Ajker Patrika

পাংশায় শিক্ষকের ভুলে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হলো না রিপনের

পাংশা (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৪: ২৯
Thumbnail image

রাজবাড়ীর পাংশায় ফরম পূরণ না হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারেনি রিপন শেখ নামের এক শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষককে রেজিস্ট্রেশনের টাকা দেওয়ার পরেও তিনি ভুলে যান। ফলে প্রবেশপত্র না পাওয়ার অভিযোগ এনে সে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। 

পাংশার মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা খামারপাড়া গ্রামের দিনমজুর অলিল শেখের ছেলে রিপন শেখ। সে মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির মানবিক শাখার ছাত্র। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য এই বিদ্যালয় থেকে প্রাক্‌নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হয়। পরে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা জমা দেন রিপনের মা শিল্পী খাতুন। 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে রিপন শেখকে বিদায় জানান শিক্ষকেরা। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়। তবে মেলেনি রিপনেরটা। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম পিল্টু রিপনকে জানান, তার অ্যাডমিট কার্ড হয়নি। 

শিক্ষার্থী রিপন শেখ বলে, ‘পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়েছে। বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য ৫০০ টাকা ও অ্যাডমিট কার্ড নেওয়ার জন্য ৩০০ টাকা দিয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয় থেকে বিদায়ও নিয়েছি। পরীক্ষার আগের দিন অ্যাডমিট কার্ড আনতে গেলে জানানো হয় কার্ড হয়নি।’ 

রিপনের মা শিল্পী খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। আমি পরের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে খেয়ে না-খেয়ে সংসার চালাই। রিপনের ফরম পূরণের জন্য ৩ হাজার টাকা দাবি করেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কুদ্দুস। আমি প্রতিবেশীর কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ধার করে নিয়ে প্রধান শিক্ষককে দিই। তবু আমার ছেলে পরীক্ষা দিতে পারল না! পরীক্ষা না দিতে পেরে আমার ছেলে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।’ 

শিল্পী খাতুন জানান, এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুসের বিচার দাবি করে ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছেন। 

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম পিন্টু বলেন, ‘দুই মাস হলো আমি এই স্কুলে যোগদান করেছি। যোগদানের আগেই ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ হয়েছে। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি শুনেছি, রিপনের ফরম পূরণের জন্য তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকা জমা দিয়েছিল তার পরিবার।’ 

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে এই বিদ্যালয় থেকে অবসরজনিত কারণে বিদায় নিয়েছি। বিদায় নেওয়ার আগেই ২০২৪ সালের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ সম্পন্ন হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর মা আমার কাছে টাকা দিয়েছিল মনে হয়। শিক্ষার্থী নিজে আমার কাছে টাকা দিলে ফরম পূরণের বিষয়টি মনে থাকত। রিপনের ফরম পূরণের বিষয়ে আমার মিসটেক হয়ে গেছে।’ 

ইউএনও মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত