Ajker Patrika

‘ক্ষমতায় টিকে থাকতেই বিচারবহির্ভূত হত্যা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০: ০৫
‘ক্ষমতায় টিকে থাকতেই বিচারবহির্ভূত হত্যা’

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনো রাষ্ট্রের জন্যই কাম্য নয়। কিন্তু যারা এইসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, সরকার তাদের পুরস্কৃত করেছে। এ থেকে সন্দেহ আসা স্বাভাবিক যে সরকার নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এসব কাজ করিয়েছে। তবে বিদেশি রাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হলেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বন্ধ করা সম্ভব।

আজ বুধবার ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড: বেহাল গণতন্ত্র, প্রশ্নবিদ্ধ আইনের শাসন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ ওয়েবিনারের আয়োজক ছিল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।

সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে গণ-অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, র‍্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা কমলেও এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ক্ষমতাসীন দল বিচারবহির্ভূত হত্যাকে ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের দাবি করে তিনি আরও বলেন, সরকারের যেখানে উচিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলোর যথাযথ তদন্ত করা। সেখানে সরকার সেটি না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাঁরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের পুরস্কৃত করছে।

দেশে গত তিন বছরে ৫৯০টির মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে দাবি করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মহাসচিব মো. নূর খান বলেন, সিনহার পরিবার সঠিক বিচার পেয়েছে, কারণ এতে তাঁর পেশাগত সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া ছিল। প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। 

তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়গুলো উদ্ঘাটন করেই ক্ষান্ত হওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে আমাদের সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। এ জন্য আইনপ্রণেতাদের সংসদে আওয়াজ তুলতে হবে।’

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কারও কাম্য নয়, তারপরও ঘটনাগুলো ঘটছে, যা নিন্দনীয়, অগ্রহণযোগ্য। আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এভাবে পৃথিবীর অনেক দেশেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমালোচনা প্রসঙ্গে সাবেক এই নৌমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীদের দমন করার জন্য পুলিশ-র‍্যাব অনেক সময় অনেক কিছুই করেছে। জনগণের শান্তির জন্য সন্ত্রাসীদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য প্রয়োজন হয়। কারণ, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ সাক্ষ্য দিতে চায় না। ফলে তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। তবে হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক নাকি অরাজনৈতিক—সেটা বিবেচনায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন শাজাহান খান।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের সমালোচনা করে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কমিউনিকেশন সেলের প্রধান সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। সরকারের এই অপকীর্তির দায়ভার বহন করতে হচ্ছে পুরো রাষ্ট্রকে। আসলে মূল সমস্যা আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘মানবাধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান বাংলাদেশ ও মার্কিন সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এসব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবস্থা নিয়ে ভাবিয়ে তুলছে।’

ওয়েবিনারে সভাপতির বক্তব্যে সিজিএসের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এ জন্য প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই দায়ী। বিএনপি অপারেশন ‘ক্লিন হার্ট’ দিয়ে যেটা শুরু করেছিল, আওয়ামী লীগ সেটার সমালোচনা করলেও ক্ষমতায় আসার পর এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। র‍্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত