Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন দৃষ্টিনন্দন আবাসিক চত্বর

শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন দৃষ্টিনন্দন আবাসিক চত্বর

দেশের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রচারিত হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনাও কম হয়নি। এ সবের বিপরীতে কিশোরগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অনন্য নজির স্থাপন করেছে। 

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল আমাটি শিবপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্প দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোন বিনোদন কেন্দ্র। কাছে গেলে বোঝা যাবে এটি দৃষ্টিনন্দন আবাসিক চত্বর। 

এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে জীবনযাপনের সকল সুবিধাসহ হতদরিদ্র গৃহহীন ২২টি পরিবারের জন্য রয়েছে একটি করে পাকা ঘর। আশ্রয়ণ প্রকল্পটির সামনেই রয়েছে গোলঘর। শিশুদের জন্য মিনি বিনোদন পার্ক, পাশেই কৃত্রিম লেক, পাকা ঘাট। রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং এলপি গ্যাসে রান্নার সুবিধা। আঙিনায় লাগানো হয়েছে নানা জাতের বনজ-ফলদ গাছের চারা। পুরো আশ্রয়ণ প্রকল্পটির চতুর্দিকে দেওয়া হয়েছে গাইড ওয়াল। 

এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে একটি ঘর পেয়েছেন ফাতেমা বেগম। তিনি পেশায় দিন মজুর। ফাতেমা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'আমি মহিলা হয়েও দিনমজুরি করে পেট চালাই। জায়গা জমি নাই, মানুষের বাড়িতে ঝুপড়ি ঘরে সাধ্যমতো ভাড়ায় থেকেছি। আমি কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি এমন পাকা ঘর আমার নিজের হবে। এ কথা বলে শাড়ির আঁচল মুখে গুঁজে কেঁদে ফেলেন এ নারী। তবে, এ যে হঠাৎ পাওয়ার খুশিতে কান্না। 

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল আমাটি শিবপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পফাতেমা বেগমের মতো এ আবাসন প্রকল্পে আরেকটি ঘর পেয়েছেন হতদরিদ্র কমলা আক্তার। নতুন পাকা ঘরে উঠেছেন তিনি। সুন্দর পরিবেশ দেখে আবেগাপ্লুত তিনিও। গ্যাসের চুলায় রান্না, লেকের পাকা ঘাট, সুন্দর পরিবেশ। সব মিলিয়ে এটা তাদের স্বপ্নের ঠিকানা, এমনটি বললেন তিনি। 

এ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২ পরিবারের বয়স্ক নারী-পুরুষ সকলেই মোনাজাতের ভঙ্গিতে ওপরে দুহাত তুলে বারবার একটি কথা বললেন, 'শেখের বেটিরে আল্লায় বাঁচায়া রাহুক।' 

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন আল-মাসুদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করলে ভালো কিছু করা যায়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ এ প্রকল্পটি। ঐ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং আমিসহ দায়িত্ব প্রাপ্ত সকলেই সমন্বয় করে এ প্রকল্পের কাজ করেছি। এতে কাজের মান ভাল হয়েছে। পাশাপাশি সময়ও কম লেগেছে। মোটকথা এখানে আমরা দায়সারা গোছের কোনো প্রকল্প করতে চাইনি। সবাই মিলে সুপরিকল্পিতভাবে এর নকশা করা হয়েছে। এখানে যারা থাকবে তাঁরা যাতে একটি সুন্দর পরিবেশ পায় এ কথা ভেবেছি, বাজেটের দিকে তাকাইনি। উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকেও এখানে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।' 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'এ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সন্তানদের চিত্তবিনোদনসহ নানা বিষয় চিন্তা ভাবনা করে একটি সম্পূর্ণ আবাসিক চত্বর বানানোর চেষ্টা করেছি আমরা। এটি হতে পারে সারা দেশের জন্য অনুকরণীয়। এ ২২টি পরিবারের মানুষগুলোর জীবনমান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিয়েও কাজ করছি। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, ঋণসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।' আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জ জেলায় মোট ১ হাজার ২৪৭টি ঘরের মধ্যে বেশির ভাগ ঘরের কাজ এখন শেষের পথে বলেও তিনি জানান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত