Ajker Patrika

কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ, গুড়ে বাড়ছে ভেজাল

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ, গুড়ে বাড়ছে ভেজাল

শীতের ঐতিহ্যের একটি বড় অংশজুড়ে থাকা খেজুর রসের স্বাদ অজানাই থেকে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। গ্রামের রাস্তার পাশে এখন আর তেমন দেখা যায় না খেজুর গাছ। যা আছে তাও জীর্ণশীর্ণ।

শীত এলে গাছ কেটে রস নামানোর প্রক্রিয়া চললেও পরিচর্যার অভাবে এ সকল গাছে রস কমে যাচ্ছে। সারা রাত ধরে হাঁড়ি পেতে অর্ধেক রসও সংগ্রহ করতে পারছে না গাছিরা। আর এতে করে বেড়ে যাচ্ছে রসের দাম। খেজুর গুড়ে মেশানো হচ্ছে অধিক পরিমানে চিনি। 

সরেজমিনে শিবচরের প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যন্ত এলাকার সড়কের পাশে কিছু কিছু খেজুর গাছ এখনো রয়েছে। তবে সড়ক সংস্কারের কাজ হওয়ায় বেশির ভাগ খেজুর গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। কোনো কোনো জায়গায় কিছু খেজুর গাছ রয়েছে। যে সব স্থানে এক সময় রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল সেই সব স্থানে এখন খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। 

জানা গেছে, শীতের শুরুতেই রস সংগ্রহের জন্য কাটা হয় খেজুর গাছ। গাছের অগ্রভাগের একপাশে বেশ খানিকটা কেটে পরিষ্কার করা হয়। পরে বাঁশের কঞ্চি কেটে কাঠি তৈরি করে গেঁথে দেওয়া হয়। তার ঠিক নিচেই ঝোলানো হয় মাটির হাঁড়ি। গাছের কাটা অংশ বেয়ে রস কাঠির মাধ্যমে ফোঁটায় ফোঁটায় হাঁড়িতে এসে জমা হয়। ঠান্ডা আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল রসের জন্য উপযোগী সময়। এ সময়ে প্রাপ্ত রসের স্বাদও ভালো থাকে। পাঁচ বছর বয়স থেকে খেজুর গাছে রস পাওয়া যায়। 

শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের ঢুয়াটি এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, এ এলাকা এবং পাশের এলাকার রাস্তার পাশে এখনো খেজুর গাছ কাটা হয়। তবে গাছে রস পড়ে কম। তাছাড়া গাছ কেটে রস নামানোর জন্য লোক এখন পাওয়া কষ্টকর। 

আবুল কাশেম মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, এক সময় শীত মৌসুমে তার প্রধান কাজ ছিল খেজুর গাছ কেটে রস নামানো আর গুড় তৈরি করা। এছাড়াও তার বাড়িতে খেজুর রস কিনতে একদিন আগেও বায়না দিয়ে যেত অনেকে। খাঁটি খেজুর গুড়ের ঘ্রাণ থাকত পুরো শীত মৌসুম জুড়ে। এখন আর খেজুর গাছ তেমন নেই। আর যা আছে তাতে রসও পড়ে অল্প। কেউ কাঁচা রসও এখন আর খায় না। 

স্থানীয়রা জানান, খেজুর রসে নিপা ভাইরাস থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় কাঁচা রসের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকেই। তাছাড়া এক হাঁড়ি রস বর্তমানে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়। তাও আগেভাগে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। 

শীত মৌসুমে খেজুর গুড়ের ব্যবসা করেন এমন কয়েকজন তরুণ বলেন, অনলাইনে খেজুর গুড় বিক্রি হয় প্রচুর। তবে অরিজিনাল খেজুর গুড় আনতে হয় নাটোর, যশোর থেকে। শিবচরে পর্যাপ্ত খেজুর গাছ নেই। যা আছে তাতে গুড়ের চাহিদা মেটানো যায় না। এক সময় শিবচর খেঁজুর গুড়ের জন্য সমৃদ্ধ ছিল। দিন যাচ্ছে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। 

উপজেলার নিলখী ইউনিয়নের গাছি খবির শেখ বলেন, ‘শীত মৌসুমের শুরুতেই আমি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। এই রস থেকে বিভিন্ন রকমের পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে, এতে করে একসময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ হারিয়ে যাবে।’ 

খবির শেখ আরও বলেন, এখন আর আগের মতো রস পড়ে না। তাছাড়া বাদুড়ের বেশ উৎপাত। অনেক গাছই এখন আর কাটা হয় না। রস তেমন না পড়ায় আমাদের আগ্রহও কমে গেছে। এক সময় শীত মৌসুমে আমাদের আয়ের পুরোটাই আসত খেজুর গুড় তৈরিতে। এখন সেইটা নাই। তাছাড়া অনেকেই গুড়ে ভেজাল দেয়। বেশি দামে খাঁটি গুড় বিক্রি করতে বেগ পেতে হয়। 

শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, ‘নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন কারণে এ উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে করে খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা কৃষকদের বাড়ির আশেপাশে খেজুর গাছ লাগাতে উৎসাহ দেই।’    

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তেহরান ওপর থেকে সুন্দর, একদিন যেতে চাই: ইরানে বোমা ফেলা ইসরায়েলি পাইলট

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ট্রাম্প

জুলাই অভ্যুত্থান: নিজেদের মামলা তদন্তে ‘বেশি সতর্ক’ পুলিশ

সাইপ্রাসে বিপুল জমি কিনছে ইসরায়েলিরা, দেশ বেদখলের শঙ্কা রাজনীতিবিদদের

অনুকূল পরিবেশে বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে কাজ করতে প্রস্তুত ভারত: রণধীর জয়সওয়াল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত