Ajker Patrika

'বাড়িতে আরও দুটি কবর খুঁড়তে বলেছি'

প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ মে ২০২১, ১৮: ০৬
'বাড়িতে আরও দুটি কবর খুঁড়তে বলেছি'

মাদারীপুর: শিবচর উপজেলার দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বসে কাঁদছিলেন ৩৫ বছর বয়সী আদরি বেগম। স্বজন হারানোর কান্না যেন থামছেই না। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথের স্পিডবোট দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিনি। দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী আরজু মিয়া (৪০) ও দেড় বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন প্রাণ হারিয়েছে।

আদরির বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার মাইগ্রো গ্রামে। স্বামী–সন্তান নিয়ে থাকতেন ঢাকার হাসনাবাদে। গতকাল রোববার রাতে আদরির মা মনোয়ারা বেগম মারা যান। শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখতে স্বামী–সন্তান নিয়ে গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। আজ সোমবার সকাল ৬টার দিকে অন্তত ৩২ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট শিমুলিয়া ঘাট থেকে শিবচরের বাংলাবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সাড়ে ৬টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করা একটি বালুবোঝাই বাল্কহেডে ধাক্কা লাগে স্পিডবোটের। এতে ২৬ যাত্রীর প্রাণ যায়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ীর ইয়াছিন মাদবরকান্দি গ্রামের দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রেখেছেন।

স্থানীয়রা পাঁচ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। আদরির জ্ঞান ফিরলে নিজেকে হাসপাতালে দেখতে পান। সকাল ১০টার দিকে আদরি স্বামী-সন্তানের খোঁজে ছুটে যান নদীর পাড়ে। সেখানে কাউকে না পেয়ে ছুটে আসেন দোতরা স্কুল মাঠে। ততক্ষণে জেনে যান স্বামী ও সন্তান আর নেই। স্কুলমাঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন আদরি। সেখানে একে একে হাজির হন তাঁর দুই চাচা ও ফুফু। তাঁরা লাশের সারি থেকে আদরির স্বামী ও সন্তানকে শনাক্ত করেন।

আদরির চাচা মোতা‌লেব মিয়া বলেন, মায়ের লাশ দেখতে যাচ্ছিল মেয়েটি। এখন স্বামী-সন্তানের লাশ নিয়ে তাকে ফিরতে হচ্ছে। আমরা কী বলে সান্ত্বনা দেব তাঁকে। বাড়িতে একটি কবর খুঁড়ে রেখে এসেছি। ফোনে আরও দুটি কবর প্রস্তুত করতে বলেছি। আল্লাহ কেন আমাদের পরিবারের সঙ্গে এমন করল!

কাঁদতে কাঁদতে আদরি বলেন, লকডাউনের কারণে ঢাকায় আটকা পড়েছিলাম। মায়ের মৃত্যর খবর পেয়ে বিচলিত হয়ে গ্রামে ফিরছিলাম। দেড় বছরের সন্তান ইয়ামিন আমার কোলে ছিল। স্পিডবোট বেপরোয়া গতিতে চলছিল। আমি এক হাতে ছেলে ও আরেক হাতে স্বামীকে জাপটে ধরে ছিলাম। হঠাৎ সজোরে ধাক্কা। সবাই ছিটকে পড়ি। আমি জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গে নদীর পাড়ে ফিরি। ততক্ষণে স্বামী-সন্তানের মৃত্যুর খবর পাই।

এই দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে আরও যাদের পরিচয় মিলেছে তারা হলেন– পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পশারিবিনিয়া গ্রামের জনি অধিকারী, কুমিল্লার দাউদকান্দির আওসার ও রুহুল আমীনের। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন।

জেলা প্রশাসক বলেন, ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

অপারেশন রেড ওয়েডিং ও নার্নিয়া: ইরানের সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যায় ইসরায়েলি অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত