Ajker Patrika

গৃহকর্মীর মৃত্যু: আশফাকুলকে ডেইলি স্টার থেকে অব্যাহতি, তদন্তের দাবি ১১৭ নাগরিকের 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ২১: ২৪
Thumbnail image

ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হককে ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে অব্যাহতির বিষয়ে একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়। নোটিশটি অবিলম্বে কার্যকর গণ্য হবে বলে সেখানে জানানো হয়।

সৈয়দ আশফাকুলকে অব্যাহতি দেওয়ার পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি পত্রিকাটির পক্ষ থেকে। তবে নিজের বাসা থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলায় বর্তমানে তিনি সস্ত্রীক কারাগারে রয়েছেন।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসার গৃহকর্মী ১৫ বছর বয়সী প্রীতি উরাং নয়তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন ১১৭ নাগরিক। আজ বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা সংবাদমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় ১৩ বছর বয়সী শিশু (সাত বছরে স্কুল ছাড়ার বিবেচনায়) প্রীতি উরাং কর্মরত ছিল। অভিযোগ রয়েছে, আশফাকুল হকের স্ত্রী তানিয়া হক প্রায়ই তাঁর বাসায় কর্মরত গৃহকর্মীদের মারধর করতেন। সর্বশেষ প্রীতিকে নয়তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

প্রীতির বাবা অভিযোগ করেছেন, ওই গৃহে কাজ করার সময় সৈয়দ আশফাকুল হকের পরিবার প্রীতিকে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলতে দিত না। শিশুটি পড়ে যাওয়ার আগে প্রায় ১৩ মিনিট ঝুলে ছিল এবং বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু আশফাকুল হকের বাসা থেকে কেউ তাকে সাহায্য করেনি। আশপাশের মানুষজন সাহায্যের জন্য এগিয়ে যেতে চাইলেও ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। শিশুটি পড়ে যাওয়ার পরে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে আসে। পরে সে মারা যায়। লক্ষণীয় হলো, প্রীতির প্রাক-স্কুলের নথি এবং ওই ফ্ল্যাটের ওই সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ দুটোই গায়েব হয়ে গেছে। এটাও লক্ষণীয়, এজাহারে প্রীতির বয়স ১৩ বছরের বদলে ১৫ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই সঙ্গে একে অবহেলাজনিত মৃত্যু বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সৈয়দ আশফাকুল হকের ওই ফ্ল্যাট থেকে ২০২৩ তারিখের ৬ আগস্ট ৭ বছরের আরও একজন গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল বা লাফ দিয়েছিল। সে বেঁচে আছে। তার মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ আছে, তার জননাঙ্গের গভীর থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত ৩-৩-৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ-চওড়া-গভীর ক্ষত রয়েছে। তার জননাঙ্গে অপারেশন করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, পড়ে যাওয়ার আগেই সে দু’পায়ের মাঝে আঘাত পেয়েছিল। সে কারণে সে মরে যেতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে ২ লাখ টাকায় বিষয়টির আপসরফা হয়েছে। যদিও টাকা মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলে গেছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রিবের নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, রাঙামাটির চাকমা রানী রানী য়েন্ য়েন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. জেড আই খান পান্না, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রীতির মৃত্যুর ১০ দিন পর ডেইলি স্টারের সম্পাদক এক বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘প্রীতির ঘটনায় তারা দুঃখ প্রকাশ করছে এবং ডেইলি স্টার সব সময় শিশু অধিকার সমুন্নত রাখার নীতিতে অটল আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

‘তাঁর এ বক্তব্য বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যজনক। ডেইলি স্টারের উচিত ছিল ঘটনার পর পরই তাঁকে সুরক্ষা দেওয়ার স্থলে অব্যাহতি দেওয়া, তাহলে সম্পাদকের বক্তব্য কিছুটা হলেও অর্থবহ হতো। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অবহেলায় আমরা তীব্র ক্ষোভ এবং নিন্দা জানাচ্ছি। প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ডের নামান্তর বলে আমরা মনে করি। কোনো প্রভাবশালী মহলের চাপে তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হলে আমরা তা মেনে নেব না। দেশের সকল সংবাদমাধ্যমের সম্মানিত সম্পাদকদের কাছে, এই মহান পেশার নিরপেক্ষতা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবার ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ ঘটনার নিরপেক্ষ স্বাধীন ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত