Ajker Patrika

৩৫ নম্বর বাড়িটিতে চলত নেশার আড্ডা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২২, ১৬: ০১
Thumbnail image

রাজধানীর উত্তরা-পশ্চিম থানার ১৩ নম্বর সেক্টরের গরিবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউ এলাকার ৩৫ নম্বর বাড়ি। দিনের আলো নিভে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করত শত শত ছেলে-মেয়ে। হিন্দি গান আর ডিজে পার্টির তালে তালে মেতে থাকত মদের নেশায়। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, বাড়িতে প্রতিদিন অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই অভিযোগ দেন।

সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ম্যানেজারসহ ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বাড়িটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের ৫০০ বোতল মদ ও ৬ হাজার ক্যান বিয়ার।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরা বিভাগ।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বাড়িটির সপ্তম তলায় গিয়ে দেখেন তরুণ-তরুণীদের হুড়োহুড়ি। বাড়িটির বিভিন্ন ফ্লোরে বিদেশি মদ ও বিয়ার মজুতের প্রমাণ পান গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। 

বিপুল পরিমাণ মদের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে কথিত এই বারের কর্মকর্তারা কোনো সঠিক তথ্য জানাতে ব্যর্থ হন।  

হারুন অর রশীদ জানান, কথিত ‘কিং ফিশার’ বারে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিসহ বার মালিক মুক্তার হোসেনসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় তাঁদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে। 

ভবনটিতে এই কার্যক্রম কী ব্যানারে চলত প্রশ্ন করা হলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘কিং ফিশার’ রেস্টুরেন্ট নামের এই ভবনে এসব কার্যক্রম চলত। 

কথিত এই বারের মালিক মুক্তার হোসেন নামে এক ব্যক্তি। মুক্তারের নারায়ণগঞ্জ, উত্তরা, মিরপুরে বেশ কয়েকটি বার রয়েছে। 

মুক্তার হোসেনের কাছে বারের কয়টি লাইসেন্স জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘আমরা গতকাল যেই ভবনটিতে অভিযান চালিয়েছি, সেখানের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ম্যানেজার আমাদের বলেছেন মুক্তার মিরপুর, গুলশান ও নারায়ণগঞ্জসহ পাঁচটি বার চালান। সেগুলো একই লাইসেন্সের কি না, সেটা আমরা জানি না। তবে গতকাল আমরা উত্তরার যে ভবনটিতে অভিযান পরিচালনা করেছি, সেখানে কিং ফিশার রেস্টুরেন্টের নামে এসব কার্যক্রম চলত। 

ম্যানেজারের বরাত দিয়ে গোয়েন্দাপ্রধান আরও জানান, মুক্তার ২০০৮ সালের দিকে বারিধারায় বেবিলিয়ন নামে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতেন। লেকভিউ নামে গুলশান-২-এ একটি রেস্টুরেন্ট ছিল, সেখানেও তিনি কাজ করতেন ওয়েটার হিসেবে। বারের ওয়েটার থেকে এখন শতকোটি টাকার মালিক মুক্তার। রাজধানীসহ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বাড়ি-গাড়ি। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও সন্তান বসবাস করে। তবে মুক্তারের অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ। 

মামলায় প্রতিষ্ঠানটির কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, মালিক ও ম্যানেজারসহ অনেককে মামলায় আসামি করা হয়েছে। 

এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক কোরিয়ান নাগরিক জড়িত কি না—এ বিষয়ে গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’ 

উত্তরার কথিত বারটিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের যাতায়াত ছিল। তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে প্রশ্ন করা হলে গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ‘কাদের যাতায়াত ছিল সে বিষয়ে আমরা তদন্ত করব। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত