Ajker Patrika

শীতলক্ষ্যার নাব্য সংকট, বিলুপ্ত হচ্ছে দাঁড় টানা নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

শীতলক্ষ্যার পাঁচ নাম্বার ঘাটে চল্লিশ বছর ধরে দাঁড় টানা নৌকা চালান সেলিম মাঝি। এই নৌকা চালনাই তাঁর তিন পুরুষের পেশা। তিনি বলেন, 'পানির গভীরতা কমে যাওয়াতে লঞ্চগুলো এখন অনেক বড় ঢেউ তৈরি করে যে কারণে নৌকা নিয়ে নদী পার হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দাঁড় টানা নৌকার জায়গা দখল করে নিচ্ছে মোটরচালিত নৌকা।' 
 
সরেজমিন দেখা যায়, অর্ধশতাধিক নালা, ড্রেন ও খাল দিয়ে আসা শিল্প বর্জ্য, পয়োনিষ্কাশন বর্জ্য সরাসরি এসে পড়ছে শীতলক্ষ্যায়। বেসরকারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিরীক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ওয়েস্ট কনসার্নের তথ্য অনুযায়ী, শীতলক্ষ্যায় মিশে যাওয়া এ বর্জ্যের পরিমান বার্ষিক তিন লাখ ৬৫ হাজার টন। প্রতি বছর এই বর্জ্য নদীতে মিশে নাব্য সংকট তৈরি করলেও ব্যবস্থা নেওয়ার যেন কেউ নেই। 
 
সেলিম মাঝির ভাষ্য অনুযায়ী, একসময় এই নদীর গভীরতা ছিল একশ হাতের বেশি। যা এখন পঞ্চাশ হাতের নিচে নেমে এসেছে। এ কারণে যারা দাঁড় টানা নৌকা চালাতো তাঁরা ধীরে ধীরে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। তিনি জানান, পাঁচ বছর আগেও এই ঘাটে একশর বেশি দাঁড় টানা নৌকা ছিল। যা এখন ১০-১২ তে এসে ঠেকেছে। আরও কয়েকজন মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাদের এই নৌকা ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই শুধুমাত্র তাঁরাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করে যাচ্ছেন। 
 
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য) মো. ফাহিমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'দাঁড় টানা নৌকার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে কিছু যৌথ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শীতলক্ষ্যায় দাঁড় টানা নৌকার বিলুপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নদী তীরবর্তী শিল্প কারখানা এবং সিটি করপোরেশন যদি সচেতন না হয় তাহলে এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন।' 
 
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপক আলমগীর হিরণ বলেন, 'সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নিজস্ব ল্যান্ড ফিল্ড থাকলেও নদীর আশপাশে থাকা কারখানা এবং মানুষেরা দূষণ বাড়াচ্ছে।' 
 
পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপপরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, শীতলক্ষ্যার শুধু নারায়ণগঞ্জ অংশে তরল বর্জ্য নির্গমনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩১৮টি। প্রতিদিন এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অপরিশোধিত ১৫ কোটি লিটার শিল্প বর্জ্য বিভিন্ন খাল-বিল দিয়ে এসে শীতলক্ষ্যায় পড়ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানেই পরিশোধন প্রকল্প ইটিপি প্ল্যান্ট রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ না বাড়াতে ইটিপি প্ল্যান্ট চালানো হয় না বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে।'       

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত