Ajker Patrika

মোবাইল প্রতারণার জাল বিস্তৃত সারা দেশে, টাকা যেত ফরিদপুরের ডোমাইনে

ফরিদপুর প্রতিনিধি
মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা ও অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত পাঁচজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা ও অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত পাঁচজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা ও অর্থ পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আজ সোমবার ভোররাতে মধুখালী উপজেলার ডোমাইন বাজার থেকে তাঁদের আটক করা হয়।

দুপুরে সেনাবাহিনীর ফরিদপুর ক্যাম্প এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছে। পাঁচজন হলেন ওই এলাকার মো. কামরুল মিয়া (৪০) এবং তাঁর চার সহযোগী অমরেশ বিশ্বাস (৩০), সোহান মালিক (২৪), হাফিজুর রহমান (৪২) ও শেখ শাকিল আহমেদ (২৬)। তাঁদের কাছ থেকে ১০৬ পিস ইয়াবা, ৪২টি সিমকার্ড ও ১০টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তাঁরা ফরিদপুরসহ রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ দেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগে প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

সেনাবাহিনী বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানায়, প্রতারক চক্রটি গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট, পিন ও ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড)-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাকাউন্ট থেকে অবৈধভাবে অর্থ সরিয়ে নিচ্ছিল। এমন অভিযোগগুলো বিশদভাবে পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরগুলো গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে চিহ্নিত করে দেখা যায়, প্রতারিত অর্থের উৎস দেশের বিভিন্ন জেলা হলেও এর চূড়ান্ত গন্তব্য মূলত ডোমাইন ইউনিয়নের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কেন্দ্রীভূত।

সেনাবাহিনী জানায়, ১৫ রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে তিন দিনব্যাপী এই চক্রের প্রযুক্তিগত ব্যবহার, ভৌগোলিক অবস্থান ও আর্থিক লেনদেন পদ্ধতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা হয়। তথ্য বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে যে, প্রতারিত অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশে সক্রিয় শতাধিক অনলাইন জুয়া ও বেটিং সাইটে প্রবেশ করানো হতো। এই চক্র বিশেষ সফটওয়্যার ও স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ‘শতভাগ জয়’ নিশ্চিত করে জুয়ার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত। এরপর ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে সংগৃহীত অর্থের একটি বড় অংশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাচার করা হতো।

আটক ব্যক্তিদের বরাতে সেনাবাহিনী আরও জানায়, তারা দেশব্যাপী বিকাশের ভুয়া কল সেন্টার সেজে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতারণা করত। পরে সেই অবৈধ অর্থের ৫০ শতাংশ বিদেশে পাচার করত ও অন্য ৫০ শতাংশ নিজেরা ভাগাভাগি করে নিত। নতুন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু রাখার জন্য তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় অবৈধ সিম সরবরাহকারী গ্রুপ থেকে বিকাশ ও নগদের পূর্বনিবন্ধিত মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করত বলে জানা যায়।

সেনাবাহিনী জানায়, আটক ব্যক্তিদের মধুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, সাইবার অপরাধ দমন আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা নিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তবে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সাইবার অপরাধ দমন আইনে মামলা নেওয়া হয়নি বলে ওসি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত