Ajker Patrika

৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন সাংবাদিক দম্পতি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি ও কুলিয়ারচর সংবাদদাতা
সাংবাদিক দম্পতি মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার। ফাইল ছবি
সাংবাদিক দম্পতি মুহাম্মদ কাইসার হামিদ ও মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার। ফাইল ছবি

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করেছেন সাংবাদিক দম্পতি মুহাম্মদ কাইসার হামিদ (৫১) ও মুছাম্মৎ রোকেয়া আক্তার (৪৪)। চলতি বছর দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দুজনেই জিপিএ ৪.১১ পেয়েছেন।

সাংবাদিকতা পেশায় দীর্ঘদিন যুক্ত থাকলেও মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরোনো নিয়ে তাঁদের মনে দীর্ঘদিন আফসোস ছিল। এবার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যবসায়ের জোরে তাঁরা সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন।

এই দম্পতির শিক্ষাজীবন নতুনভাবে শুরু হয় নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে। সেখান থেকেই তাঁরা কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ কেন্দ্রের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেন।

কাইসার হামিদের বাড়ি কুলিয়ারচরের গোবরিয়া গ্রামে। রোকেয়া আক্তার কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের মেয়ে। তাঁদের বিয়ে হয় ১৯৯৪ সালের ১৬ মার্চ। তাঁদের পাঁচ সন্তান। বড় মেয়ে মাস্টার্স পাস করেছেন, মেজো মেয়ে অনার্স শেষ বর্ষে, ছোট মেয়ে নার্সিংয়ে পড়ছেন, এবং দুই ছেলে যথাক্রমে নবম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

একটি জাতীয় দৈনিকের কুলিয়ারচর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন কাইসার হামিদ এবং তাঁর স্ত্রী রোকেয়া আক্তার স্থানীয় একটি পত্রিকায় একই উপজেলার প্রতিনিধি।

কাইসার হামিদ বলেন, ‘বিয়ে হয়েছে ৩০ বছর। বিয়ের আগেই সাংবাদিকতা শুরু করি। অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন—এসএসসি না পাস করে সাংবাদিকতা করি কীভাবে! সমাজ থেকে অনেক কিছু পেলেও পড়াশোনার অভাবটা নিয়ে কষ্ট ছিল। সাবেক ইউএনও সাদিয়া ইসলাম লুনা ম্যাডামের উৎসাহ আর ছোট ভাই আবদুল খালেকের সহযোগিতায় পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। সেই কষ্ট প্রায় তিন যুগ বয়ে বেড়িয়েছি। বুঝেছি, সেই কষ্ট দূর করার একমাত্র উপায় পরীক্ষায় বসা ও পাস করা।’

দ্বিতীয় সন্তান জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘মা-বাবার পাস করা আমাদের ভাইবোনদের জন্য অনেক আনন্দের বিষয়।’

লক্ষ্মীপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম হায়দার বলেন, ‘সংসার সামলেও এই বয়সে এসএসসি পাস করে তাঁরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা তাঁদের সাফল্যে গর্বিত।’

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা বলেন, ‘শিক্ষা কখনো থেমে থাকে না। বয়স নয়, মনোবলই আসল। তাঁদের দেখে অনেকেই নতুন করে পড়াশোনায় আগ্রহী হবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত