Ajker Patrika

ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল

‘বাক্সবন্দী’ জেনারেটর, রোগীরা নাজেহাল

  • ২০০৭ সালে সিএমএসডি থেকে আসে জেনারেটরটি
  • ৫ লাখ টাকার যন্ত্রটি চালু করা হয়নি এক দিনের জন্যও
  • বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় রোগীদের
সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ১০: ৪৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে একটি জেনারেটর ১৮ বছর ধরে বাক্সবন্দী অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ২০০৭ সালে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকে আসা ৬০ কেভিএ ক্ষমতার ওই জেনারেটরটি ২০২৫ সালেও একই জায়গায় পড়ে আছে। স্টোররুমের কোণে, একটি কাঠের বাক্সে বন্দী। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা রোগীদের। সরকারি বরাদ্দে কেনা ৫ লাখ টাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র। কিন্তু ১৮ বছর ধরে সেটিতে শুধু ধুলা জমছে। চালু হয়নি এক দিনের জন্যও। হাসপাতালের কেউ জানেন না, যন্ত্রটি আদৌ চালু হলে কাজ করবে কি না—কারণ কখনো চালুর চেষ্টাও করা হয়নি।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, ২০০৭ সালে জেনারেটরটি পাওয়ার পর একবারও কোনো প্রকৌশলী বা টেকনিশিয়ান এসে সেটি ইনস্টল করেননি। বিষয়টি কয়েকবার জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে; কিন্তু কাজ হয়নি।

হাসপাতালের স্টোরকিপার মাহবুবুর রহমান জানান, ‘২০২০-২৩ এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জানানো হয়েছে, জেনারেটরটি এখনো বাক্সবন্দী। কিন্তু আজও কেউ আসেননি। এত দিনে তো যন্ত্রটায় মরিচা পড়ে যাওয়ার কথা।’

একজন কর্মকর্তা তিক্ত হাসি হেসে বলেন, ‘মেশিনটা চালু হলে কী হতো, কে জানে? হয়তো একদম ঠিকই থাকত; কিন্তু আমরা জানার সুযোগই পেলাম না।’

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার সময় একটি নতুন জেনারেটর সরবরাহ করা হয়। তবে ওই জেনারেটরটি ২৫০ জন রোগীর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম হলেও, বাস্তবে হাসপাতালে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ রোগী ভর্তি থাকে। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে অল্পসংখ্যক ওয়ার্ডে সামান্য কিছু বৈদ্যুতিক পাখা চললেও অধিকাংশ রোগীকে গরমে কষ্ট পেতে হয়। বিষয়টি কয়েকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়ে আরও একটি জেনারেটরের আবেদন করা হয়েছে; কিন্তু আজও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ না থাকলে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যায়। জেনারেটর থাকলেও কার্যকর না থাকায় প্রচণ্ড গরমে রোগীদের কষ্ট সহ্য করতে হয় প্রতিদিন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর এলাকার ভর্তি হওয়া রোগী গৃহবধূ রওশন আরা বলেন, ‘পাখা চলে না, গরমে বাচ্চা নিয়ে থাকতে খুব কষ্ট হয়। রাতে ঘুমানোই যায় না। আমরা তো জানি, হাসপাতালের আলাদা বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা থাকে; কিন্তু এখানে তো সেগুলো নেই।’

রফিকুল ইসলাম নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমি নিজে হাতপাখা দিয়ে ভাইকে বাতাস দিচ্ছি। এখন তো গরম এমন, মনে হয় এসি ছাড়া আর কোথাও থাকা যায় না। অথচ এ হাসপাতালে তো সে জেনারেটরটা এক যুগ ধরে ঘুমাচ্ছে।’

আরেকজন রাণীশংকৈলের আমিনুল ইসলাম, যিনি অপারেশনের জন্য সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি। বলেন, ‘আমি গতকাল অপারেশন করাইছি। বিদ্যুৎ চলে গেলে সারা রাত ঘেমে গেছি। মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল।’

চিকিৎসা কর্মকর্তা রাকিবুল আলম চয়ন বলেন, ‘জেনারেটরের জন্য আমরা কয়েকবার চাহিদাপত্র দিয়েছি। হাসপাতাল যেহেতু ২৫০ শয্যায় উন্নীত, তাই বড় জেনারেটর দরকার। বাক্সবন্দী যেটা আছে, সেটাও ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি; কিন্তু তা চালু করা সম্ভব হয়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে সমস্যা শুধু এই একটি যন্ত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। অস্ত্রোপচার কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অচল যন্ত্রপাতির তালিকা। এর মধ্যে রয়েছে ২টি অটোক্লেভ, ১টি ডায়াথার্মি মেশিন, ৬টি অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ৬টি সাকার, ৪টি অপারেশন ইন্সট্রুমেন্ট ট্রলি ও ২টি অপারেশন লাইট। এসব যন্ত্র ২০১৯ সাল থেকে বিকল। কয়েকটি সহজেই মেরামতযোগ্য; কিন্তু সেগুলোও পড়ে রয়েছে অচল অবস্থায়। চিঠি গেছে, রিপোর্ট গেছে; কিন্তু সাড়া আসেনি।

সার্জারি বিভাগের প্রধান কনসালট্যান্ট শিহাব মাহমুদ

শাহরিয়ার বলেন, ‘যেসব যন্ত্র দিয়ে অস্ত্রোপচার চালাচ্ছি, তার বেশি রভাগই ২০-২৫ বছরের পুরোনো। কোনোটা আলো দেয় না, কোনোটা গরম হয় না। তারপরও প্রতিদিন ৮-১০টি অপারেশন করতে হচ্ছে এক ধরনের ঝুঁকি নিয়ে।’

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘গাইনি, সার্জারি, ইএনটি—সব মিলিয়ে মাসে ২০০-২৫০টি অপারেশন হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলে রোগীরা আরও নিরাপদ, আর চিকিৎসকেরা আরও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে পারতেন।’

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, ‘বাক্সবন্দী জেনারেটর ও অচল যন্ত্রপাতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা সম্প্রতি আবারও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এবার অন্তত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশনের ঘেরে ডাকাতি, আহত ৪

পাচারের অর্থে দুবাইয়ে মেয়ের ৪৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট—অভিযোগ নিয়ে যা বললেন গভর্নর

সুধা সদন এখন কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবীর আখড়া

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের শতকোটি টাকার সম্পত্তি জব্দ

দোকান দখলে যুবদল-কৃষক দল নেতা, আ.লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে ১৬ মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত