Ajker Patrika

সাবেক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সাবেক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

সাভারের আশুলিয়ায় এক সাবেক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, ওই সাবেক জনপ্রতিনিধি নিজেই দোকান ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। আশুলিয়ার জিরাব এলাকার জিরাব মৌজার ৬ শতাংশ জমি নিয়ে এ অভিযোগ উঠেছে। 

আজ শনিবার দুপুরে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন আ. মোতালেব নামের এক ব্যবসায়ী। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জিরাব-তৈয়বপুর সড়কের পাশে একটি টিনশেড নির্মাণাধীন মার্কেটের খুঁটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে করে পুরো টিনশেডটি জমিতে পড়ে রয়েছে এবং পাশেই চারটি আধপাকা দোকানের পেছন থেকে দেয়াল ভেঙে মালামাল লুট করা হয়েছে। 

ব্যবসায়ী মোতালেব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলেন, ‘আমি নিজে ২০০৫ সালে আশুলিয়ার জিরাব এলাকায় ৬ শতাংশ জমি কিনি। কিন্তু সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ আলী অবৈধভাবে জমি নিজের বলে দাবি করছেন। মোহাম্মদ আলীর আপন ভাইয়েরাও এ বিষয়ে জানেন। আমি এর আগে এসপি অফিস বরাবর অভিযোগ জানিয়েছিলাম। সেই প্রেক্ষিতে পুলিশ একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী আমিই জমির মূল মালিক। সেই জমিতে নিজেই ঘর তুলে সেখানে নিজেই ভাঙচুর করে আমাদের ওপর দায় চাপিয়ে জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে মোহাম্মদ আলী।’ 

স্থানীয় বর্তমান ওয়ার্ড সদস্য আবুল হোসেন বলেন, ‘সাবেক মেম্বার মোহাম্মদ আলী আমার ভাই। আমাদের পাশেই পৈতৃক সম্পত্তি আছে। কিন্তু এই ৬ শতাংশের ব্যাপারে তো কোনো দিন শুনিনি। কেন মোহাম্মদ আলী এমন করছে তাও আমি জানি না। স্থানীয়রা সবাই বিষয়টি জানে। আমি চাই তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’ 

এ ব্যাপারে সাবেক মেম্বারের আরেক ভাই জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমার আব্বা এখানে শোয়া ৮৫ শতাংশ জমি কিনেছিলেন। আমার বোনদের তাদের অংশ বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমরা ৪ ভাই বাকি অংশের ভাগ করে নিয়েছি। যেই জমি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেই জমি আমরা কখনো ভোগ দখল করি নাই। আমাদের জমির মধ্যেই আমরা আছি। এর আগে জমি নিয়ে যে সমস্যা ছিল সেখানে ২২ গ্রামের মানুষ উপস্থিত হয়ে মীমাংসা করে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ৬ শতাংশ জমির মালিক মোতালেব। সেই জমি মোহাম্মদ আলী দাবি করে এ বিষয় নিয়ে গ্যাঞ্জাম সৃষ্টি করতেছে। সে হয়তো নিজেই ভাঙচুর করে আমাদের নাম বলছে। এটা একটি ষড়যন্ত্র। যার জায়গা আমরা ১৬ জন মানুষ সাক্ষী থেকে তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার বাবা এই জমি বিক্রি করেছিল। সেই জমির মালিক এখন মোতালেব। আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে মোহাম্মদ আলী। আমি এর ন্যায় বিচার চাই। ওর কাগজপত্র যদি ঠিক থাকে আমরা জমি ছেড়ে দিব। কিন্তু যদি তা না হয় ও যেন ওই জমিতে যেতে না পারে আমরা সেই সিদ্ধান্ত চাই। মোহাম্মদ আলী দুর্নীতিগ্রস্ত লোক। ও যা বলে ওর আপন দুই ভাই ঠিক তার উল্টো বলে। তাদের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন।’ 

এ বিষয়ে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার মার্কেটের দোকান ও নির্মাণাধীন টিনশেড ভাঙচুর করেছে মোতালেব, খোরশেদ ও তাদের সহযোগীরা। আমার আপন ভাই জিল্লুর টাকা খেয়ে তাদের পক্ষে কাজ করছে। এ ব্যাপারে থানায় গত সপ্তাহেই আমরা বসেছিলাম মীমাংসার জন্য। থানায় আমাদের দুই পক্ষেরই কাগজ রেখেছে। থানা থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত করে জানাবে। কিন্তু তদন্ত চলাকালীনই আমার মার্কেটে রাতের আঁধারে ভাঙচুর চালিয়েছে। এই জমি আমার, জমির কাগজ পত্রও সব বৈধ। আমি থানায় অভিযোগ করব। আমার মার্কেটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে তারা।’ 

 চারটি আধপাকা দোকানের পেছনের দেয়াল ভাঙা হয়েছে২০২২ সালে আশুলিয়া থানা-পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মোহাম্মদ আলী ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৬ শতাংশ জমি নিজের বলে দাবি করে জোরপূর্বক দখল করেন। এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি মালিকানার কাগজ দেখাতে পারেননি। আ. মোতালেব ক্রয়সূত্রে ওই জমির মালিক এবং খাজনাদি পরিশোধ করে ভোগ দখল করে আসছিলেন। ২০০৫ সালের ৩০ আগস্ট তিনি জমি কেনেন যার দলিল নম্বর-২০০৩৪। ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশ সুপার বরাবর এই প্রতিবেদন দাখিল করেন আশুলিয়া থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইকবাল হোসেন। 

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই জমির মালিকানা নিয়ে ঝামেলা চলছে। আমরা দুই পক্ষের কথা শুনেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তবে দোকানপাট ভাঙচুরের ব্যাপারে শুনেছি। আমাদের টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আসলে কে এই কাজ করেছে আমরা খুঁজে বের করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত