Ajker Patrika

‘অসততায়’ রুগ্ণ দশা ৭৬ সততা স্টোরের

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, টাঙ্গাইল
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ১০: ৩১
Thumbnail image

কতিপয় শিক্ষার্থীর ‘অসততার’ কারণে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত ৭৬টি ‘সততা স্টোরের’ রুগ্‌ণ অবস্থা। সরকারি-বেসরকারি, গ্রাম-শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই চিত্র। ফলে সততা, নিষ্ঠাবোধ এবং দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টির এই আয়োজন ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সততার বীজ বপনের এই উদ্যোগকে আরও গতিশীল করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। 

শিক্ষা বিভাগ ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে তরুণ প্রজন্মের মাঝে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি এবং দুর্নীতিবিরোধী গণসচেতনতা গড়ে তুলতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সততা স্টোর’ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২২ মে পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিটি উপজেলায় একটি বালক ও একটি বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ বিক্রির জন্য বিক্রেতাহীন ‘সততা স্টোর’ স্থাপনের প্রজ্ঞাপন জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। দুদকের অর্থায়নে পরিচালিত এই উদ্যোগ ২০১৮-১৯ সালে আরও সম্প্রসারিত হয়। নিজস্ব অর্থায়নেও ‘সততা স্টোর’ স্থাপন করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে টাঙ্গাইলের ৭৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সততা স্টোর রয়েছে। স্টোর পরিচালনের জন্য দুই দফায় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে দুদক। ওই অর্থ দিয়ে খাতা, কলম, পেনসিল, রাবার, রং পেনসিল, স্কেল, জ্যামিতি বক্স, চিপস, বিস্কুটসহ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে স্টোর সাজানো হয়। বিক্রেতাহীন এই দোকানে প্রতিটি পণ্যের গায়ে দাম লিখে শোকেসে সাজিয়ে রাখা হয়। ওই শোকেসের পাশে রাখা তালাবদ্ধ বাক্সে পণ্যের মূল্য জমা রেখে পণ্য সংগ্রহের বিধান রাখা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সততার বীজ বপন হয়। ঘটা করে চালু হওয়া সততা স্টোর কিছুদিন পরই মুখ থুবড়ে পড়েছে।

স্টোরে পণ্য নেই এবং ক্যাশ বাক্সেও টাকার পরিমাণ কম দেখা যায়। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বলছে, কতিপয় অসাধু শিক্ষার্থীর কারণে এমন হাল সততা স্টোরের। বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে টাকা ভরে কয়েক দফা চালানোর পর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই যখন সততা স্টোরে অসততার ছাপ স্পষ্ট হয়, তখনই করোনার ধাক্কায় সততা স্টোরগুলো বন্ধ হয়ে যায়। 

কয়েকটি উপজেলা ঘুরে জানা যায়, মধুপুর শহীদ স্মৃতি মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়, ভাইঘাট উচ্চবিদ্যালয়, ঘাটাইল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, চাপড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ কক্ষসংকট দেখিয়ে সততা স্টোর বন্ধ করেছে। টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে সততা স্টোর দ্বিতীয় দফায় চালু হলেও দুই দিন পর বন্ধ হয়ে গেছে। মধুপুরের রাণী ভবানী সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ে কতিপয় শিক্ষার্থীর কারণে অর্থ ও পণ্যসংকট দেখা দিয়েছে সততা স্টোরে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এখনো সকালে অনেক শিক্ষার্থী না খেয়ে আসে। তাদের কেউ কেউ টাকা না দিয়েই ক্ষুধা মেটাতে শুকনো খাবার নিয়ে খায়। আমি জানার পর তাদের আর কী করতে পারি? অনেকে খাতা-কলম-পেনসিল নেয়, টাকা দেয় না। এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য। তাই বিনা মূল্যে এই উপকরণ দেওয়াটাই মঙ্গলের।’ 

বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, ‘এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখলেও বর্তমান পরিবেশের কারণে এটি সফলতার মুখ দেখছে না। আমাদের এই উদ্যোগ সফল করতে চাইলে সবার আগে জাতীয় পর্যায়ে সততা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ 

শিক্ষার্থীরা জানায়, অনেকে টাকা দিলেও কেউ কেউ টাকা ছাড়াই শিক্ষা উপকরণ নিয়ে যায়। তাই সততা স্টোরের দুর্বল অবস্থা। এ বিষয়ে দুদকের অনু সংগঠন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি টাঙ্গাইলের সাধারণ সম্পাদক ও মাহমুদুল হাসান আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান তরুণ ইউসুফ বলেন, সততা স্টোর বর্তমানে অনেক স্থানেই সচল নেই। দুদক থেকে পরিদর্শন করে সচল করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত