Ajker Patrika

গুলিতে নিহত শাওনের ভাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা মামলার আসামি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
ফরহাদ প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
ফরহাদ প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে ২০২৩ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবদলের কর্মী শাওন প্রধান। সেই শাওনের বড় ভাই ফরহাদ প্রধানকে আসামি করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাবরুর হুসাইন হত্যা মামলায়। ফরহাদ প্রধান নিজেও যুবদলের রাজনীতিতে সক্রিয়। মামলার চার মাস পর আসামি তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ফরহাদ প্রধান ও তাঁর পরিবার।

ফরহাদের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানি করতেই তাঁকে মামলার আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শামীম ওসমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।

চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি আদালতের নির্দেশে ফতুল্লা মডেল থানায় মাবরুর হুসাইন হত্যা মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। মামলাটির বাদী ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী পরিচয়দানকারী কালাম (৩৯) নামের এক ব্যক্তি। এ দিকে মামলা করার পর থেকেই বাদীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মামলায় মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করলেও তা বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

মামলার অভিযোগে বাদী কালাম উল্লেখ করেন, ‘ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমি ও আমার প্রতিবেশী ছোট ভাই মাবরুর হুসাইন আন্দোলনে অংশ নিই। গত ৪ আগস্ট সাইনবোর্ড এলাকায় উল্লেখিত আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় মাবরুর হুসাইন গুরুতর জখম হয় এবং তাকে আসামিরা তুলে নিয়ে যায়। পরে ৫ আগস্ট তাঁর লাশ যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে পাওয়া যায়।’

এতে আরও বলা হয়, একই ঘটনায় বাদী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরে আসেন। মাবরুর হুসাইনের পরিবারের কোনো অভিভাবক না থাকায় বাদী মামলা করতে গেলে থানা-পুলিশ ঘুরাতে থাকে। এমন অবস্থায় বাদী বিচার চেয়ে আদালতে দ্বারস্থ হন। আদালতে আবেদন করার পর আদালত পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিলে পুলিশ তদন্ত শেষে মামলা গ্রহণের সুপারিশ করে। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত সাহারা বিথী মামলাটি ফতুল্লা থানায় করার আদেশ দেন। মামলার ১৭ নম্বর আসামি করা হয়েছে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের ভাই ফরহাদ প্রধানকে।

ফরহাদ প্রধান বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমার ভাই শাওনকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ সরকার অনেক প্রলোভন দেখিয়েছে। আমরা সব প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির রাজনীতি করেছি। আমার ভাই শাওনকে যুবলীগ কর্মী বানাতে চেয়েছে, আমরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছি, সে যুবদল করে। এর কারণে আমাদের ওপর অনেক হুমকি-ধমকি এসেছিল। আমি রাজনীতিতে সক্রিয় হই, ভাই হত্যার বিচারের জন্য। এখন আমাকেই মামলার আসামি করা হলো।’ ফরহাদ প্রধান বলেন, ‘কার ইন্ধনে এমন হয়েছে আমার জানা নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এটা করতে পারে। মামলার বাদীকে আমি খুঁজে পাচ্ছি না।’

মামলার বাদী কালামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

নিহত মাবরুর হুসাইনের বাবা আব্দুল হাই বলেন, ‘বাদী কালাম একজন প্রতারক। আমরা মামলা করতে চাইনি, সে মামলা করেছে বাণিজ্য করার জন্য। পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ জানিয়েছে, আমাদের মামলা করতে। চলতি মাসে আমরা মামলা করেছি। এই কালামের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। তাঁর নম্বরও বন্ধ। সে মূলত হয়রানি আর বাণিজ্য করতে এই মামলা করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করা প্রয়োজন।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, ‘ফরহাদ প্রধান যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শাওন প্রধানের মৃত্যুর পর সক্রিয়ভাবেই রাজনীতি করে যাচ্ছে। সে যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মামলার আসামি হয়েছে, এটা আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। এটা দুঃখজনক ঘটনা। আমার বিশ্বাস তাঁকে পুলিশ তদন্তেই নির্দোষ হিসেবে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করবে।’

ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা শুনেছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের এখানে কেউ মামলা করতে এলে না করার সুযোগ নেই। যার (ফরহাদ প্রধান) কথা বলা হচ্ছে সে যদি এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়ে থাকে তাহলে তদন্তসাপেক্ষে তাঁকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ গুলি করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যুবদলের কর্মী শাওন প্রধান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত