Ajker Patrika

‘নতুন শিক্ষাক্রম মুনাফা অর্জনের শ্রমিক তৈরি করবে’

প্রতিনিধি, ঢাবি
Thumbnail image

নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ব্যবসায়িক মুনাফা অর্জনে সক্ষম একদল শ্রমিক তৈরি করবে বলে মনে করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। আজ বৃহস্পতিবার ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসির মুনীর চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২০: কোন পথে শিক্ষাব্যবস্থা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন সংগঠনটির সভাপতি মাসুদ রানা।

মাসুদ রানা বলেন, ‘শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন নিঃসন্দেহে একটি উন্নত প্রক্রিয়া। কিন্তু স্থান-কাল বিবেচনায় না নিলে উন্নত প্রক্রিয়াও সব সময় উন্নত ফল দেয় না। এ জন্য পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক আমাদের নেই। শিক্ষকদের একটা অংশও নানা কারণে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে শিক্ষকেরা ছাত্রদের জোর করে নিজের কাছে পড়া বা কোচিংয়ে পড়তে বলবেন। যারা পড়বে, তারাই বেশি নম্বর পাবে। শুধু তাই নয়, এতে স্বজন পোষণের আশঙ্কাও বেড়ে যাবে। পরপর তিনটি পাবলিক পরীক্ষা ছাত্রদের জন্য হবে চাপের।’

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক কথাসাহিত্যিক রাখাল রাহা, জিগাতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসহাক সরকার, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু, শহীদুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক শামীম জামান প্রমুখ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় এ মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন স্তরের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘এই দেশের সরকার কখনোই আন্দোলন ছাড়া কিছু করেনি। শিশুদের শিক্ষকেরা হবেন মডেল। এ রকম শিক্ষক আমাদের দেশে কতজন আছেন? এ রকম শিক্ষকের ব্যবস্থা না করে এখন ভাবতে পারেন পরীক্ষা থাকবে না? স্কুল এখন শিক্ষকেরা চালায় না, চালায় গভর্নিং বডি। শিক্ষার বাজেট জিডিপির ২ শতাংশ। এটা দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়।’ 

পাঠক্রম পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে কারিগরি শিক্ষাকে মেইনস্ট্রিম করার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার একের পর এক মেগা প্রজেক্ট নিচ্ছে। কিন্তু শিক্ষায় মেগা প্রজেক্ট নেয় না। উচ্চতর গণিত বাদ দেওয়া হলো। বিজ্ঞানের তিনটি বই মিলে একটি বই হলো। এটা বিজ্ঞান শিক্ষাকে সংকুচিত করবে। ভবিষ্যতে যারা বিজ্ঞান পড়তে চাইবে, তারা মারাত্মক সংকটে পড়বে। মূল কথা হলো সবাই সবকিছু পড়বে—এভাবে একটা এভারেজ জাতি তৈরি হবে। কোনো বিজ্ঞানী তৈরি হবে না। বিজ্ঞান না পড়িয়ে ‘জীবন ও জীবিকা’ পড়াবে সবাইকে। অর্থাৎ, শুরু থেকেই বিজ্ঞানী, গবেষক নয়—জীবিকার কথা ভাবানো হচ্ছে। সব মিলে এই রূপরেখা জাতিকে ধ্বংস করার রূপরেখা।’ 

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবে প্রয়োগ অসম্ভব উল্লেখ করে মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘সরকার এটা করছে কেন? সম্প্রতি দেশের শিক্ষার মান নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। র‍্যাঙ্কিং হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে। তাতে সরকার চাপে পড়ে কিছু করে দেখাতে চাইছে। বাহবা নিতে চাইছে সম্ভবত। কিন্তু এর জন্য তারা সময় নিয়েছে মাত্র দু-বছর। এই সময়ে পাঠ্যপুস্তক তৈরি, শিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে এটা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। এ জন্য পর্যাপ্ত বাজেটের প্রয়োজন। শিক্ষাক্রমে এ বিষয়ে কোনো কথা নেই।’ 

শিক্ষক শামীম জামান বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না, অথচ ক্লাস ফোরে উঠেই তাঁকে ছয়টি পরীক্ষা দিতে হবে। এটা অনেক চাপ হবে। আবার বই থাকবে না এটাও ভয়াবহ হবে। পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের কথা আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি। এখন আবার দশম, একাদশ, দ্বাদশ পরপর তিনটি পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের জন্য চাপের হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত