Ajker Patrika

আগের দাপটে আসামি, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২: ৪৭
মোখলেসুর রহমান সুমন
মোখলেসুর রহমান সুমন

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে গেলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত মোখলেসুর রহমান সুমন (৩৬)। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ নিজ এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।

সুমন ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের তাড়াইল গ্রামের হাজি ইরফান উদ্দিনের ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপকমিটির সম্পাদক। তাঁর বড় ভাই মোতালেব মাতুব্বর ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এই সুমন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় একটি মামলার আসামি। এ ছাড়া অস্ত্র, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইমরান তালুকদার (৩২) ও শাওন ব্যাপারী (২০) নামের দুই যুবককে নিজের মালিকানাধীন ফিলিং স্টেশনে নিয়ে পায়ের রগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার মামলার প্রধান আসামি তিনি।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহর ক্ষমতার বলয়ে নিজ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন এই সুমন। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল তাঁর নেশায় পরিণত হয়। এই সময়ে তিনি ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে একটি ফিলিং স্টেশন এবং দুটি ইটভাটা গড়ে তোলেন। এই ফিলিং স্টেশনের দোতলা ভবনে বসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন তিনি। সরকারের পতন হলে ভাই মোতালেব মাতুব্বরসহ আত্মগোপনে চলে যান সুমন। তবে সম্প্রতি এলাকায় ফিরে প্রকাশ্যে এসেছেন তিনি। অসহায় ব্যক্তিদের মারধর, হুমকিধমকিসহ জোর-জবরদস্তি করে জায়গা দখল তাঁর নিয়মিত কর্মকাণ্ড হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি তাঁর বাহিনীকে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়াও দিয়েছেন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি আজকের পত্রিকাকে তাঁর এলাকায় ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ১৩ এপ্রিল নয়ন হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির ১ কোটি টাকা সমমূল্যের জমি ৯ লাখ টাকায় নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয়দের বাধায় পিছু হটেন তিনি। জোরপূর্বক জমি কিনে টাকা না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

জানা যায়, তাড়াইল ইউনিয়নে দুটি ইটভাটা রয়েছে সুমনের। সম্প্রতি স্থানীয় কামরুল মোল্যা নামের এক ইট-বালু ব্যবসায়ী পঞ্চাশ লাখ টাকার ইট ক্রয়ের চুক্তি করেন তাঁর সঙ্গে এবং চুক্তি অনুযায়ী টাকা তুলে দেন সুমনের হাতে। কিছু ইট দেওয়ার পর এখন আর দেওয়া হচ্ছে না বলে এই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন।

কামরুল মোল্যা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইট দেওয়ার নামে আমার পঞ্চাশ লাখ নিয়ে নেন, কিন্তু কিছু ইট দেওয়ার পর এখন কোনো ইট দিচ্ছেন না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, তাঁর ভয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর আজিমনগর ইউনিয়নসহ ভাঙ্গায় কেউ মুখ খুলতে পারত না। এ সময় ভাঙ্গার প্রায় অর্ধশত মানুষের জমি দখল করে নিয়েছেন তিনি। তাঁরা বলেন, এই সুমন আবারও এলাকায় ফিরে এসে ফের পুরোনো কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছেন। ভাঙ্গা উপজেলার জনগণ ও জনপদ এই সুমনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তাঁর খালাতো ভাই পার্শ্ববর্তী শিবচর উপজেলার সাবেক চিফ হুইপ লিটন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহচর ফরহাদ চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে নিজ মালিকানাধীন ইটভাটায় বসেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন।

বিষয়টি চলতি মাসের উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ সময় প্রশাসন তাঁকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে সুমনের ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশফাক হোসেন বলেন, সুমনের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বর্তমানে সে পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত