Ajker Patrika

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের অর্ধেকের বেশি এখনো বেকার: সমীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের অর্ধেকের বেশি এখনো বেকার: সমীক্ষা

সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে বেকারত্বের হার হ্রাস পেলেও বর্তমানে ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মহীন রয়েছেন। এদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ গত ৫ থেকে ৮ বছর ধরে কর্মহীন আর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মহীন রয়েছেন গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনা: ট্র্যাজেডি থেকে ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক এক বহু পাক্ষিক আলোচনায় সমীক্ষায় পাওয়া এই ফল উপস্থাপন করা হয়। একশনএইড বাংলাদেশের পক্ষে ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল বিজনেস (আইএসবি) সমীক্ষাটি পরিচালনা করে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য দেওয়া হয়। 

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত ২০০ জন পোশাক শ্রমিক এবং মৃত পোশাক শ্রমিকদের পরিবারের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে ছিলেন ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ নারী এবং ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ। সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে বেঁচে থাকাদের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত শারীরিক স্বাস্থ্যের অবস্থা, মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা এবং আর্থিক অবস্থাসহ বেশ কয়েকটি মূল বিষয় তুলে ধরা হয়।

সমীক্ষায় পাওয়া তথ্যমতে, তাঁদের বেকারত্বের পেছনে মূল কারণ হলো তাদের শারীরিক অবস্থা। তবে এই হার গত বছরে ছিল ৬৭ শতাংশ যা বর্তমানে কমে ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ২১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, যে তাঁরা কোনো উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না। এই ফলাফল থেকে দেখা যায় যে শারীরিক স্বাস্থ্য জীবিত অনেক শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সমীক্ষার ফলাফলে আরও বলা হয়, রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। সম্পূর্ণরূপে   স্থিতিশীল বলে দাবি করা জীবিতদের হার ২০১৪ সালে ছিল ১৭ শতাংশ যা ২০২৩ সালে এসে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। এ বছর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে যা ২০১৪ সালে ছিল ৯ শতাংশ।

উত্তরদাতাদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ৩৬.৮ শতাংশ উল্লেখ করেছেন যে তারা পিঠের ব্যথায় ভুগছেন, এক চতুর্থাংশ ২৪.৬ শতাংশ মাথা ব্যথার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, হাত ও পায়ে আঘাত, দাঁড়াতে ও সঠিকভাবে হাঁটতে না পারা, দৃষ্টিশক্তি ও কিডনির সমস্যা ইত্যাদি।

মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ২৯ শতাংশের মধ্যে ৫৭.৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন তাদের মধ্যে ভবন ধসে পড়ার ভয় কাজ করে। ২৮.৯ শতাংশ তাদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

সমীক্ষার ফলাফলে আরও বলা হয়, বেঁচে যাওয়াদের পরিবারের আয়ের পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। জীবিতদের অর্ধেকের মাসিক পারিবারিক আয় (৪৬.৫ শতাংশ) ১০,০০১-১৫,০০০ টাকা, ১৯.৫ শতাংশের মাসিক পারিবারিক আয় ১৫,০০১-২০,০০০ টাকা এবং ১১ শতাংশের প্রতি মাসে আয় ২০,০০০ টাকার বেশি।

উত্তরদাতাদের বেশির ভাগের পরিবারের আয় তাদের পারিবারিক খরচ মেটাতে অপর্যাপ্ত। প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা জানিয়েছেন (৪৭ শতাংশ) তাদের মাসিক ব্যয় প্রায় ১৫০০০ টাকা এবং তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি ব্যয়ের মতো অপ্রত্যাশিত ব্যয়ের জন্য কোনো সঞ্চয় নেই। 

উত্তরদাতাদের প্রায় ১৯.৯ শতাংশ বলেছেন যে তাদের কারখানায় অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের অভাব রয়েছে, ২৩.৪ শতাংশ বলেছেন যে তাদের কারখানায় জরুরি অগ্নি নির্গমন ব্যবস্থা নেই। ২০.৯ শতাংশ উত্তরদাতা উল্লেখ করেছেন যে তাদের কারখানায় কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র নেই, এবং ২৩.৯ শতাংশ জানিয়েছেন সেখানে কোনো ডাক্তার বা নার্স নেই।

অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অবস্থা জানতে প্রতি বারের মতো এবারও আমরা সমীক্ষা পরিচালনা করেছি। উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন আসলেও তাদের অনেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে ভুগছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তারা এগিয়ে যাওয়ার জন্য তেমন অর্থনৈতিক সুযোগ খুঁজে পায়নি। রানা প্লাজা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বিকল্প জীবিকা খুঁজতে সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।’

আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেন বলেন, ‘এটি স্বীকার করতেই হয় যে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাক শিল্পে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই রূপান্তরটি অন্যান্য শিল্পের জন্য একটি মডেল হিসাবে কাজ করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার একটি সংস্কৃতি তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া উচিত যেখানে শ্রমিকেরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে এবং মালিকপক্ষ সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। পরিশেষে সব শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নীতি ও প্রবিধান বাস্তবায়ন করা সরকারের দায়িত্ব।’ 

আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এর যুগ্ম মহাপরিদর্শক জুলিয়া জেসমিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট–এর সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার–এর সাধারণ সম্পাদক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান; ডয়চে ভেলের সাংবাদিক হারুন উর রশীদ। অনুষ্ঠানে রানা প্লাজার দুর্ঘটনা তুলে ধরে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীও হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত