Ajker Patrika

‘আমাগো লাথি মাইরা দেখছে বাইচ্চা আছি কি না’ 

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ৫৫
‘আমাগো লাথি মাইরা দেখছে বাইচ্চা আছি কি না’ 

‘আমরা যখন কোপ খাইয়া মাটিতে পইড়া আছিলাম, তখন কাউন্সিলর শাহিন কইতাছিলো, সবাই আয়, দেখতো ওরা মরছে নি? এই কথা শুনে হামলাকারীরা আমাগো লাথি মাইরা দেখতাছিলো বাইচ্চা আছি কি না? এরপর গাড়ি নিয়া পালায়া যায়।’ কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অনুগামীদের হামলায় গুরুতর আহত আল আমিন (২৬)।

গত সোমবার রাতে বন্দরের রূপালী আবাসিক এলাকায় পূর্ব বিরোধের জেরে কাউন্সিলরের অনুগামীদের হামলায় নিহত হন ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম জয় (২৭)। একই ঘটনায় ওয়ার্কশপে থাকা জয়ের বন্ধু আল আমিন গুরুতর আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকেই থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বন্দরজুড়ে।

নিহত মেরাজুল ইসলাম ছালেহনগর এলাকার আজহারুল ইসলামের ছেলে এবং আয়মান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক। আহত আল আমিন রুপালি আবাসিক এলাকার জাভেদ মিয়ার ছেলে। আহত অবস্থায় আল আমিন এক ভিডিও বার্তায় হামলাকারীদের নাম প্রকাশ এবং নেপথ্যে কাউন্সিলরের নির্দেশনার কথা প্রকাশ করেছেন, যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রকাশিত ২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে আল আমিনকে বলতে শোনা যায়, ‘ওয়ার্কশপে মেরাজ কাজ করছিল, আমি ওইখানে আড্ডা দিতাছিলাম। হঠাৎ তিনটা গাড়ি দোকানের সামনে আসে। গাড়ি থেকে কাইল্লা রানা, মানিক এসে মেরাজকে ধরে। এরপর কাউন্সিলর শাহিনের ভাইগ্না সৌরভ, পিংকি, চুইল্লা রাজু, অপু আইসা কোপাইতে থাকে আমাগো। কী জন্য মারতাছে জিগাইলে আরও বেশি কইরা কোপাইতাছিলো। ওই সময় কাউন্সিলর গাড়িতে বইসা নির্দেশ দিতাছিলো। কোপানো শেষ হইলে আমাগো লাথি মাইরা দেখছে বাইচ্চা আছি কি না। পরে গাড়ি নিয়া ওরা পলায়া যায়।’

এদিকে নিহত মেরাজুল ইসলাম জয়ের ছোট ভাই সম্রাট দাবি করেন, ‘আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে হামলাকারীদের নাম বইলা গেছে। কাউন্সিলর শাহীন মিয়ার নেতৃত্বে তার ভাইগ্না ও তার লোকজন এই হামলা চালাইসে। কাউন্সিলর শাহীন পুরা সময় গাড়িতে বইসা সবাইরে মারতে নির্দেশ দিছে।’

এর আগে, সোমবার সন্ধ্যায় মেরাজুলের মালিকানাধীন আয়মান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে মেরাজুল ইসলাম ও আল আমিন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ৯টায় মারা যান মেরাজুল। আহত আল আমিন এখনও চিকিৎসাধীন । 

এদিকে প্রকাশিত ভিডিওতে হামলাকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ পেলে মধ্যরাতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে কাউন্সিলর শাহীন ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। পরে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে উত্তেজিত জনতা। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

হামলার পর থেকে অভিযুক্ত কাউন্সিলর শাহীনের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। 

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইতমধ্যে দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছি। তদন্তের স্বার্থে তাদের পরিচয় আপাতত প্রকাশ করছি না। অন্য আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত