Ajker Patrika

‘পুলিশের ভয়ে’ ডোবায় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় হুকুমের আসামি কাউন্সিলর!

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
‘পুলিশের ভয়ে’ ডোবায় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় হুকুমের আসামি কাউন্সিলর!

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের বাগবাড়ি এলাকায় ‘পুলিশের ধাওয়া খেয়ে’ ডোবায় ঝাঁপ দিয়ে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের উপপরিদর্শককে প্রত্যাহারও করা হয়েছে। কিন্তু মামলায় স্থানীয় কাউন্সিলরকে হুকুমের আসামি করে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যদিও ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে দায়ী করে বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রওশন ফেরদৌসের ফাঁসি দাবি করে স্লোগান দিয়েছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার নিহত নিলয়ের মা লিলি বেগম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন— সাবেক সাংসদ আবুল কালামের ছেলে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা (৩৮), আমিনুল (৫৫), হাসিনা বেগম (৪৫), শিপলু (৩২), আফজাল (২২), জিপু (২৬), শহিদুল ইসলাম (৫০), সিরাজুল (৪৫), হাসান (২৬) সোবহান (৩৫)। তাঁরা সবাই নবীগঞ্জ বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে হাসিনা বেগম ও সোবাহানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কাউসার বিএনপির রাজনীতি করেন বলে জানা গেছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিলয় আহমেদ বাবুর বিরুদ্ধে হাসিনা বেগম পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। অভিযোগ তদন্তের জন্য বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক রওশন ফেরদৌস বাবুর বাড়িতে যান। তদন্তের পর স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা বিষয়টি মীমাংসার দায়িত্ব নেন। এরপর তিনি বাবুকে তাঁর অফিসে আসার জন্য ডাকেন। কিন্তু বাবু কাউন্সিলরের অফিসে যাননি।’

‘এ কারণে কাউন্সিলর ক্ষিপ্ত হয়ে আমিনুল, হাসিনা বেগম ও শিপলুর মাধ্যমে তাঁকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। কাউন্সিলরের নির্দেশে আসামিরা গত ৩০ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় বাবুর বাসায় যান। এ সময় বাবু তাঁদের দেখে পালানোর চেষ্টা করলে বাসার পেছনের ডোবায় পড়ে যান। তখন আসামিরা তাঁকে উদ্দেশ করে ইট-পাটকেল ছোড়েন। এতে তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে সংজ্ঞা হারান। ঘটনার পর আসামিরা প্রচার করতে থাকেন, বাবু ডোবা থেকে উঠে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু এরপর থেকে বাবুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ৪ মে সকালে ডোবায় গন্ধ পেয়ে সেখানে বাবুর মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা।’ 

গত ৪ মে দুপুরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাবুর মরদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে বাবুর স্বজনসহ স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সেসময় স্থানীয়রা ‘এসআই রওশন ফেরদৌসের ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা তদন্ত করে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে সবাই শান্ত হন। সেদিন বিকেলেই উপপরিদর্শক রওশন ফেরদৌসকে প্রত্যাহার করা হয়। 

মরদেহ উদ্ধারকালে বাবুর ভাই ইমন, মা লিলি বেগমসহ আত্মীয় স্বজন সবাই উপপরিদর্শক রওশনকে কর্মকর্তাকে দায়ী করেন। সেসময় তাঁরা বলেন, ‘ঘটনার রাতে এসআই ফেরদৌস বাবুকে ধাওয়া দিয়ে ডোবায় ফেলে দেন। ধরতে না পেরে ওপর থেকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারেন।’ এখন মামলায় ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম দেওয়া হয়নি।

এজাহারে উপপরিদর্শকের নাম না রাখার ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় মামলার বাদী বাবুর মা লিলি বেগমের সঙ্গে। তবে ফোন রিসিভ করেন বাবুর মামী পপি বেগম। তিনি বলেন, ‘বাবুর মা এই মুহূর্তে কথা বলার অবস্থায় নেই। আমরা মামলায় তার নাম উল্লেখ করিনি কারণ, আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি পুলিশের কোনো দোষ নেই। ঘটনার দিন অন্য আসামিরা বাসায় আসছিল। এর আগে, ওই এসআই কয়েকবার বাসায় আসায় আমরা ভুল বুঝে তাঁকেই দায়ী করেছিলাম।’ 

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হাসিনা বেগম মূলত উপপরিদর্শক রওশন ফেরদৌসের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছিলেন। একটি চুরি সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়েই বিষয়টি এতদূর গড়িয়েছে। লিখিত অভিযোগ ছাড়া তদন্ত করতে যাওয়া, থানাকে অবগত না করে যাওয়াসহ বেশ কিছু শৃঙ্খলাজনিত বিষয়ও এখানে উঠে এসেছে।

মামলার বিষয়ে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডোবায় ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলরকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আটককৃত দুজনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছি। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। উপপরিদর্শক রওশন ফেরদৌসকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁর বিষয়টি তদন্তাধীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত