Ajker Patrika

চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

দুর্নীতি দমন কমিশনের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ তুলে ধরেছেন সংস্থাটির সচিব মাহবুব হোসেন। কিন্তু কোনো অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে এমন তথ্য দিতে পারেননি। বরং গত কয়েক দিনে সংবাদমাধ্যমে শরীফকে নিয়ে ‘একতরফা’ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বলে দাবি করেছেন দুদকের এই সচিব। 

শরীফের চাকরিচ্যুতির পাঁচ দিনের মাথায় আজ রোববার তাঁর বিরুদ্ধে এক ডজনেরও বেশি অভিযোগ করেন তিনি। এ সময় প্রাতিষ্ঠানিক আইন মেনেই চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মাহবুব হোসেন। 

শরীফের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ 
১. শরীফ কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের দাবি পাওয়া মাত্র দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের নির্দেশিকা অনুসরণ না করে নিজের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করতেন। অনুসন্ধান বা তদন্ত করার সময় শরীফ উদ্দিন অভিযোগের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয়, এ রকম বহু ব্যক্তিকে নোটিশ বা টেলিফোনের মাধ্যমে ডেকে এনে হয়রানি করতেন। 

২. অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে কোন ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ বা নো ডেবিট করার প্রয়োজন হলে আইন ও বিধিতে তার সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। শরীফ ওই নিয়মের তোয়াক্কা করতেন না এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতেন না। 

৩. শরীফ কমিশনকে পাশ কাটিয়ে ও আদালতের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও তা না করে দুদক বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮ লঙ্ঘন করে লিখিতভাবে ১৫টি ব্যাংক হিসাব ও মৌখিকভাবে আটটিসহ মোট ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ (ফ্রিজ) করেছেন। 

৪. কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র‍্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। জব্দকৃত অর্থ ২০২০ সালের ১০ মার্চ আলামত হিসাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে শরীফকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে দীর্ঘ এক বছর চার মাস ওই অর্থ নিজের হেফাজতে রেখেছেন। বিষয়টি হাইকোর্ট ডিভিশনের দৃষ্টিগোচরে এলে সুয়োমোটো রুল জারি করা হয়। এ বিষয়ে শরীফের ব্যাখ্যা আদালত গ্রহণ করেননি। 

৫. শরীফ উদ্দিন একটি মামলায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে অত্যন্ত নির্মমভাবে প্রহার করেছেন, যা তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ ধরনের বহু অভিযোগ রয়েছে। 

৬. শরীফ উদ্দিনের কর্মকাল তিন বছরের অধিক হওয়ায় অন্য আরও ২০ জন কর্মচারীর সঙ্গে তাঁকে বদলি করা হয়। এ বদলি আদেশ সবাই যথাসময়ে কার্যকর করেন। কিন্তু বদলির এ আদেশের বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলাম লিটন নামের একজন মানবাধিকারকর্মীর ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট পিটিশন দায়ের করেন। বদলির আদেশ স্থগিত করার অসত্য সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো আদেশ হাইকোর্ট দেননি। 

৭. জনস্বার্থে ২০২১ সালের ১৬ জুন সজেকা, চট্টগ্রাম-২ থেকে সজেকা, পটুয়াখালীতে তাঁকে বদলি করার দীর্ঘ এক মাস পর (১৭ জুলাই) তিনি ই-মেইলে পটুয়াখালীতে যোগদানপত্র প্রেরণ করেন। আর ১০ আগস্ট তারিখে সশরীরে দুদকের পটুয়াখালী অফিসে উপস্থিত হন। বিলম্বের কারণ হিসাবে লকডাউন বলে তিনি উল্লেখ করেন। কিন্তু লকডাউনের মধ্যেও সশরীরে পটুয়াখালীতে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ ছিল। বিলম্বে যোগদান করে তিনি কমিশনের আদেশ অবজ্ঞা করেছেন। 

৮. শরীফ উদ্দিনকে পটুয়াখালীতে বদলির পর কর্মস্থল ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে সব রেকর্ড পত্রসহ নথিপত্র বুঝিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। নথি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কখনই পৃথক আদেশ জারি করা হয় না। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর তাঁকে পটুয়াখালী থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়। 

৯. জনৈক ব্যক্তির হুমকি দেওয়ার কথিত অভিযোগে গত ৩০ জানুয়ারি থানায় জিডি করেন শরীফ। বিষয়টি তিনি কাউকে অবহিত করেননি। গণমাধ্যম সূত্রে জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে তিনি কোনো সহযোগিতা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি। 

১০. তিনি রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রদান বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করেছেন। এ ধরনের অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিচালকের নেতৃত্বে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ছয় সদস্যের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। শরীফ উদ্দিন টিমের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিভ্রান্ত করে চলেছেন যে, তিনি সব উদ্‌ঘাটন করেছেন। 

১১. কক্সবাজার জেলার জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ২০২০ সালের ১৫ মার্চে দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি-১০ (বি) এর নির্দেশনা অনুসৃত হয়নি। বিশেষ করে প্রতিটি এলএ কেসের বিপরীতে, কখন, কীভাবে কি অপরাধ করেছে এবং অপরাধটি সংঘটনের সঙ্গে আসামিদের দায় সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ক্রিমিনাল চার্জ সমর্থনে সাক্ষ্য-প্রমাণাদি সুস্পষ্ট করা হয়নি। 

১২. স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে শরীফের দাখিলকৃত অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সঙ্গে তদারককারী কর্মকর্তাই দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে টেন্ডারে অনিয়ম সংক্রান্তে মালামালের গুণগত মানের তথ্য, জড়িত ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট সম্পৃক্ততা, মূল্যায়ন কমিটির দায়-দায়িত্ব, আর্থিক বছর, সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা। তার প্রতিবেদন কমিশন কর্তৃক বিবেচিত না হওয়ায় দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করে পুনরায় অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো হয়েছে। 

১৩. শরীফ উদ্দিন ২০১৭ সালে কর্ণফুলী গ্যাসের বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কেডিসিএল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে সেখানে তার আপন ছোট ভাই শিহাব উদ্দিন সবুজকে কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি দেন। বর্তমানে তিনি আইটি ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া তিনি সেখানে তাঁর আত্মীয় মুহাম্মদ শাহাব উদ্দিন জাল সনদের মাধ্যমে ড্রাইভার পদেও চাকরি দিয়েছেন, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। নিজের ভাই ছাড়াও নিকটাত্মীয়কে প্রভাব খাঁটিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিতে চাকরি দেওয়ার বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত