরিক সংহতি সমাবেশে দাবি জানান তাঁরা। একই সঙ্গে বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবির পাশাপাশি ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানানো হয় সমাবেশে। 

সংহতি সমাবেশে জাবির অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মেরুদণ্ডহীন শিক্ষক এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ লুট করা হচ্ছে, সঙ্গে গাছ কেটে পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। অমর্ত্য রায় এবং ঋদ্ধ অনিন্দ্যকে বহিষ্কার করার পেছনে সরকারবিরোধী প্রতিবাদী কণ্ঠকে চুপ করানোর অপচেষ্টা লুকিয়ে আছে।’ 

সরকার উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে সারা দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি অকার্যকর পরিবেশ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে এ ধরনের উন্নয়নকে ‘উন্নয়ন উন্মাদনা’—বলে আখ্যা দেন তিনি। 

সংহতি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, দর্শন বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ নিজার, শিক্ষক মাসুদ ইমরান মান্নু, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিমউদ্দীন, নৃতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন, আবদুর রউফ কলেজের শিক্ষক অমূল্য বৈদ্য কর, লেখক রাখাল রাহা, সাবেক চাকসু ভিপি শামসুজ্জামান হীরা, ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সভাপতি রাগীব নাইম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, সমগীতের সংগঠক শিল্পী অমল আকাশ, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং চলমান আন্দোলনের কর্মী নুর এ তামিম স্রোত। 

বক্তারা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধর্ষণকাণ্ড ঘটল—সেটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা গ্রাফিতি আঁকল, তাঁদের বহিষ্কার করল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাতে প্রমাণিত হয়—জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ধর্ষক ও স্বৈরাচারের পাহারাদার।’ 

বক্তারা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন সময় একটি গ্রাফিতি আঁকা হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো আন্দোলনে গ্রাফিতি আঁকা একটি নিয়মিত এবং গৃহীত সাংস্কৃতিক চর্চা। ভিসিবিরোধী আন্দোলন এর গ্রাফিতিটি মুছে সেখানে জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ছবি আঁকা হয়। তিন বছর পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে পূর্বের সাংস্কৃতিকচর্চাকে বজায় রেখে ‘স্বৈরাচার এবং ধর্ষণ থেকে আজাদী’ শীর্ষক গ্রাফিতিটি আঁকা হয়। 

এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রশাসন, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা একটি স্মারকলিপি দেয়। কোনো অভিযোগ নয়, কেবল সেই স্মারকলিপির ওপর ভিত্তি করে জাবি প্রশাসন স্বউদ্যোগে নীতিবিরুদ্ধভাবে এবং অগণতান্ত্রিক উপায়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দুই শিক্ষার্থী ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি এবং অমর্ত্য রায়ের বহিষ্কারাদেশ জারি করে এবং রাষ্ট্রীয় মামলা করার অফিসিয়াল আদেশ দেয়। 

সভায় বক্তারা বলেন, একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করার আদেশের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের ধারণাকে ক্ষুণ্ন করেছে। 

সমাবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থীদের বক্তব্য থেকে প্রশাসনের অর্থনৈতিক অনৈতিকতা এবং চলমান আওয়ামী সরকারের প্রতি নতজানু মানসিকতার কথা উঠে আসে। জাবি হলে মেয়াদোত্তীর্ণ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা অবাধে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে এবং এই ন্যক্কারজনক ধর্ষণের সঙ্গে যুক্ত ছিল, অথচ হলগুলোতে চলমান শিক্ষার্থীরা থাকার জন্য সিট পায় না। এর থেকে বোঝা যায় কেবলমাত্র আওয়ামী দলের লেজুড়বৃত্তি করতে গিয়ে জাবি প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি বহুমাত্রিকভাবে চরম অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক আচরণ করে আসছে। ‘স্বৈরাচার এবং ধর্ষণ থেকে আজাদী’ শীর্ষক গ্রাফিতির জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রমাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ধর্ষক ও স্বৈরাচারের পাহারাদার হয়ে উঠেছে। 

সমাবেশে নাগরিক সংহতি সমাবেশের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচারসহ ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার জন্য ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলি এবং অমর্ত্য রায়ের বহিষ্কারাদেশ বাতিল এবং মামলার প্রস্তুতি স্থগিত করা না হলে, নাগরিক আন্দোলন আরও বৃহত্তর ভাবে চলমান থাকবে। 

সংহতি জানিয়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, উত্তরা ইউনিভার্সিটির বাংলা বিভাগের প্রধান সামজীর আহমেদ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের শিক্ষক অলিউর সান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক শরৎ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক সোমজিৎ জয়দ্বীপ, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু, প্রফেসর এবং চিকিৎসক ড. হারুন অর রশীদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, নারী অধিকার কর্মী, গবেষক, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং অ্যাকটিভিস্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি

দেড় মাস ধরে কর্মস্থলে নেই সহকারী কমিশনার, নিয়োগ বাতিল করল সরকার

জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আটক ৩

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

এলাকার খবর
Loading...