মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
একই গ্রামের হিন্দু ছেলের সঙ্গে মুসলিম মেয়ের বন্ধুত্ব। একপর্যায়ে পালিয়ে বিয়ে। মুসলিম ধর্মাবলম্বী হয়ে অন্য ধর্মের ছেলেকে বিয়ে মেনে নেননি গ্রামের প্রভাবশালী মাতবরেরা। সালিস বসিয়ে সাজা দেওয়া হয় মেয়েকে, সঙ্গে বিয়েতে সাহায্য করার অভিযোগ এনে প্রতিবেশী চারজনকে করা হয় একঘরে। এরই মধ্যে ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেছে, তবুও কাটেনি রেশ। একঘরে রয়েছে ওই চার পরিবার। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবে ওই ছেলে ও মেয়ের পরিবারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেননি মাতবরেরা।
ঘটনাটি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের নওগাঁও গ্রামের। সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই চার পরিবার সমাজের কারও সঙ্গে কথা বললে গুনতে হবে এক হাজার টাকা। এমনকি কারও বাড়ির দাওয়াতে যেতে পারবেন না তাঁরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মিথ্যা অপবাদে দীর্ঘ ১২ বছর একঘরে রাখায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন সামাজিকভাবে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ১২ বছর আগের পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েরা এখন বড় হয়েছে। একঘরে হয়ে থাকায় তাঁদের বিয়ে হচ্ছে না। এ বিষয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জাফর আলী নামের এক ভুক্তভোগী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে নওগাঁও গ্রামের হিন্দুধর্মের এক ছেলের সঙ্গে মুসলিম মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন। ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের গ্রামে ধরে এনে সালিস বসানো হয়। আব্দুর রাজ্জাক, আবু হোসেন, বাবু, শফিক মন্ডল, সাঈদ আলীসহ গ্রামের প্রভাবশালী মাতবরেরা সালিস বসান।
সালিসে মেয়েকে জুতা মারা হয়। তাঁদের সহযোগিতা করার অভিযোগ এনে ওই মেয়ের প্রতিবেশী কৃষক জাফর আলী, তাঁর ভাই সাদেক আলী ও আলম হোসেন এবং সাদেকের চাচা জিলাল উদ্দিনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি সমাজের কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে এক হাজার টাকা জরিমানা, একঘরে থাকা চার পরিবারের বাড়িতে কেউ যেতে পারবেন না এবং তাঁরাও সমাজের কারও বাড়িতে যেতে পারবেন না—সালিসে এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঈদগাহে কোনো অনুদান দিতে পারবেন না বলেও নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়।
এদিকে সালিস ডাকলে ওই হিন্দু ছেলে পালিয়ে যান। এরপর তাঁদের বিয়েও ভেঙে যায়।
একঘরে থাকা জাফর আলীর পঞ্চাশোর্ধ্ব স্ত্রী লিপি বেগম প্রায়ই ঘরের দরজার পাশে ভেজা চোখে বসে থাকেন। লিপি বেগমের পাশের ঘরে থাকা সাদেক আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগমেরও একই অবস্থা। জাহানারা বেগম ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে দেখেন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা মানুষদের।
এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল তাঁদের একঘরে করে রাখায় প্রতিবেশী কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন না তাঁরা। মন চাইলেও যেতে পারেন না প্রতিবেশী কারও বাড়িতে। এ অবস্থায় পরিবারের কারও মৃত্যু হলে কবর কোথায় হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সত্তোরর্ধ্ব নূরজাহানসহ একঘরে থাকা চার পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি নওগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের পশ্চিমে দিকে একটি কাঁচা রাস্তার উত্তর পাশে পাশাপাশি জাফর ও তাঁর দুই ভাইয়ের বাড়ি। সেখান থেকে প্রায় ২০০ গজ পশ্চিমে জাফর আলীর কাকা জিলাল আলীর বাড়ি। বাড়ির নারী সদস্যদের একজন বাড়ির দরজার সামনে বসে আছেন, আরেকজন ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন; আর জিলাল আলীর স্ত্রী বাড়ির সামনে মুদিদোকান করছেন। পুরুষদের কেউ জমিতে কাজ করতে গেছেন। কেউ আছেন এলাকার বাইরে।
এ বিষয়ে একঘরে হয়ে থাকা জিলাল উদ্দিন বলেন, ‘এক যুগ ধরে আমার তিন ভাতিজার পরিবারসহ আমার পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। প্রভাবশালী মোড়লদের নিষেধাজ্ঞার কারণে ১২ বছর আগের ছোট মেয়েরা এখন বড় হলেও এলাকায় রেখে তাদের বিয়ে দিতে না পারা ও নানা সামাজিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
জিলাল উদ্দিন আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘বড় মেয়েকে গ্রামে রেখে বিয়ে দিতে না পারায় মানিকগঞ্জে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে বিয়ে দিয়েছি। আমি গরিব মানুষ অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন ছোট মেয়েটা বড় হয়েছে, সে এখন অনার্সে পড়ছে। তাকে কীভাবে বিয়ে দেব চিন্তায় আছি। আমার ছেলেটা কারও বাড়িতে যেতে পারেন না, কারও সঙ্গে মিশতে পারেন না। আমি স্বাধীন দেশে বসবাস করে স্বাধীনভাবে চলতে পারছি না। স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। আমি সরকারের হস্তক্ষেপ চাই।’
‘গ্রামের সালিস বিচারে মেয়েটিকে দোররা মারার ঘটনা আমি প্রতিবাদ করি। তাই আমাদের একঘরে করে রাখছে গ্রামের মাতবরেরা। গ্রামের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা যেতে পারি না। মসজিদ, মাদ্রাসায় আমরা কিছু (অনুদান) দিতে পারি না। এটা আমাদের জন্য শুধু কষ্টের না, লজ্জারও।’ বলেন, একঘরে থাকা জাফর আলী।
জাফর আলীর স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, ‘কোরবানির ঈদে মাদ্রাসার মাঠে কোরবানির গোশত আনতে গেলে আমাগো পোলাপানরে গোশত দ্যায় না। পোলাপান খালি হাতে ফিরে আসে, এগুলো দেখে আমাগো কষ্ট লাগে।’
‘আমাগো একঘরে রাখায় ইচ্ছে থাকলেও প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলতে পারি না। মন ছুটলে যেতে পারি না নিজের প্রতিবেশীর বাড়িতে। এই অবস্থায় পরিবারের কারও মৃত্যু হলে কবর কোথায় হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’ বলেন, সত্তোরর্ধ্ব নূরজাহান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘জাফর ও তাঁর ভাইয়েরা খেটে খাওয়া মানুষ। গ্রামের কেউ তাঁদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে মাতবরেরা হুঁশিয়ার করে দেন। গ্রামের অনেকেই তাঁদের বাড়িতে যান না, তাঁরাও কারও বাড়িতে আসেন না।’
চার পরিবারেকে একঘরে রাখার কথা স্বীকার করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুর হান্নান হানিফ বলেন, ‘বিষয়টি বেশ কয়েকবার মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ভুক্তভোগী ওই পরিবারের লোকজনদের মাতবরদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ যাননি।’
তবে ওই পরিবারগুলোকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাতবরেরা। এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য ও প্রধান অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চার পরিবারকে একঘরে রাখার কথা সত্য নয়। সমাজের লোকজনের সঙ্গে ওই পরিবারের সদস্য মেলামেশায় কোনো বিধিনিষেধ নেই।’ তবে তাদের ‘আচরণের কারণে’ সমাজের কিছু বিষয়ে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
একঘরে করার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ইউএনও শান্তা রহমান। তিনি বলেন, ‘আগামী গণশুনানিতে ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। অভিযোগের বিষয়টি সত্য হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
একই গ্রামের হিন্দু ছেলের সঙ্গে মুসলিম মেয়ের বন্ধুত্ব। একপর্যায়ে পালিয়ে বিয়ে। মুসলিম ধর্মাবলম্বী হয়ে অন্য ধর্মের ছেলেকে বিয়ে মেনে নেননি গ্রামের প্রভাবশালী মাতবরেরা। সালিস বসিয়ে সাজা দেওয়া হয় মেয়েকে, সঙ্গে বিয়েতে সাহায্য করার অভিযোগ এনে প্রতিবেশী চারজনকে করা হয় একঘরে। এরই মধ্যে ঘটনার এক যুগ পেরিয়ে গেছে, তবুও কাটেনি রেশ। একঘরে রয়েছে ওই চার পরিবার। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবে ওই ছেলে ও মেয়ের পরিবারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেননি মাতবরেরা।
ঘটনাটি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের নওগাঁও গ্রামের। সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই চার পরিবার সমাজের কারও সঙ্গে কথা বললে গুনতে হবে এক হাজার টাকা। এমনকি কারও বাড়ির দাওয়াতে যেতে পারবেন না তাঁরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মিথ্যা অপবাদে দীর্ঘ ১২ বছর একঘরে রাখায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন সামাজিকভাবে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ১২ বছর আগের পরিবারের ছোট ছেলে-মেয়েরা এখন বড় হয়েছে। একঘরে হয়ে থাকায় তাঁদের বিয়ে হচ্ছে না। এ বিষয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জাফর আলী নামের এক ভুক্তভোগী।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে নওগাঁও গ্রামের হিন্দুধর্মের এক ছেলের সঙ্গে মুসলিম মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন। ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের গ্রামে ধরে এনে সালিস বসানো হয়। আব্দুর রাজ্জাক, আবু হোসেন, বাবু, শফিক মন্ডল, সাঈদ আলীসহ গ্রামের প্রভাবশালী মাতবরেরা সালিস বসান।
সালিসে মেয়েকে জুতা মারা হয়। তাঁদের সহযোগিতা করার অভিযোগ এনে ওই মেয়ের প্রতিবেশী কৃষক জাফর আলী, তাঁর ভাই সাদেক আলী ও আলম হোসেন এবং সাদেকের চাচা জিলাল উদ্দিনকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি সমাজের কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে এক হাজার টাকা জরিমানা, একঘরে থাকা চার পরিবারের বাড়িতে কেউ যেতে পারবেন না এবং তাঁরাও সমাজের কারও বাড়িতে যেতে পারবেন না—সালিসে এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা ও ঈদগাহে কোনো অনুদান দিতে পারবেন না বলেও নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়।
এদিকে সালিস ডাকলে ওই হিন্দু ছেলে পালিয়ে যান। এরপর তাঁদের বিয়েও ভেঙে যায়।
একঘরে থাকা জাফর আলীর পঞ্চাশোর্ধ্ব স্ত্রী লিপি বেগম প্রায়ই ঘরের দরজার পাশে ভেজা চোখে বসে থাকেন। লিপি বেগমের পাশের ঘরে থাকা সাদেক আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগমেরও একই অবস্থা। জাহানারা বেগম ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে দেখেন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা মানুষদের।
এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল তাঁদের একঘরে করে রাখায় প্রতিবেশী কারও সঙ্গে কথা বলতে পারেন না তাঁরা। মন চাইলেও যেতে পারেন না প্রতিবেশী কারও বাড়িতে। এ অবস্থায় পরিবারের কারও মৃত্যু হলে কবর কোথায় হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সত্তোরর্ধ্ব নূরজাহানসহ একঘরে থাকা চার পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি নওগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের পশ্চিমে দিকে একটি কাঁচা রাস্তার উত্তর পাশে পাশাপাশি জাফর ও তাঁর দুই ভাইয়ের বাড়ি। সেখান থেকে প্রায় ২০০ গজ পশ্চিমে জাফর আলীর কাকা জিলাল আলীর বাড়ি। বাড়ির নারী সদস্যদের একজন বাড়ির দরজার সামনে বসে আছেন, আরেকজন ঘরের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন; আর জিলাল আলীর স্ত্রী বাড়ির সামনে মুদিদোকান করছেন। পুরুষদের কেউ জমিতে কাজ করতে গেছেন। কেউ আছেন এলাকার বাইরে।
এ বিষয়ে একঘরে হয়ে থাকা জিলাল উদ্দিন বলেন, ‘এক যুগ ধরে আমার তিন ভাতিজার পরিবারসহ আমার পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। প্রভাবশালী মোড়লদের নিষেধাজ্ঞার কারণে ১২ বছর আগের ছোট মেয়েরা এখন বড় হলেও এলাকায় রেখে তাদের বিয়ে দিতে না পারা ও নানা সামাজিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
জিলাল উদ্দিন আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘বড় মেয়েকে গ্রামে রেখে বিয়ে দিতে না পারায় মানিকগঞ্জে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে বিয়ে দিয়েছি। আমি গরিব মানুষ অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন ছোট মেয়েটা বড় হয়েছে, সে এখন অনার্সে পড়ছে। তাকে কীভাবে বিয়ে দেব চিন্তায় আছি। আমার ছেলেটা কারও বাড়িতে যেতে পারেন না, কারও সঙ্গে মিশতে পারেন না। আমি স্বাধীন দেশে বসবাস করে স্বাধীনভাবে চলতে পারছি না। স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। আমি সরকারের হস্তক্ষেপ চাই।’
‘গ্রামের সালিস বিচারে মেয়েটিকে দোররা মারার ঘটনা আমি প্রতিবাদ করি। তাই আমাদের একঘরে করে রাখছে গ্রামের মাতবরেরা। গ্রামের কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমরা যেতে পারি না। মসজিদ, মাদ্রাসায় আমরা কিছু (অনুদান) দিতে পারি না। এটা আমাদের জন্য শুধু কষ্টের না, লজ্জারও।’ বলেন, একঘরে থাকা জাফর আলী।
জাফর আলীর স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, ‘কোরবানির ঈদে মাদ্রাসার মাঠে কোরবানির গোশত আনতে গেলে আমাগো পোলাপানরে গোশত দ্যায় না। পোলাপান খালি হাতে ফিরে আসে, এগুলো দেখে আমাগো কষ্ট লাগে।’
‘আমাগো একঘরে রাখায় ইচ্ছে থাকলেও প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলতে পারি না। মন ছুটলে যেতে পারি না নিজের প্রতিবেশীর বাড়িতে। এই অবস্থায় পরিবারের কারও মৃত্যু হলে কবর কোথায় হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’ বলেন, সত্তোরর্ধ্ব নূরজাহান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রতিবেশী বলেন, ‘জাফর ও তাঁর ভাইয়েরা খেটে খাওয়া মানুষ। গ্রামের কেউ তাঁদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে মাতবরেরা হুঁশিয়ার করে দেন। গ্রামের অনেকেই তাঁদের বাড়িতে যান না, তাঁরাও কারও বাড়িতে আসেন না।’
চার পরিবারেকে একঘরে রাখার কথা স্বীকার করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আব্দুর হান্নান হানিফ বলেন, ‘বিষয়টি বেশ কয়েকবার মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। ভুক্তভোগী ওই পরিবারের লোকজনদের মাতবরদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ যাননি।’
তবে ওই পরিবারগুলোকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাতবরেরা। এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য ও প্রধান অভিযুক্ত আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘চার পরিবারকে একঘরে রাখার কথা সত্য নয়। সমাজের লোকজনের সঙ্গে ওই পরিবারের সদস্য মেলামেশায় কোনো বিধিনিষেধ নেই।’ তবে তাদের ‘আচরণের কারণে’ সমাজের কিছু বিষয়ে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
একঘরে করার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ইউএনও শান্তা রহমান। তিনি বলেন, ‘আগামী গণশুনানিতে ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। অভিযোগের বিষয়টি সত্য হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে উপজেলার গ্রীষ্মকালীন সবজি, আউশ ধানের বীজতলা ও রোপা আউশ ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেউত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান সড়ক রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়ক। এ মহাসড়কের রংপুরের পাগলাপীর থেকে মেডিকেল মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ এখন পথচারী ও যানবাহনের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। হাজারো গর্তে ভরা এই মহাসড়কে প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে। ভোগান্তির শেষ নেই যাত্রী ও চালকদের।
২ ঘণ্টা আগেরাজধানী ঢাকার কোরবানির অস্থায়ী ও স্থায়ী পশুর হাটগুলোতে ক্রেতার অপেক্ষায় ব্যাপারীরা। গরু-ছাগলে হাটগুলো ভরে উঠলেও ক্রেতা কম। তাঁদের মধ্যেও বেশির ভাগ আসছেন দাম যাচাই করতে। ধারণা করা হচ্ছে, আজ বুধবার অফিস শেষে ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হলে হাটে অনেক ক্রেতা আসবেন, মূল বেচাকেনা শুরু হবে।
২ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এই তিন বছরে ডিপো এলাকায় আগের চিত্র ফিরলেও এখন পর্যন্ত থামেনি স্বজন হারানোর কান্না। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে যেনতেন বিচারে যেমন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের মনে স্বস্তি ফেরেনি, তেমনি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার...
২ ঘণ্টা আগে